পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম শব্দ “ইকরা’ বাংলায় “পড়ো” – শাহানা সিরাজী

Picsart_22-06-09_19-39-40-565.jpg

পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম শব্দ “ইকরা’ বাংলায় “পড়ো” – শাহানা সিরাজী

পড়ো নিয়েই নানান মতামত। মানুষ মনে করে পড়ো মানেই হলো শুধু মাত্র কুরআন পড়ো।আর কিছুই না। এখানেই অন্য সবার সাথে আমার মতপার্থক্য।

সৃষ্টির আদিতে মানুষ কেমন ছিলো?
তারা কী খেয়ে জীবন ধারণ করতো?
কী পরতো? সূঁতা তৈরির ইতিহাস কতদিন আগের? শিল্পকারখানার ইতিহাস কতোদিনের?
দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিষয় আশয়ের ইতিহাস কবের?
প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান মানুষের জীবন প্রবাহের কোথাও না কোথাও কাজে লাগছে,মানুষ সে সব জানলো কী করে?

মানুষের জীবনধারায় আরাম আয়েশের ইতিহাস কতোদিনের?

কাগজ- কলম-কালির ইতিহাস কতোদিনের?

এসব পরিবর্তনে কারা কী ভাবে ভূমিকা রেখেছে,পানিতে চলা আকাশে চলা, স্থলে চলা এতো তড়িৎ কী করে হলো?

এখনো প্রকৃতির উপাদান নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে,মানুষের অন্ন -বস্ত্র -বাসস্থান- শিক্ষা- চিকিৎসা-বিনোদন নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে, সামাজিক-মানবিক উন্নয়ন নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে তা-ই আমার দৃষ্টিতে পড়া।

সৃষ্টি নিয়ে যতো গবেষণা হবে স্রষ্টার অসীম পাওয়ার ততোই উন্মোচিত হবে। পাতিলের ভেতর হাতি- অন্ধের মতো তা বিশ্বাস না করে বরং পাতিল খতিয়ে দেখা দরকার হাতি নাকি কৈ মাছ।

যে বুঝে পাতিলে কৈ মাছ সে পাতিলে সেভাবেই বুঝে হাত দেয়, যে জানে না সে হাতি তো দূরে কৈমাছও ধরে রাখতে পারে না!

পড়ার শক্তি প্রবল। প্রবল বলেই আমরা জানি গ্রহ-নক্ষত্র- সৌরজগতের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানি,জানি বলেই গভীর ভাবে বিশ্বাদ করি সপ্ত আসমান,নীলের বিশালতা, বাতাসের গতি, জলের প্রবাহ,মাটির শক্তি,রৌদ্র-তাপ জড়জগৎ হলেও জীবজগৎ জড়জগতের উপর নির্ভরশীল। পড়ি বলেই হয়তো বিশ্বাসের তীব্রতা আরো গভীর হয়।

পড়ো”র কারণেই শাস্ত্র এসেছে। সবাই পড়বে না এটাই সত্য।
কিন্তু পড়ুয়ারাই পট বদলায়। নগ্ন থেকে পাতা, পাতা থেকে ছাতা – সবই “পড়ো”র সাথে কানেক্টেড।
পদার্থ বিদ্যা,রসায়ন,জীববিজ্ঞান উদ্ভিদ বিজ্ঞান এসবই তো সৃষ্টির রহস্যা। এ রহস্যই মানব জীবনের আজকের উন্নয়ন কিংবা বিনাশের কারণ! যারা রহস্যের সীমায় সীমায়িত নয় তারা দেউলিয়া স্রষ্টার পথে।
যারা পড়োকে লিমিটেড করে বাহ্যিক আচার কালচারে নিমজ্জিত তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পড়ুয়াদের উৎপাদন ভুল পথে প্রয়োগ করে দুনিয়ায় ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে।
এবং ইকরার অপব্যাখ্যা করে!

হয়তো এ জন্যই মানুষ লোভী।
এ জন্যই মানুষ মুনাফেক
এ জন্য মানুষ হিংসুক,নিন্দুক,
এ জন্যই মানুষ অত্যাচারী
এ জন্যই মানুষে বহুরূপী
এ জন্যই মানুষ ভুল ব্যাখ্যা করে
এ জন্যই মানুষ চেয়ার- পদ-পদবী নিয়ে টানা- হেঁচড়া করে!

সুরা আল ইমরান এর ৬ নাম্বার আয়াতে, আল্লাহ মানব সৃষ্টির কৌশল সম্পর্ক অবগত করে নিজের পরাক্রমের ঘোষণা দিয়েছেন। এ লাইনটির অনুসন্ধানই জ্ঞানীর কাজ। তারা এখান থেকেই অনুসন্ধানে নামবে -শুক্রানু -ডিম্বানু, জাইগোট,ক্রমবিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কে জানবে, আল্লাহর একত্ববাদ ও পরাক্রমের সাথে পরিচিত হবে এবং সিজদায় নত হবে।
যারা কেবল আউড়াবে তারা-
চুরি ডাকাতি রাহাজানি,লুন্ঠন, সুদ ঘুষ, চিৎকার চেঁচামেচি, অশান্তি,হিংসা-ঘৃণা ইত্যাদি অনায়াসে করবে।যার কারণে তাদের নেকি লাভের আশা গুঁড়েবালি হবে! তারা দুনিয়ায় এক ধরণের মনোবেদনায় ভূগবে, তাদের আত্মা হিংসায় ডুবে যাবে,তারা মানুষকে, স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালো না বেসে ঘৃণা করবে নিজেরা হিপোক্রেসির ভেতর থাকবে। ফলে বাহ্যত তাদের সুখি দেখালেও তারা অন্তরের আগুনে সারাক্ষণ পুড়ে খাক হবে। এরা সাইকো হয়ে থাকে।

হে মাবুদ,মানুষকে তোমার রহস্য সম্পর্কে জানার শক্তি দাও

আমীন।

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ, পিটিআই ,মুন্সীগঞ্জ।
কবি প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top