ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক পেলেন নীল দলের মনোনয়ন!
অপরাধ প্রতিবেদকঃ যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের প্যানেলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আর এ বিষয়টি ঘিরে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেন এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) নির্বাচনের প্যানেল মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। নীল দল ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল তাদের ৩৫ সদস্যের মনোনীত প্যানেল রেজিস্টার কার্যালয়ের নির্বাচন শাখায় মনোনয়ন জমা দিয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক আকরাম হোসাইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন বিভাগটির এক ছাত্রী।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসে। যৌন নিপীড়নের অডিও রেকর্ডসহ সবকিছু তার আছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগ দায়েরকারী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ প্রদানকারী বলেন, ২০১৮ সালে রিক্রুটমেন্ট পর আমাকে কিছু শিক্ষক বললেন, আকরাম স্যারের সাথে দেখা কর। এরপর আমি স্যারের সাথে দেখা করতে তার রুমে গেলাম। রুমে যেতে না যেতেই স্যার দরজা লক করে দিলেন। হঠাৎ করে স্যার বলে উঠলেন, আমি তোমার জন্য কেন করব?
তিনি বলেন, আমাদের বিভাগে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল দুইটা গ্রুপ রয়েছে। আমি উত্তরাঞ্চল গ্রুপের ছিলাম। কাজেই স্যার বারবার বলছিলেন আমি তোমাকে কেন নেবো? এরপর তিনি আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। এছাড়াও সেখানে আমাকে ফিজিক্যাল হ্যারাজমেন্ট করা হয়। এরপর আমি জোর করে দরজা খুলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, আমি তো এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমার যতটুকু মনে হয়, সিলেকশনে না টিকে ঠিক তার পরদিন যদি কেউ যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করে, তবে সেটার কী মানে দাঁড়ায়?
তিনি আরো বলেন, আমার কাছে এইমাত্র আমাদের বিজনেস অনুষদের সাবেক ডিন একটি চিঠি নিয়ে আসছে। সেখানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের যে চিঠি এবং আজকের চিঠি, দুটির মধ্যে কোনো মিল নাই। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং গতকাল চাকরি না পাবার জন্যই আজকের এই অভিযোগ। তার মানে চাকরি পেলে অভিযোগ দিতো না। তার পেছনে লোকজন রয়েছে, যারা আমাদের দলের না, অনুপ্রবেশকারী, তারাই এই কাজটা করতেছে।
আরেক অভিযুক্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) নারী সহকর্মীদের হেনস্থা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ ও উপদেষ্টা। গত বছরের ২২ নভেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে ড. মিজানের বিভিন্ন অনিয়ম ও যৌন হয়রানি নিয়ে নিটারের ৩৭ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন।
তবে সে সময় ড. মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এগুলো উদ্দেশ্যমূলক। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এসব করা হয়েছে।’
নীল দলের শিক্ষক প্যানেলের ৩৫ সদস্যের মধ্যে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস ছামাদ বলেন, নীল দলের সর্ব সম্মতি ক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর বেশি এখন বলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে নীল দলের দুইবারের সাবেক আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমি শুনেছি, নীল দলের সভায় আলোচনা হয়েছিল যে আমরা যারা প্রশাসনে আছি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কোনো আলোচনাও করা হয়নি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটকে এক সময় বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর এখানেই সর্বপ্রথম তাঁর উপর শোক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিলো। সেই মর্যাদাপূর্ণ ফোরামে বিতর্কিত কাউকে অথবা অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে এমন কোনো শিক্ষকের মনোনয়ন প্রদান খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ মে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এর মধ্যে কোনো দল চাইলে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সাধারণত কোষাধ্যক্ষ নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।