সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনের ৫০ বছর পর নির্মাণ করা হচ্ছে স্মারক স্তম্ভ;বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার বাস্তব রূপ দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার বাস্তব রূপ দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছার বাস্তব রূপ দিচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনের ৫০ বছর পর নির্মাণ করা হচ্ছে স্মারক স্তম্ভ। নির্মিত ঐ স্তম্ভে স্থান পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ আইনজীবীদের নামের তালিকা। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনে এসে বঙ্গবন্ধু শহিদ আইনজীবীদের নামের ফলকসংবলিত স্তম্ভ দেখতে না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। জাতির পিতার সেই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ। এই স্মারক স্তম্ভে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পাশাপাশি হাতে লেখা ’৭২-এর সংবিধান ও শহিদ আইনজীবীদের নামের তালিকা স্থান পাচ্ছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন নিজ দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। পরদিন ১১ জানুয়ারি ‘দি প্রভিশনাল কন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ঐ আদেশের অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে—যা একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি যারা সময়ে সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। ঐদিনেই রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান।
১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট। স্বাধীন বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের গোড়াপত্তন এভাবেই। রাষ্ট্রপতির ১১৪ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ’ (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) আদেশ দ্বারা রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশের কার্যকারিতা দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে।
ঐ বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আসেন বঙ্গবন্ধু। সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণের যেখানে দাঁড়িয়ে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি সেখানেই নির্মিত হচ্ছে এই স্মারক স্তম্ভ।
উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমাদের সুপ্রিম কোর্ট, আজ আমাদের দেশে আইনের শাসন হতে চলেছে, তাদের আমাদের স্মরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে শহিদ আইনজীবীদের নামফলক দেখতে না পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন পিজি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে, এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের নাম লেখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা, যে যে সহকর্মীরা যারা শহিদ হয়েছেন—এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহিদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, আইনজীবীসহ উপস্থিত সুধীবৃন্দের উদ্দেশে তিনি এ ভাষণ দেন।
এই উদ্বোধনের ৪৫ বছর পর ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম বারের মতো উদযাপন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট দিবস। এর পর থেকে প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করছে সুপ্রিম কোর্ট।
১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রথম কার্যক্রম শুরু করেছিল। এই দিনটিতে সরকারি ছুটি। কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ঐ দিন ছুটি প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ‘দৈনিক কার্য তালিকা’ (কজ লিস্ট) প্রণয়ন করেন এবং ঐ তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট দিবসে সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে রবিবার বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ।
৬২ শহিদ আইনজীবীর নামের তালিকা :
মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন অনেক আইনজীবী। এর মধ্যে ৬২ জনের নামের তালিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। এছাড়া আরো শহিদ আইনজীবীর নামের তালিকা সংগ্রহের জন্য দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। যদি জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং আইনজীবী সমিতি থেকে কোনো শহিদ আইনজীবীদের নামের তালিকা পাঠানো হয় তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. সাইফুর রহমান। তিনি জানান, স্মারক স্তম্ভে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান সংবলিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থান পাচ্ছে। ইতিমধ্যে স্মারক স্তম্ভের যে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে তা আরো পরিবর্ধন ও পরিমার্জন চলছে বলেও জানান তিনি।