এরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়েও বেশি ক্ষতিকর

20191027_153114.jpg

এরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়েও বেশি ক্ষতিকর

স্মৃতিকণা রায়, নদীয়া থেকেঃ হিন্দিবাদী কট্টর হিন্দুত্ববাদের বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমাদের বিদেশনীতিতেও। সম্প্রতি আরএসএস-ব্যাকড একটা অখাদ্য অনলাইনের একটি শিরোনামে চোখ আটকে গেলো: বলা হচ্ছে—বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা ইসলামী মৌলবাদে আক্রান্ত, তারা পুজোর প্রসাদ প্রত্যাখ্যান করায় বিএসএফের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। BSF Has A New Headache: Bangladesh’s Border Guard Jawans Are Getting Radicalised And Refusing ‘Prasad’ শিরোনামে স্বরাজ্য নামে একটি অনলাইন পোর্টালে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

কুরবানির পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ যদি বিএসএফকে গরুর মাংস পাঠায়, তাহলে ঘটনাটা কি ঘটবে? প্রত্যেকের ধর্মীয় বিশ্বাসের যে স্বীকৃতি ভারতবর্ষ যুগের পর যুগ দিয়ে আসছে—তা কি ধরে রাখতে পারছে মোদী সরকার? যদি প্রসাদ প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটেও থাকে, এতে কি বাংলাদেশি জাওয়ানদের মৌলবাদিতা প্রতিষ্ঠিত হয়? বাংলাদেশি জাওয়ানদের গোফছাড়া দাড়ি, টাকনুর ওপরে পায়জামা দিয়ে বিজিবিকে লাদেনবাহিনী বানানোর এই চেষ্টা আসলে নিজেদের গেরুয়ামুখী মৌলবাদিতাকে বৈধ করার অপচেষ্টা।

পুজোর প্রসাদ ফিরিয়ে দেয়াটা যেমন বিজিবির কালচারাল চয়েস, গরুর মাংস ফিরিয়ে দেয়াটাও হবে বিএসএফের কালচারাল চয়েস। অপরের কালচারাল চয়েসকে সম্মান করার যে আধুনিকতার জন্য ভারতবর্ষ এতোদিন গর্ব করতো, তা এখন ধুলোয় মিশেছে। তবে এই ইসলামোফোবিয়ার উস্কানি যে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বৈকল্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই তা বোঝা যায়। এই প্রোপাগান্ডা বাংলা, আসাম আর ত্রিপুরাকে বাংলাদেশফোবিক আর ইসলামোফোবিক করে তোলার উদ্দেশ্যে, যাতে এনআরসি বাস্তবায়ন সহজ হয়।

বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক জনবিন্যাসের তুলনায় সীমান্তরক্ষীদের ভেতরে সনাতন ধর্মের মানুষ বেশি চাকরি করে; অন্যদিকে ভারতের ধর্মভিত্তিক জনবিন্যাসের তুলনায় বিএসএফের ভেতরে মুসলিম ধর্মের মানুষ কম। বাংলাদেশ সীামান্তবর্তী এলাকার মানুষ হিসেবে আমাদের উদ্বেগ আরও আছে, এই সীমান্তে বিএসএফে যারা চাকরি করছে—এদের মধ্যে বাঙালি নেই বললেই চলে। অবাঙালিরাই পাহারা দিচ্ছে বাংলা সীমান্ত।

অথচ সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল থাকার কারণে এখানে বাঙালিদেরই অগ্রাধিকার পাওয়া ছিল যুক্তিসংগত।

বাংলার সীমান্তে বাঙালিদের পোস্টিং না দেয়াটা ছিল দিল্লির প্রথম ষড়যন্ত্র। এর ফলে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি জাতীয়তাবাদের প্রচার সহজ হবে। বিজিবিকে লাদেনবাহিনী প্রমাণ করতে পারলে বাংলা, আসাম আর ত্রিপুরায় এনআরসির পক্ষে জনসমর্থন আদায় করা সহজ হবে। হিসেবগুলো গোলমেলে হলেও অতোটা কঠিন নয়।

বাংলাভাষী রাজ্যগুলোর বাঙালিদের দেশছাড়া করে এখানে হিন্দুস্তানি, মারোয়ারি, বিহারী, গুজরাতিদের লীলাভূমি বানাতে চায়৷

বেনিয়া পুঁজির বাজার ও কারখানা বানাতে চায়৷ এরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়েও বেশি ক্ষতিকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top