জাতীয় পার্টি’র চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদের থাকলেন
আদালত প্রতিবেদকঃ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনের ওপর নিম্ন আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি আব্দুল হাফিজের নেতৃত্বাধীন একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারী২০২৩) রুল জারিসহ এই আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। আদালতেও জি এম কাদেরের পক্ষে তিনি শুনানি করেন।
গত বছরের ৪ অক্টোবর জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা এবং দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। ওই মামলার শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জি এম কাদেরের দলীয় যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। পরে জি এম কাদেরের ওপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয়।
এরপর একইবছরের ২৪ নভেম্বর ওই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য জেলা জজ আদালতে মিস আপিল দায়ের করা হয়। কিন্তু ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা জজ আদালত। এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন জি এম কাদের। পরে আবেদনটির শুনানি নিয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) দায়িত্ব পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞাদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুলও জারি করা হয়। এরপর সেই আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হলে এর শুনানি নিয়ে ৩০ নভেম্বর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। পাশাপাশি আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। যার ধারাবাহিকতায় আবেদনটির শুনানি নিয়ে জি এম কাদের দলটির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এ বিষয়ে নিম্ন আদালতে চলমান মামলাটি চলতি বছরের ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তিরও নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর দায়িত্ব পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞাদেশ বাতিল চেয়ে জিএম কাদেরের আপিল গত ১৯ জানুয়ারি না-মঞ্জুর করেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে জিএম কাদের হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন জানান।
রোববার ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকেও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের কাউন্সিলসহ চলতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহিষ্কার আদেশ অবৈধ ঘোষণা করতে এবং হাইকোর্ট বিভাগের রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির পরবর্তী কাউন্সিল স্থগিত রাখতে মামলায় আদেশ চাওয়া হয়।
গত ৬ অক্টোবর জাতীয় পার্টির পক্ষে শেখ সিরাজুল ইসলাম, কলিম উল্যাহ মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী এই আবেদন করেন। আবেদনে জিএম কাদেরের ওপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার চাওয়া হয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বিবাদি জিএম কাদের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন।