আদম ১৬ – শাহানা সিরাজী
আদম চিন্তিত
এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হবে
মানুষই তারা দুজন আদম- হাওয়া
কিছুকাল পর আদম হাওয়ার চিৎকার শুনতে পায়
গিয়ে দেখে হাওয়ার কোলে দুজন মানব মানবী।
আদম ফিরে গেলো, হাওয়ায় কষ্ট অনুভব করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো না
হাওয়া বিচলিত, উঠে দাঁড়াতে পারছে না। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। দেহের ভেতর প্রাণ,দেহ ছিঁড়ে আলোয়ান!
হাওয়ার পূর্ণিমা দেখার সময় নেই
সাঁতার দেয়ার সময় নেই,নিজের ব্যক্তিগত পরিচর্যার সময় নেই। বছর বছর হাওয়া জোড়া সন্তান প্রসব করে।
আদম এবার আইন কানুন বানানোয় মনোযোগ দেয়
আদমের প্রতিকৃতি এক রকম চলে
হাওয়ার প্রতিকৃতিকে অন্য রকম চলার হুকুম দেয়।
হাওয়া বিষন্ন হয়; একই সাথে একই সময় একই দেহ ফুঁড়ে বের হওয়া মানুষ ভিন্ন রকম কেন হবে!
তেজস্বিনী হাওয়া ঈশ্বরের মুখোমুখি দাঁড়ায়
এই কী নিয়ম কানুন জগতপতি?
ঈশ্বর বলে,আদম আগেই বেয়াড়া ছিলো!
নিজেকে মনে করে ঈশ্বরের চেয়ে ক্ষমতাবান
তুমি ধৈর্য ধরো তোমার জন্য রয়েছে স্বয়ং ঈশ্বরের আধিপত্য
দেখো শুধু চেয়ে-
যে আগুন আদমের গায়ে লকলকিয়ে বেড়ায়
যে আগুনে আদম দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য
সে আগুন তোমাতে সুপ্ত
তুমি চাইলে স্থির, প্রত্যুৎপন্নমতী ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে পারো ঈশ্বরের মন
হাওয়া ফিরে আসে
আদম লকলকে আগুনে পুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঔরসজাত মানবীর উপর!
ইশ্বর তার ভবিষ্যৎ কেড়ে নেয়,মনের আনন্দ কেড়ে নেয়
হাওয়া তখন চুলে তেলমেখে চিরুণী দেওয়ায় ব্যস্ত
আদমের পুত্ররা আপন বোনের সাথে জুটিবদ্ধ হয়-
বিশাল দুনিয়ার আদি পত্তনে হাবিল আর কাবিল নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করে। রূপসী নারীভোগের দ্বন্দ্বে প্রথম হত্যা হয় ভাই!
হাওয়া বিস্মিত, আকাশের পথে হাঁটা শুরু করে
ঈশ্বর আবার তাকে থামায়; না হয় পৃথিবীতে জায়গা হবে না!
আদম হাত বাড়ায় নারীকে উদ্ধার করতে হবে
হাওয়া ধীরস্থির কণ্ঠে বলে পাগলিনী নীরুকে আশ্রয় দাও।
আদম চমকে বলে পাগলকে আশ্রয় দেবো!
আদমের স্বনির্মিত আইনে বহুগামীতার সূক্ষ্মজাল
হাওয়ার বুঝতে অসুবিধা হয়নি!
হাওয়া মুখ ফেরায়,জনমের জন্য
উদ্ভ্রান্ত আদম নতজানু
হে ঈশ্বর, সবই তোমার লীলা
ক্ষমা করো আমাকে!
যতবার জনম দেবে ততোবারই হাওয়াকে চাই
হাওয়া ছাড়া আমার মুক্তির উপায় নেই!
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি প্রাবব্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।