দুর্নীতিতে জড়ালে কঠোর শাস্তি – প্রধান বিচারপতি

Picsart_22-12-27_23-38-15-810.jpg

দুর্নীতিতে জড়ালে কঠোর শাস্তি – প্রধান বিচারপতি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ অধস্তন আদালতের কোন বিচারক দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত হলে তদন্ত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সারাদেশের জেলা জজদের নিয়ে আয়োজিত অভিভাষণ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জেলা জজদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের ৯৯ ভাগ বিচারকই সৎ, দক্ষ ও যোগ্য। হাতে গোনা দু’একজন অসৎ বিচারকের জন্য বিচার বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ণ হলে তাদের সঙ্গে কোন আপস করা হবে না। দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর২০২২) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এক অভিভাষণ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

এতে সারাদেশে কর্মরত প্রায় ৩০০ জন জেলা জজ অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যোগ দেন। অভিভাষণ অনুষ্ঠানে জেলা জজদের পক্ষ থেকে নানা সমস্যার কথা প্রধান বিচারপতিকে জানানো হয়। সম্প্রতি কয়েকটি জেলা জজ আদালতে বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাগুলো প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিতে আনেন জেলা জজরা।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন ও বিধি মেনে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হবে। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। যদি কেউ বিচারকদের সঙ্গে কোন ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তাহলে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি আগামীতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তা সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনার জন্য বিচারকদের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। রুদ্ধদ্বার এই অনুষ্ঠান শেষে একাধিক জেলা জজের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান বিচারপতির এই দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য পাওয়া যায়।

জেলা জজদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের কারো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সময়মত এজলাসে বসেন না। এ ধরনের অভিযোগ যেন আমাকে শুনতে না হয়। আপনারা বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুন। এতে মামলার নিষ্পত্তির হার যেমন বহুগুণে বাড়বে তেমনি উপকৃত হবেন বিচারপ্রার্থী জনগণ।

তিনি বলেন, জজদের লক্ষ্য হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা। বিচারপ্রার্থী মানুষকে যাতে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়। কারণ বেশিরভাগ বিচারপ্রার্থী হয় জমি বন্ধক রেখে, না হয় হালের গরু অথবা গোলার ধান বিক্রি করে আইনজীবীকে টাকা দেন। এখন এসব বিচারপ্রার্থী যদি দিনের পর দিন আদালতে ঘুরতে থাকেন তাহলে তারা নি:স্ব হয়ে যাবেন। এ কারণে অত্যন্ত দরদ ও আন্তরিকতার সঙ্গে বিচারপ্রার্থী জনগণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে। যদি প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে মামলার জট থেকে উত্তরণ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে আপনাদের কর্মদক্ষতার কারণে সারাদেশে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মনিটরিং কমিটির দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ বছরের পুরনো বেশিরভাগ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। কোন কোন কোর্টে কিছু মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। সেগুলো আপনারা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবেন বলে আমি আশাবাদী। এছাড়া বছরের শুরু ও শেষে ঠিকমত কোর্ট ইন্সপেকশন করতে জেলা জজদের নির্দেশনা দেন প্রধান বিচারপতি। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও আইন সচিব গোলাম সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।

দেশের বিভিন্ন আদালত থেকে আসা বিচারকদের মধ্য থেকে ১২ জন জেলা জজ অনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে অধস্তন আদালতগুলোর অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, এজলাসের অপ্রুতলতা, জনবল সংকট, সহকারী জজদের স্টেনোগ্রাফার নিয়োগ, বাজেট বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন। বিচারকদের বক্তব্যের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top