সরকারের জনপ্রশাসনে নেই ক্যাডার কর্মকর্তাদের সব তথ্য; নিয়োগ ও পদোন্নতিতে গরহাজিরা

Ban_Govt4.jpg

সরকারের জনপ্রশাসনে নেই ক্যাডার কর্মকর্তাদের সব তথ্য; নিয়োগ ও পদোন্নতিতে গরহাজিরা, হবে সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য ভান্ডার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সব তথ্য নেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরেও কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মলব্ধজ্ঞান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, উচ্চ ডিগ্রি অর্জন, বিশেষ কাজের অভিজ্ঞতার একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটবেজ হয়নি।

পার্সনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (পিএমআইএস) কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অংশবিশেষ সংরক্ষণ করা হয়। তবে সেখানে একজন কর্মকর্তার পেশাগত বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির কোনো তথ্যই থাকে না।

এদিকে পদায়নের জন্য নির্দিষ্ট পদের বিপরীতে কোনো কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে নির্ধারণ করা নেই।

এসব কারণে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি পদায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সঠিক তথ্যের অভাবে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথাস্থানে পদায়ন করা যায় না। অনেক সময় যার যে পদে থাকার কথা নয়, সে সেখানে পোস্টিং পাচ্ছে। অপরদিকে কারিগরি পদসমূহে পদায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। সে বিষয়ও তেমন আমলে নিচ্ছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে এক ধরনের অলিখিত ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, প্রভাব চর্চার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে জনপ্রশাসনে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অব্যবস্থাপনাগুলো নিরসনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (জিইএমএস) নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা। সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা গতিশীল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিকতর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।

এই কর্মসূচির আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের এবং বিদ্যমান সরকারি পদসমূহের একটি নির্ভরযোগ্য গতিশীল তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করা। যথাযথ ও কার্যকর কর্মকৃতি মূল্যায়নের উপযুক্ত পদ্ধতি প্রণয়ন করা এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করা হবে।

সম্প্রতি এক প্রশ্নের উত্তরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, সিভিল সার্ভিসের দক্ষতা উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়নের দাবি রাখে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সিপিটি) ড. মো. সহিদউল্যাহ সোমবার বলেন, সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (জিইএমআই) নেই। এটা বড় একটা দুর্বলতা। কর্মকর্তাদের পরিপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত না থাকায় পদোন্নতি-পদায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আপাতত আমরা পিএমআইএসে কর্মকর্তাদের যেসব তথ্য আছে তা নিয়ে নতুন করে একটি ওয়েবসাইট খুলেছি।

এখানে প্রশাসন ক্যাডারের সব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে যারা উপসচিব হয়েছেন তাদের অনেক তথ্য সংরক্ষণ করেছি। নতুন এই ওয়েব পেইজে কিছু ফিল্ড রাখা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সব তথ্য পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা কর্মকর্তাদের বার্ষিক কর্মবৃত্তি মূল্যায়ন (এপিএআর) আপলোড করব। আগামী জুন মাসের মধ্যে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং নন-ক্যাডার নবম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের যাবতীয় তথ্য আপলোড করে সংরক্ষণ করব। তিনি আরও বলেন, জিইএমএস হবে প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক, তথ্যসমৃদ্ধ গতিশীল ডেটাবেজ।

জিইএমএসের (সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি) ধারণাপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, তথ্যের অভাব এবং পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে পদায়ন নীতিমালা যুগোপযোগী করা যাচ্ছে না। পদায়ন নীতিমালা হালনাগাদ না হওয়ায় সঠিক ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে পদায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান, বিশেষ অর্জন, সততা, নৈতিকতা, পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতাকে প্রাধান্য না দিয়ে চাকরির মেয়াদকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আগে থেকে সংরক্ষণ না করায় পদোন্নতি কিংবা পদায়নের সময় এসব প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকে বলছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসব গুণাবলির কোনো ব্যবহারও নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যভান্ডারে এসব তথ্য না থাকায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

কিন্তু এসব সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাদের দাবি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনেক সময় নিরপেক্ষ হয় না। তাতে প্রকৃত সত্য উঠে আসে না। তাদের দাবি গোয়েন্দা প্রতিবেদন কেন, পরীক্ষা নিয়ে পদোন্নতি দিলেই তো আর ঝামেলা থাকে না। তারা মনে করছেন জনপ্রশাসন সব সময় বাঁকা পথে হাঁটে।

জিইএমএসের ধারণাপত্রে বলা হয়, প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় দরকারের সময় উপযুক্ত অনুসন্ধান করা যায় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ঘটে বিপত্তি। ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনে সরকার দল সমর্থক হয়েও অনেকে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন, হচ্ছেন।

দাদা-বাবাসহ পরিবারের সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করলেও পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যাও কম নয়। এক সময় পদোন্নতিবঞ্চিতদের নিয়ে বেশ তোড়জোড় হলেও এখন তা আর খুব একটা হয় না। কারণ এখন সবাই নিজেদের সরকারদলীয় সমর্থক দাবি করেন এবং নিজেদের মধ্যে প্রাপ্তি-বঞ্চনা নিয়ে আনন্দ ও ক্ষোভ ঝাড়েন।

আরও সংবাদ পড়ুন।

সরকার কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত করলো

আরও সংবাদ পড়ুন।

জনপ্রশাসনে ১০০ জনকে চুক্তিতে নিয়োগ – পদোন্নতিবঞ্চিতদের অসন্তোষ

আরও সংবাদ পড়ুন।

সংবাদের সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নয় সাংবাদিকরা – হাইকোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top