অন্ধ – শাহানা সিরাজী

Picsart_23-03-28_22-45-44-624.jpg

অন্ধ – শাহানা সিরাজী

আব্বা চলো,দেরী অইয়া গেছে।
আইজ উডতে ইচ্ছা অইতেছে না বাজান।শইলড়া ভাল্লাগে না।
রান্না ঘর থেকে জয়নব এক চিৎকার দিলো, উডবানা মানে কী? ভিক্ষায় না গেলে খামু কী?

সিদ্দিক মিয়া হুহু করে কেঁদে উডলো। আল্লাহয় আমারে অন্ধ বানাইছে। কাজ কইরতা হারি না, হোলাগুলা তো দুইডা ভাত দিতে হারে!
বড় ছেলের বউ মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো, ওরে আমার জমিদার রে! ভিক্ষা কইরত্তো হাইত্তো ন, হেতাগোরে বইয়ায়ই বইয়ায়ই খাওয়াই তো অইবো! নিজের চলে না আবার আন্ধারে খাওয়ামু! হু! ও জসীম,দুয়ার দে, মায় কামে যাই।
সিদ্দিকের ছোট মেয়ে মেরি। স্কুলে যায়। সবাই তারে ভিক্ষুকের মাইয়া বলে। ছোট সময়ে কেউ যদি জানতে চাইতো,তোর বাবা কী করে রে? সে হাসতে হাসতে বলতো,হিরা করে( ভিক্ষা)। আব্বায় টেকা,চাইল,ডাইল সব হিরা করে। আব্বা আন্ধা অইলেও আমারে পেট ভইরা খাইতে দেয়। এখন এসব কথা সে বলে না। সে কারো সামনে পড়তে চায় না। স্কুলেও নিয়মিত যেতে মন চায় না। তার শরম করে। হেডমাস্টার বলছেন, তুমি লেখা পড়া শিখে বড় হও তখন আর ভিক্ষা করবে না। মেরি এখন বড় হয়েছে। প্রাইমারির পার্ট চুকিয়ে হাইস্কুলে গেছে তার শরম লাগে। কিন্তু কে খাওয়াবে? ভায়েরা তো খোঁজ রাখে না। ভায়ের বউগুলো মারাত্মক দজ্জাল। ভাই লুকিয়ে কিছু দিতে গেলেও ধরা পড়ে যায়, সংসারে অশান্তি করে। তাই ভাইদের সামনেও সে পড়তে চায় না। আজকাল সে বাপেরে নিয়ে জায়গায় জায়গায় যায়। বাপকে ভিক্ষার জন্য বাসে গাড়িতে তুলে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করে। কত টাকা পেলো গুণে গুণে নেয়। এ টাকা থেকেও ভাগ বসাতে আসে ভায়ের ছেলে মেয়েরা। মেরি একটা বুদ্ধি বের করলো, সে প্রতিদিন কিছু কিছু টাকা সরিয়ে রাখে। তার মায়ের কাপড় ছিঁড়ে তছনছ হয়ে আছে। মাথায় দিলে মাথা বেরিয়ে যায়, পরতে গেলে আরো ছিঁড়ে যায়। সে দিকেও তার ভ্রুক্ষেপ নেই। বাপকে নিয়ে যখন বিভিন্ন জায়গায় যায় তখন দেখে ভাগ্য বদলের জন্য কত মেয়েরা কতো কিছু করছে। সেদিন বাপকে নিয়ে ফেরার পথে ছোট দুটো মুরগীর বাচ্চা নিয়ে এলো। বলা যায় চুরিই। তার ইচ্ছা ছিলো না চুরি করার তবুও করলো। কারণ দুটো বাচ্চা পথের উপর একা একা ডাকাডাকি করছে। কোথাও কেউ নেই। মা মুরগীটা নেই। সে এদিক ওদিক খুঁজে অবশেষে নিয়েই এলো। মেরির সব দু:খ যেন এ দুটো বাচ্চা অবসান ঘটিয়ে দেবে তাই মনে হলো। বাপকে সাথে নিয়ে যায় সাথে বাচ্চাগুলোও তার সাথী। সে এখন বাপকে ভিক্ষা করতে দিয়ে পাশের দোকানে চা বানানোর কাজ নিয়েছে। দোকানের বেঁচে যাওয়া খাবারে তার মুরগী দুটো বড় হচ্ছে। স্কুল বাদ। কিন্তু রাতে বই পত্র নিয়ে পড়ে।

দেখতে দেখতে দুমাস হলো মুরগীর বাচ্চার বয়স। দুটোই ডেগী মুরগী। মেরি ভীষণ খুশি। বাপের ভিক্ষার টাকা চুরি, দোকানের আয় দুটো মিলে হাজার দুয়েক টাকা তার জমেছে। রাতে মেরির ঘুম আসে না। এতো টাকা তার কাছে অথচ বাপকে এখনো ভিক্ষায় নিয়ে যেতে হয়। তার উঠতি বয়সের সৌন্দর্যে দোকানদার মুগ্ধ। তাকে নতুন জামা কিনে দিয়েছে। তাই নিয়ে ভায়ের বউরা নানান কথা শোনায়। সে কর্ণপাত করে না। কিন্তু দোকানদারের ইশারা সে বোঝে। তাই স্থির করলো,ভিক্ষার জায়গা বদলাতে হবে। কিন্তু যাবেই বা কোথায়!

সে আরো দুরের স্টেশনে নিয়ে যায়। বাপ রাস্তার পাশে বসে হাত পাতে সে পাশেই টেইলারের দোকানে অপেক্ষা করে, চোখ বড় বড় করে দেখে কী ভাবে মাস্টার কাটিং করছে। কয়েক দিন যেতেই বুকে আশা জাগে সেও যদি সেলাই পারতো। টেইলারের দোকানে সেলাইয়ের ছোট ছোট কাজগুলো সে করতে শুরু করলো। দু সপ্তাহে সে অনেকটা ছটফটে হয়ে গেলো। দোকানদার দয়াপরবশ হয়ে তাকে একটা মেশিনে বসতে দিলো। মেরির আনন্দ যেন আর ধরে না। সে দিন আসতে আসতে বাপকে বলে, আব্বা তোমার আর বেশিদিন ভিক্ষা করা লাগবে না। বাপ হাসে। কী কস! খামু কোন্তুন?
মেরি হাসে আর বলে আব্বা, আমি সেলাই শিখেছি। দোকানদার কাকু আমারে চার হাজার টাকা বেতন দেবে বলছে। আমার সেলাই নাকি সুন্দর। আমার মুরগীদুটোর সাথে ত্রিশটি বাচ্চা আছে। তুমি দেখো আমি পারবো….

সিদ্দিক হাসে,জীবন গেলো হিরা কইরতে কইরতে! তোর ভাইগুলো নাফরমান। অন্ধ বাপের কথা ভাবলো না। তোর কথা বজুর কথা তোর মায়ের কথা ভাবে ন।
মেরি বলে আব্বা থাক, বউগুলো কী জল্লাদ! ভাইদেরকে কী অত্যাচার করে! হেরাই খাইতে পায় না। দেখো না বাচ্চাগুলো আমার কাছে বসে থাকে!
মা রে, তোর কতা হুনি কলিজা ঠান্ডা অই গেছে। তুই কী সোন্দর করি কথা কস, স্কুলে যাওন বাদ দিলি কেন? আঁর কষ্ট অইলেও তুই স্কুল বাদ দিস না।
মেরি বলে, না আব্বা স্কুলে যামু না। তয় পরীক্ষা দিমু। হেড স্যার জানে।
সিদ্দিক হাসে। আইচ্ছা।
মেরির যুদ্ধ শুরু হল।
দুবছর পর, মেরির সেলাই মেশিন চারটি হলো।নিজেই কাটিং মাস্টার হলো। তখন সে নবম শ্রেণিতে উঠলো। নিজেই আয় করে, লেখাপড়া করে। বাপকে ভিক্ষা বন্ধ করে দেয়। মেরির মুরগীর খামারে এখন একশয়ের উপর মোরগ। ভায়ের বউদের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ। সে কারো সাথেই কথা বলে না। তার কেবল স্বপ্নের পথে পাড়ি দেয়া।
সিদ্দিক ভিক্ষা করে না। মেয়ের তৈরি করা পোশাক ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে। বজু সাথে থাকে। বজু তার ভাই। প্রাইমারি শেষ করার পর হারিয়ে গিয়েছিলো। আসলে ক্ষুধার তাড়নায় রেলে উঠে বসে। তারপর এক ভদ্রলোকের বাড়িতে কাজে লেগে যায়। কবেয়ে দেয়ে মোটামুটি তাগড়া হয়ে গেছে দু বছরেই। বজু যখন ফিরেছে মেরির তখন স্বপ্নের গতি চারগুণ। দু ভাই বোন মা মিলে কঠিন এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত হলো।
মনের শক্তিই আসল। সকল বাঁধা জয় করা যায়।
মেরি দেখেছে তার বাবাকে দুটাকা ভিক্ষা দেয়ার সময় কী ভাবে মানুষ হেনস্তা করেছে- কী ভাবে তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে! ভায়ের বউরা খাবারের প্লেট কেড়ে নিয়েছে!মাকে অপমান করেছে,দিনের পর দিন খেতে পায়নি, বজু বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। মা প্রতি রাতেই কেঁদেছেন।
মেরির জামা ছিঁড়তে ছিঁড়তে পরার অযোগ্য হয়েছে। সে সময় যার কাছে স্থান পেতো সে ডালিয়া আপা। স্কুলের ম্যাডাম। মেরি সন্ধ্যার পর ডালিয়া আপার কাছে পড়া শিখতো, মেরির আগ্রহে আপাও আগ্রহী হলেন, রাতে তাকে না খাইয়ে আসতে দিতেন না। নতুন না দিক তার মেয়ের পুরাতন পোশাক তাকে দিতেন। তার মায়ের জন্য পুরাতন শাড়ি হলেও দিতেন। স্কুলের হেড স্যার পড়া মুখস্ত বলতে পারার জন্য, হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার জন্য তাকে আদর করতেন। এখনো ডালিয়া আপা হেড মাস্টার দুজনেই তাকে সাহায্য করছেন।
হেডমাস্টার প্রায় তাকে বলেন, মেরি পড়া ছাড়িস না, তুই হবি ব্র‍্যান্ডিং বাংলাদেশ।
সেদিন না বুঝলেও আজ বুঝে সে ব্র‍্যান্ডিং বাংলাদেশ কী? ডালিয়া আপা বাস্তবাদী। তিনি বললেন, মেরি ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি না হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে কোর্স কর। অনলাইনেই পাওয়া যায়। ব্যবসায় মনোযোগ দেয়। বাঁচার জন্য আগে দরকার খাওয়া, তারপর থাকা। মেরি ফ্যাশন ডিজাইনের কোর্সের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গেলো। হার না মানা হার মেরির গলায়!
গ্রামের ইতরবিশেষ পুরুষদের হাত থেকে তাকে রক্ষার জন্য বজু একাই যথেষ্ট হয়ে উঠলো। মেরি ভাইকেও লেখাপড়ায় উৎসাহিত করলো। যে যুদ্ধ সে শুরু করেছে তার শেষ পর্যন্তই সে দেখতে চায়।
এখন ভায়ের বউরা ডাকে, মাথায় তেল মেখে দিতে চায়। কিন্তু মেরি এখন তেল মাখে না।শ্যাম্পু ব্যবহার করে। মেরির মা এখন তোষকে ঘুমায়। মেরির বাবা এখন পরিষ্কার পোশাক পরে। মেরির একটা এক্সট্রা গুণ ছিলো। সে ভালো গাইতে পারতো। মেরির বাবা ভিক্ষা করার জন্য গান বাঁধতো মেরিকে নিয়েই গাইতো। গাইতে গাইতে মেরির গলা খুলে গিয়েছে। স্কুল তাকে নিয়ে গর্ব করে। সে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয় পদক পেলো পর পর চারবার। চারটি ইভেন্টে।
গ্রামের সবাই বলাবলি করছে সিদ্দিকের ভাগ্য এমন একটা মেয়ের জন্ম হয়েছে! এ মেয়েই তার চোখের আলো হবে।

লোভী পুরুষেরা রাতদিন মেরিকে ভাগানোর ধান্ধায় থাকে। বজুর হুঙ্কার মেরির দৃঢ়তার কাছে সবাই হার মানে। মেরি কমার্স থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে। ততোদিনে সিদ্দিকের বাস্তুভিটায় মেরি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে। তার ব্র‍্যান্ডের নামই দিয়েছে সে “অন্ধ বাবা”। অন্ধ বাবার প্রোডাক্ট সারাদেশে দেদারসে চলছে। এখন দেশ ছেড়ে বিদেশ। তার ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করে মেরি তাদের জন্য স্কুলের,খাবারের ব্যবস্থা রেখেছে। তার সাথে তার ওয়ার্কারেরা সুন্দর সময় কাটায়। সবার প্রয়োজন সে যেমন বোঝে তেমনি তারাও একই পরিবারের মতোন বাস করে।
দিনে দিনে মেরি হয়ে ওঠে একজন সফল উদ্যোক্তা। ব্যাংকগুলো তাকে খুঁজছে লোন দেবে। রাজনীতি খুঁজতেছে স্থান দেবে।
মেরি কোন দিকেই না ঝুঁকে নিজের ব্যবসার প্রচার এবং প্রসারের দিকে মন দিয়েছে।

সিদ্দিক মিয়ার সুখের শেষ নেই। এখন শান বাঁধানো ঘাটে বসে বসে নিজের বাঁধা গান করে। নামাজ-কালাম পড়ে এবং মেরির খামার পরিচর্যা করে। অন্ধের আঁধারালো দিয়েই মেয়ের শখের খামার আগলে রেখেছে।

সেবার ঈদে মেরি ডালিয়া আপা এবং হেডমাস্টারের জন্য স্পেশাল পোশাক তৈরি করে উপহার নিয়ে গিয়েছে। ডালিয়া আপা খুব কেঁদেছেন। হেডমাস্টার গৌরবের সাথে সব ক্লাসে নিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন। মেরি হলো ব্র‍্যান্ডিং বাংলাদেশ।

গাঁয়ের দুষ্টু লোকদের মুখ এখন থেমেছে। কারণ মেরি এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে যেখানে শুধু প্রোডাক্টই উৎপাদন হয় না। মানবিক মানুষও তৈরি হয়।
বুদ্ধিমতী মেরি ভাইদের আর্থিক সহায়তা করলেও তার প্রতিষ্ঠানের আশে পাশেও রাখেনি। কারণ বজু ছাড়া বাকিগুলো ধবংসের হাবিলদার!

মেরি সকাল দুপুর বিকেল তিনবেলাতেই খাবার পাঠিয়ে দেয় ফোনে জানায় ভিক্ষা না করলেও আমার অন্ধবাবার খাবারের অভাব নেই।
একদিন মাঝ রাতে মেরির ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তার ভায়ের দুই বউ। দৃশ্যটি দেখে ফেলে বজু। তাৎক্ষণিক মেরির আধুনিক ফ্যাক্টরির ছাদ থেকে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। আগুন তার লেলিহান শিখা বের করার আগেই বজু আগুনের গলা টিপে ধরে।
বজুর হাত এতোই পাথরের মতো হয়েছে যে তার দুই ভায়ের বউ স্তব্ধ হয়েছে চিরতরে। মেরির প্রচেষ্টায় বজু হাত খুলে দিয়েছে বটে বাকি জনম কখনো তারা মুখ থেকে শব্দ বের করতে পারবে না।
মেরি মামলা করেনি করেছে চিকিৎসা।
তারপর মেরির সেই চা দোকানদারকে মেরি ডেকে পাঠায়। একদিন সে কষ্ট করেও মেরিকে নতুন ড্রেস কিনে দিয়েছে। আজ কেমন আছে সে!

চা দোকানদার আজ আর মেরির দিকে ফিরে তাকানোর সাহস করেনি কিন্তু মেরি বললো, আমার এখানে তুমি থাকতে পারো।

মেরির প্রচেষ্টায় পুরো গ্রামে আর কোথাও অভাবের চিত্র নেই।সবাই কাজ করছে, ফার্ম করছে, চাষাবাদ করছে। সবাই মিলে গ্রামটির নাম বদলে রাখলো সুখিপুর।
সুখিপুরের মেরির বুকে এখনো সেই শব্দগুলো ঘাই মারে, অন্ধ হলেই ভিক্ষার হাত পাততে হয়? এত্তোবড়ো মেয়ে নিয়ে বের হও লজ্জা করে না!
নাকি মেয়ে দিয়েও ব্যবসা করাও!

মেরির চোখে তার অসহায় বাবার অসহায়ত্বের ছবি ভেসে ওঠে। তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। আমাকে আরো বহুদূর যেতে হবেই। নারী মাত্রই শুধুমাত্র বিয়ে কিংবা ভোগ নয় তার চেয়ে অধিক, গুরুত্বপূর্ণ বেশি কিছু পিতামাতাকে সম্মানের আসনে বসিয়ে আগলে রাখা!

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি,প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

আরও পড়ুন।

“আমানত উল্যাহ সিরাজী ফাউন্ডেশন ” এর গুণীজন সম্মাননা ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম ২০২৩

আরও পড়ুন।

নারী-পুরুষের সম্মিলিত শক্তিতে পৃথিবী হোক পুষ্পিত বাগান – শাহানা সিরাজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top