জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে জেলা-উপজেলায় বড় রদবদল হচ্ছে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তথা মাঠ প্রশাসনে সহসাই বড়সড় রদবদল করা হবে। এই রদবদল হবে সরকারের বর্তমান মেয়াদে সর্বশেষ রদবদল। এই প্রক্রিয়ায় যেসব কর্মকর্তা (ডিসি-এসপি-ইউএনও এবং ওসি) দায়িত্ব পাবেন মূলত তারা আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক তথা ডিসি পদে বর্তমানে ২২-২৪ ও ২৫তম বিসিএস কর্মকর্তারা এখন দায়িত্বে আছেন। এসব কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই দুই বা তিন বছরের কাছাকাছি সময় দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণত দুই বছর ক্ষেত্রবিশেষ তিন বছর মাঠ প্রশাসনের কোনো পদে চাকরি কাল সম্পন্ন হলে তাদের প্রত্যাহার করা হয়।
জানা গেছে, আগামীতে ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সংখ্যাগত দিক বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়ে জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ উদ্দেশ্যে এই ব্যাচের মধ্যে জেলা প্রশাসক পদের জন্য যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাছাই পরীক্ষা শুরু হবে। ১৪১ জন কর্মকর্তাকে ঐ পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে। অপরদিকে ২৫ ব্যাচের ৯০ জন কর্মকর্তাকেও ডাকা হয়েছে। ২৫ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা দ্বিতীয় বারের জন্য ডাক পেয়েছেন।
সূত্র জানায়, ৬৪ জেলার মধ্যে অর্ধেকের বেশি পদে ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে দেখা যাবে। ২৫তম ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাও থাকবেন। তবে ২২ ও ২৪ ব্যাচের কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনকালীন সময়ে ডিসি থাকতে পারছেন না। কারণ ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসনে তাদের দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে যাবে।
অপরদিকে পুলিশ সুপার পদেও আনা হচ্ছে বড় পরিবর্তন। যদিও পরিবর্তন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে চলমান রয়েছে। সূত্র মতে এসপি পদেও ২৪ ব্যাচের সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখার পক্ষে মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে পারেন ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২৪ ও ২৫ ব্যাচের যেসব কর্মকর্তার নিয়োগ হয়েছিল সে সময় একটি বিশেষ ভবন থেকে তালিকা করে পিএসসিতে দেওয়া হতো এবং তাদেরই বেশির ভাগ নিয়োগ পেতেন। সেখানে শিক্ষার মান বিবেচনার থেকে রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্ব পেতো বেশি। সেটি প্রশাসন-পুলিশ ক্যাডারের ক্ষেত্রে বেশি প্রচলন করা হয়েছিল। অবশ্য মেধা তালিকায় স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তার নিয়োগও হয়েছিল। তখন এসব নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে।
২০০৪ এবং ২০০৫ সালে যেসব ইউএনও এবং ওসি নিয়োগপ্রাপ্ত তাদের অধিকাংশই প্রত্যাহার হবেন এই রদবদল প্রক্রিয়ায়। কারণ সে সময় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্বেচ্ছাধীন সিদ্ধান্তে নিয়োগের ঘটনা বেশি হতো। মেধার পরিমাপ কম হতো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন অবশ্য বলছেন কে কখন নিয়োগ লাভ করেছে সেটি বিবেচনার বিষয় নয়। বিবেচনা করা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি কর্মকর্তাদের আনুগত্য, সক্ষমতা দক্ষতা এবং পূর্ববর্তী কর্মস্থলে তার কাজের মান। রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে মানিয়ে চলার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে সেসব কর্মকর্তাকে মাঠ প্রশাসনে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব শূন্যজনিত কারণে পূরণ করার পর এখন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কেন্দ্রীক সচিব ও মধ্যম স্তরের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বেশ আগেই নিয়োগপ্রাপ্ত অন্তত পাঁচ জন সচিবের বিষয়ে সচিবালয়ে আলোচনা হয়। এসব সচিবের দক্ষতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে তেমনি অতীত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলোও প্রশ্নবিদ্ধ। এক সময় তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ‘মাইম্যান চয়েজ’ নীতির কারণে। তবে এখন এসব ভেঙে ফেলে চূড়ান্তভাবে দক্ষ যোগ্য সক্ষম এবং ব্যবস্থাপনায় অধিকতর সক্ষমতা আছে তারাই প্রশাসনের কেন্দ্রে আসবেন। সে ক্ষেত্রে সচিবালয়েও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব ও মধ্যম স্তরে রদবদল হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
আরও সংবাদ পড়ুন।
জনপ্রশাসনের তিন পদে পদোন্নতি; তিন শতাধিক কর্মকর্তার তথ্য যাচাই বাছাই চলছে
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান