ভাইস চেয়ারম্যানকে থাপ্পড় দেয়া uno মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার

Picsart_23-03-08_14-29-55-537.jpg

ভাইস চেয়ারম্যানকে থাপ্পড় দেয়া ইউএনও মনোয়ার হোসেন প্রত্যাহার

অপরাধ প্রতিবেদকঃ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দেয়ার ঘটনাটি জনসম্মুখে আসার পর থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয়রা।

তাদের দাবি, থাপ্পড় দেয়া ইউএনওর পুরনো অভ্যাস। তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে গাছ বিক্রি এবং বিনা পয়সায় বাড়ির বাজার নিতেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

ফকিরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর বাড়ির বাজারের লিস্ট দেন হোয়াটসঅ্যাপে। সেই অনুযায়ী বাজার করে তার বাসায় পাঠানো হয়। এ জন্য তিনি টাকাও পরিশোধ করেন না।

ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড় এলাকায় থাকা ওয়েলকাম পরিবহনের কাউন্টার ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, ‘কদিন আগে বিকেল ৬টার দিকে আমাদের পরিবহন যাত্রী নিয়ে খুলনা থেকে ঢাকা যাচ্ছে। আমাদের এখান থেকে ৫টি টিকিট কাটা ছিল। এ কারণে আমাদের কাউন্টারের সামনে রাস্তার পাশে গাড়িটি সাইড করে থামায়। এ সময়ে ইউএনও এসে জানতে চান কাউন্টার কার? ‘তখন আমি বলি, জি স্যার আমার কাউন্টার’। বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে দুটি চড় মারেন। পরে হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান।’

একই স্থানে থাকা ইমাদ কাউন্টারের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘কাউন্টারের সামনে সুন্দরবন গাড়ি দাঁড়ানোর অপরাধে গাড়িচালক ও চালকের সহযোগীদের গালিগালাজ করেন ইউএনও। কাউন্টারে ঢুকে টিকিট ও ল্যাপটপ নিয়ে যান। পরে এসব আনতে গেলে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ল্যাপটপ ও টিকিট ফেরত আনি।’

একই এলাকার আজিজুল নামে এক কাউন্টার সহকারী বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে কাউন্টারের সামনে ইমাদ গাড়ি দাঁড়ানোর অপরাধে ইউএনও চড়-থাপ্পড় দিয়ে আমাকে তার গাড়িতে তোলেন। অনেক ভয়ভীতি দেখিয়ে পরে অনেক দূর নিয়ে ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দেন।’

আজিজুল বলেন, ‘শুধু আমাকে না, বিশ্বরোড এলাকার অন্তত আট কাউন্টার ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময় লাঞ্ছিত করেছেন ওই ইউএনও।’

উপজেলার নওয়াপাড়া মোড় এলাকার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গত ২ জানুয়ারি বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কে রাখা কিছু ইট ভ্যানে করে বাড়ির মধ্যে নিচ্ছিলেন কেয়ারটেকার খায়রুল ইসলাম (৫০)। এর মধ্যেই ইউএনও ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সড়কে ইট রাখার কারণ জানতে চান। ভুল স্বীকার করলেও ইউএনও কেয়ারটেকারকে চড়-থাপ্পড় দেন।’

এদিকে পাগলা শ্যামনগর এলাকা থেকে ৫-৬টি শতবর্ষী মেহগনি গাছ এবং উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসের সামনে কয়েক লাখ টাকার গাছ নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি কেটে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফকিরহাট উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শাহজামান চৌধুরী লড়ে বলেন, ‘হঠাৎ করে কিছু শ্রমিক এসে আমাদের অফিসের সামনে থেকে গাছ কেটে নিয়ে যান। জিজ্ঞাস করলে বলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাটতে বলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু অবহিত করা হয়নি। যেহেতু উপজেলার শীর্ষ কর্মকর্তা এ জন্য আমরা কিছু বলিনি।’

পাগলা শ্যামনগর এলাকার মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক-দেড় মাস আগে এখান থেকে গাছ কাটতেছে। সরকারি রাস্তার গাছ কাটার সময় আমারও দুটি গাছ কেটে নিয়ে গেছে।’ 

‘ইউএনও যদি নেয়, তাহলে আমাদের কী বলার আছে,’ এই বলে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়েন ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি।

ফকিরহাটের কাটাখালী মোড় এলাকার ভাই ভাই প্লাস্টিক কারখানার স্বত্বাধিকারী বদিউজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘কারখানার সামনে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের পাশে মালামাল রাখার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও। পরে প্রায় এক মাস পর ইউএনও আবার আসেন এবং আমাকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। পরে কারখানা না চালানোর জন্য মুচলেকা দিতে বলেন। দুদিন পর ইউএনওর বাসায় গিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসি; এরপর আর হয়রানির শিকার হতে হয়নি।’ 

উল্লেখ্য, বুধবার (০১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাঁঠালতলা এলাকায় ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগায় ভাইস চেয়ারম্যানকে থাপ্পড় মারেন ইউএনও। পরে গালিগালাজ করে গাড়ির পেছনে উঠিয়ে বেশকিছুক্ষণ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে ছেড়ে দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ইউএনওর বিচার দাবি করেন তারা। বিভিন্ন ভুক্তভোগীর বক্তব্যে উঠে আসে ইউএনওর নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ।

শুক্রবার (০৩ মার্চ) বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনওর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন। দু-একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার চাকরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রেহেনা আক্তার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেওয়া হয়।

আদেশে উল্লেখ করা হয় ইউএনও মনোয়ার হোসেনকে পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগে ন্যস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সোমবার রাত ৯টার সময় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগেও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছিল ওই ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা

আরও সংবাদ পড়ুন।

গাড়িচালককে মারধর – অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার’কে আদালতে তলব

আরও সংবাদ পড়ুন।

‘মাথামোটা’ জনপ্রশাসন কাঠামো থেকে বের হবে কবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top