‘বিদেশের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আমার কাছে আসুন’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Picsart_22-05-08_22-30-47-099.jpg

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

‘বিদেশের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আমার কাছে আসুন’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি শ্রমিক নেতাদের বলব- আপনারা বিদেশের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনাদের যদি সমস্যা থাকে আমার কাছে আসবেন। আমি শুনব। মালিকদের কাছ থেকে যদি কিছু আদায় করতে হয় তাহলে আমি আদায় করে দেব। আমিই পারব। এটা আমি বলতে পারি।

মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে রবিবার (৮ মে) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে অহেতুক বিদেশিদের পিছনে না ছুটে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন একটি কারখানা যদি তৈরি হয় তাহলে মালিক সেখানে পুঁজি দেয় আর শ্রমিক শ্রম দেয়। মালিকের পুঁজি এবং শ্রমিকের শ্রম নিয়েই কারখানা চালু থাকে, উৎপাদন বাড়ে এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয়। একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সকলেরই দায়িত্ব থাকে আর সেক্ষেত্রে মালিকের দায়িত্ব থাকে শ্রমিকের ওপর অন্যদিকে শ্রমিকের দায়িত্ব থাকে মালিকের ওপর।

শ্রমিকদের কয়েক দফায় মজুরি বৃদ্ধি এবং মালিক-শ্রমিক কল্যাণে গৃহীত বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও তাঁদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা, কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে এবং জরুরি ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানে ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল’ গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে অনেক মালিকের টাকা না দেওয়াকে দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, মালিকদের যেটা এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে তারা তা এখানে জমা দেবেন। কিন্তু অনেকে তা দেন না। এটা খুব দুঃখজনক। আমি মনে করি, এটা যথাযথভাবে দেওয়া উচিত। একজন যখন বিপদে পড়ে তখন তার পাশে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, যে কারখানা পরস্পরের রুটি রুজি এবং জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে তা যেন ভাল ভাবে সচল থাকে সেটা যেমন শ্রমিকের দেখার দায়িত্ব, তেমনি শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে কিনা এবং তাদের জীবন মান উন্নত হচ্ছে কি না বা কাজের পরিবেশ পাচ্ছে কি না সেটাও মালিকদের দেখতে হবে। তাহলেই উৎপাদন বাড়বে এবং মালিক, দেশ এবং শ্রমিক সকলেই লাভবান হবে।

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে এদেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহেনতি জনতার ভাগ্য পরিবর্তনে এবং জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো- সে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের দেশকে উন্নত করার ক্ষেত্রে এই শ্রমিক শ্রেণির অবদানটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে যদি সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তবে কখনই উন্নয়ন হয় না।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক এবং বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিয়ানেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আর্দাশির কবির মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ১০ শ্রমিক পরিবারের মধ্যে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেকও বিতরণ করেন।
তাঁর সরকার শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কতিপয় শ্রমিক নেতার বিদেশিদের কাছে নালিশ জানানো প্রবনতার সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি তারপরেও আমরা দেখি যে, আমাদের দেশে কিছু কিছু শ্রমিক নেতা আছেন তারা কোন বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতা কেন, নাকি এরসঙ্গে অন্য কোন স্বার্থ জড়িত আছে, সেটা আমি জানি না। আওয়ামী লীগ যতক্ষণ সরকারে রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতক্ষণ ক্ষমতায় রয়েছেন সে সময় দেশের ভেতর শ্রমিকদের যে কোন সমস্যা তিনি সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমি এটা বিশ্বাস করি-কোন সমস্যা হলে আমাদের দেশের মালিক এবং শ্রমিকরা একসঙ্গে বসে সেটা সমাধান করতে পারেন। কাজেই কেন নিজের দেশের বিরুদ্ধে অন্যের কাছে বলতে বা কাঁদতে যাব। আমরাতো এটা চাই না। কেননা, বাংলাদেশ তার আত্মমর্যাদা নিয়েই চলবে।

শিশু শ্রম বন্ধে এই সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিশুরা শ্রম না দিয়ে তারা আগে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। শিশু শ্রম যাতে বন্ধ হয় তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদেরকে আমরা স্কুলে পড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যাপারে আমাদের যে নীতিমালা ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে কোন শিশু শ্রম থাকবে না।

তিনি বলেন, এখানে একটু ব্যতিক্রম আছে। কিছু কিছু ট্রেডিশনাল কাজ থাকে সেগুলো যদি ছোট বেলা থেকে রপ্ত না করে তবে তাদের পৈত্রিক যে কাজগুলো বা ব্যবসাগুলো সেগুলো চালু থাকবে না। কারণ, এটা হাতে কলমে কিছু শিক্ষা। কিন্তু সেটা কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নয়। কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কোন শিশুকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটা আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু তাদের যে ট্রেডিশনাল ট্রেনিং সেটা বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে তারা করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে তিনি পারিবারিক তাঁত শিল্পে জড়িত অনেক শিশুকে ছোটবেলা থেকেই কাজে সম্পৃক্ত হতে হয় বলে উদাহারণ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার এই আদর্শই তার সরকারের আদর্শ এবং এই আদর্শ নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশও একদিন ইনশাল্লাহ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।

প্রধানমন্ত্রী মে দিবস উপলক্ষ্যে সকল শ্রমজীবী মানুষকে তার অভিনন্দন জানান এবং ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে আত্মাহুতি দানকারি শ্রমিকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, তারা রক্তের অক্ষরে এই দিবসটি লিখে রেখে গেছে বলেই তাদের অবদানের জন্য শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে। কাজেই আমাদের শ্রমিক মালিক উভয়েই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন সেটাই আমি চাই।

যে কারণে এবারের মে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য- ‘শ্রমিক মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’ যথোপযুক্ত হয়েছে এবং এই প্রতিপাদ্য নিয়েই আগামীতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

– বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top