বিএনপি – হিতাহিত জ্ঞানশূন্যদের থামাবে কে?
টানা ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দলটির অগনিত নেতাকর্মী মামলা, হামলা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবারের কাছে অনেকে প্রায় অপাংতেয়, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে ঘরে ঘুমাতে পারেন না হাজারো নেতা-কর্মী। লাখো জাতীয়তাবাদী সৈনিক হয় জেলে, না হয় আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে জীবন-যৌবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পার করে দিচ্ছেন। কেবল আদর্শের প্রশ্নে নিরাপস থাকায় বেকারত্ব আর সীমাহীন অভাব-অনটনে সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে এখন ক্লান্ত । যাদের টুকটাক ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়েছে অনেক আগেই। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়ার খবরও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে।
শুধু দলীয় নেতাকর্মী কেন, এ দলটির আদর্শ লালনকারী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরাও জেল, জুলুম, নিপীড়ন, বঞ্চনা, লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বর্ণনাতীত কষ্টের জীবন যাপন করছেন দেড় যুগ ধরে। অনেকে নির্বাসিত জীবনে।
এ যখন সামগ্রিক চিত্র, তখন দলটির কতিপয় নেতার আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা রীতিমতো চোখ ধাধানো। কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারিতে কিংবা অঙ্গ ইউনিয়নের বড়ো পদে, অথবা পেশাজীবি সংগঠনের পদ বাগিয়ে নিতে পেরেছেন- এমন গুটিকতক নেতার ভোগবিলাস, ঘন ঘন গাড়ির মডেল পাল্টানো, বিজনেস ক্লাসে বিদেশ ভ্রমণ, রাজধানীর অভিজাত পাড়ায় বিলাসী জীবন, ২-৫ কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটে বসবাস, নিয়মিত নানা পার্টিতে মোজ-মাস্তি চোখে পড়ছে হরহামেশা।
কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে – নানা ছুতায় দেশ-বিদেশের দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে মোটাদাগে চাঁদাবাজির কথা। দলের বড়ো কোন কর্মসূচি ঘোষিত হলেই তাদের পোয়াবারো। ব্যক্তিগত ব্যাংক-ব্যালেন্স হয় হৃষ্টপুষ্ট। কমিটি বাণিজ্যতো বাসি খবর।
দলীয় গঠনতন্ত্র শুধরে এক ব্যক্তি এক পদ নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে ঘটছে ভিন্ন। ৩/৪টি পদ ব্যাবহার করে দলের বা দায়িত্বভূক্ত কমিউনিটির জন্যে কিছু করতে না পারলেও নিজের আখের গোছানোতে যোগ্যতার কমতি নেই তাদের। ধরা যাক, বিশেষ কোন কমিউনিটি নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব পেয়েছেন ক’জন। তাদের কাজ হওয়ার কথা ওই কমিউনিটির কল্যাণে। কোন ভেদাভেদ, অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য থাকলে তা নিরসনে উদ্যোগী হওয়া, সকলকে সঙ্গে নিয়ে দল ও জাতীয় স্বার্থে ভূমিকা পালনে উৎসাহ দেয়া। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যে ব্যর্থতার পাশাপাশি বিভেদ, বিদ্বেষ উস্কে দিয়ে নতুন নতুন দেয়াল তৈরি করাই যেন তাদের কর্তব্য। ব্যক্তিগত ইগো, প্রতিহিংসা, পছন্দ-অপছন্দ, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের কর্মকাণ্ডে। উপেক্ষিত হচ্ছে দলীয় বা জাতীয় স্বার্থ। অনৈতিক খায়েশ মেটাতে আক্রোশ চরিতার্থ করা হচ্ছে, দল ও আদর্শিক ভিত সুদৃঢ় করার পরিবর্তে ব্যক্তিগত বলয় সৃষ্টির নোংরা খেলায় মেতে উঠছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের দিক হলো তাদের বেপরোয়া আচার-আচরণ। ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন এদের কেউ কেউ। ভাবটা এমন, ক্ষমতার গাড়ি বারান্দায় পৌঁছে গেছেন তারা। আর কয়েক পা এগুলেই গদি। পদ পদবী বন্টন করে নিজে নিচ্ছেন, অনুগত অপদার্থ তেলবাজদেরও দিচ্ছেন। চেয়ারে বসে কাকে কি দেবেন সেই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি যেমন ছড়াচ্ছেন, তেমনি অপছন্দের লোকদের কিভাবে শায়েস্তা করবেন, পথে নামাবেন সে রকম হুংকারও দিচ্ছেন। বিলাতী হট-কানেকশনের আষাঢ়ে গল্প গেলাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এসব দেখে রীতিমতো ভিরমি খেতে হচ্ছে বোদ্ধাদের।
অনেকে বলছেন- ক্ষমতার ঘ্রাণ পেতে শুরু করেছে বিএনপি। এ ঘ্রাণে অনেকে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। এটা ঠিক যে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থনপুষ্ট দল বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়েছে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে, অপশক্তির জোরে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ দলটি ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রশ্নাতীত। কিন্তু মজলুম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও নির্বাসিত তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের অপরিমেয় ত্যাগ-তিতিক্ষা; কোটি কোটি কর্মী সমর্থকের রক্ত, শ্রম, ঘামে হিমালয়সম প্রতিকূলতায় টিকে আছে বিএনপি। অথচ দলের পদ-পদবী পুঁজি করে গুটি কতক সুবিধাবাদী, স্বার্থান্ধ, উচ্চাভিলাসী, মুনাফেক চরিত্রের ব্যক্তির খেয়াল-খুশি সত্যিকারের ত্যাগীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। হতাশায় ডোবাচ্ছে।
এম আবদুল্লাহ
সিনিয়র সাংবাদিক।
সভাপতি বিএফইউজে-বাংলাদেশ।