ভুল করেননি, ক্রাইম করেছেন – কক্সবাজার জেলা জজকে হাইকোর্ট

Picsart_23-07-20_16-34-09-918.png

ভুল করেননি, ক্রাইম করেছেন – কক্সবাজার জেলা জজকে হাইকোর্ট

বিশেষ প্রতিবেদকঃ আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে আসামিদের জামিন দেওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আপনি ভুল করেননি। জেনেবুঝে আপনি ক্রাইম করেছেন।’

আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই২০২৩) বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

আদালতে জেলা জজের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ও অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল। অপর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন।

শুনানিকালে জেলা জজের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতকে বলেন, আমরা বিষয়টি কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত।
 
এ সময় আদালত জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডেকে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন জেলা জজ বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। তিনি আদালতকে বলেন, ভুলে এটা হয়েছে। আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে বুঝে ক্রাইম করেছেন।

জেলা জজের আইনজীবীরা আবারও ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাইছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনও অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়।
 
পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন নির্ধারণের আদেশ দেন।

এর আগে গত ২১ জুন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেন হাইকোর্ট।

সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে আসামিদের জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কক্সবাজারের জেলা জজ। তবে আদালতে দাখিল করা তার লিখিত ব্যাখ্যা যথাযথ না হওয়ায় ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট।

আরও সংবাদ পড়ুন।

‘বকশিশ দেওয়া-নেওয়া দুর্নীতি বলে গণ্য হবে’- হাইকোর্ট

আদালতে আবেদন কারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। 

ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, জমি দখল নিয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।

এ মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে হাইকোর্ট ১১ এপ্রিল তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়ে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের সেই আদেশ মোতাবেক গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিন চান। আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু একই দিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তখন জেলা ও দায়রা জজ তাদের জামিন দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন রিনা। তার এই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জেলা ও দায়রা জজকে তলব করে আদেশ দেন।

আইনজীবী বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফ নামাসহ আবেদন করেন। এ ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। আসামির হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়—আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি একমুহূর্তও হাজতে ছিলেন না।

শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসতে বলেন আদালত।

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুর্নীতি প্রমাণিত হলে এক মিনিটও অপেক্ষা করবো না – প্রধান বিচারপতি

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিচার বিভাগ দুর্বল হলে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী বলা যাবে না – প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

আরও সংবাদ পড়ুন।

ন্যায় বিচার নিশ্চিতে বিচার বিভাগকে তৎপর হতে পরামর্শ রাষ্ট্রপতি’র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top