ইউ আর সি ইন্সট্রাকটরসঃ গোদের উপর বিষফোঁড়া

PicsArt_10-06-09.56.37.jpg

ইউ আর সি ইন্সট্রাকটরসঃ গোদের উপর বিষফোঁড়া

বিশেষ প্রতিবেদকঃ প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট প্রাথমিক শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং তাদের একাডেমিক মানোন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৫০ সাল থেকে। তার আগে বৃটিশ পিরিয়ডে এটি নর্মালস্কুল নামে পরিচিত ছিলো। সেখানে শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষকদের মান উন্নয়ন ঘটানো হতো। কালের অভিযাত্রায় এখন প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট নামে পরিচিত।

পরবর্তীতে ট্রেনিং এর ব্যাপকতায় প্রতিটি উপজেলায় একটি করে রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয় এবং একজন করে ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ করা হয়। যাকে বলা হয় ইউ আর সি ইন্সট্রাক্টর। এটা প্রজক্টের আন্ডারে ব্লক পোস্ট। যেহেতু ট্রেনিং সংক্রান্ত কাজ এখানে হয় সেহেতু এই পদটিকে পিটিআই সুপার এর আন্ডারে রাখা হয়। এটি একটি ব্লক পোস্ট এবং প্রজেক্ট। এ প্রজেক্ট শেষ হলে এই পদ ভ্যানিস হওয়ার কথা অথবা প্রজেক্ট রিনিউ হলে শেষ হওয়ার কথা।

কিন্তু সব হনুদের দেশে ২০১২ সালে তারা রাজস্ব খাতে ধাবিত হয়। অথচ এ পদে আসতে ইন্সট্রাক্টরদের কঠিন পরীক্ষা ফেস করে আসতে হয়েছে।

তাতে পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের মাথা ব্যথা কেন, প্রশ্ন হতে পারে! কারণ হলো পিটিআই ইন্সট্রাক্টর এমনিতেই পদোন্নতি বঞ্চিত। কারণ এক পদের বিপরীতে বহু মানুষ। গ্রেডেশন আসতে আসতে ২৮/২৯/৩০ বছর সময় লাগে। তারা এমনিতেই হতাশায় ভোগে। এখন আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া ইউ আর সি ইন্সট্রাক্টর!

যারা ব্লক পোস্টে প্রকল্পে নিয়োগ পেয়েছে তারা এখন পদোন্নতির ২০ পারসেন্ট দখল করতে যাচ্ছে। তাহলে কী দাঁড়ালো? তাদের থেকে সিনিয়রেরা ২০১২ সালে রাজস্বখাতে যুক্ত হওয়াদের অধীনে কাজ করবে? এই অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবী পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের।

প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদের পিটিআই সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে অনুপ্রবেশের বন্ধ চান পিটিআই ইন্সট্রাক্টররা। একইসাথে ইন্সট্রাক্টরদের পিটিআই সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে শতভাগ পদোন্নতির সুযোগ দিয়ে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পরিষদ।

বুধবার (৬ অক্টোবর) এ দাবিতে জেলায় জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন পরিষদের নেতারা। পরিষদের সহসভাপতি ও মুন্সিগঞ্জ পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাক্টর জনাব সাবিকুন্নাহার দৈনিক wnes360কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে প্রস্তাবিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা। এবার পিটিআই ইন্সট্রাক্টরাও প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধি সংশোধনের দাবি জানালেন।

পিটিআই ইন্সট্রাক্টর নেতারা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১ (প্রস্তাবিত)’ এর সংশোধনসহ পিটিআইতে প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করে পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো স্মারকলিপিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার দেশের ৬৭ পিটিআই থেকে একযোগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে।

স্মারকলিপিকে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও তার আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য দুইটি নিয়োগ বিধিমালা প্রচলিত আছে। একটি হলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বিধিমালা-১৯৮১ (সংশোধিত ১৯৮৯), যা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা ) ক্যাডারভুক্ত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। অপরটি হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮৫, যা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নন ক্যাডার কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বিধিমালা-১৯৮১ (সংশোধিত ১৯৮৯) বাতিল না করেই ক্যাডার ও ননক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা একত্রিত করে ক্যাডার পদকে নন ক্যাডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন করা হয়েছে, যা আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। নেতারা মনে করছেন, এতে বিদ্যমান অনেক সুযোগ সুবিধা পেতে জটিলতা সৃষ্টি করবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালা ২০২১ এ প্রশাসনিক উইং (শিক্ষা অফিস) এ ১৭৩ টি এডিপিইও পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে যেখানে থানা শিক্ষা অফিসার (ফিডার পদ ৫০৪) থেকে এডিপিইও পদে শতভাগ পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের ক্ষেত্রে ১৩৪টি পদের বিপরীতে ৮০ শতাংশ সরাসরি পদোন্নতির বিধান রাখা হয়েছে এবং বাকি ২০ শতাংশ পদে পিটিআই বর্হিভূত ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদের অনুপ্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন নিয়োগবিধিমালা প্রণয়ন করে ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে ওই পদে পদোন্নতি দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই এমনটি করা হচ্ছে বলে পিটিআই ইন্সট্রাক্টররা মনে করেছেন। এতে তারা হতাশা। বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক বলে আখ্যায়িত করছেন পিটিআই ইন্সট্রাক্টররা।

নেতারা বলছেন, কোন একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে বাইরের নন-একাডেমিক কর্মকর্তাদেরকে (যাদের একাডেমিক কাজের অভিজ্ঞতা নেই) প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে পদায়ন ও পদোন্নতি দেওয়ার নজির বাংলাদেশে নেই। প্রস্তাবিত এ নিয়োগ বিধিমালা কার্যকর হলে পিটিআইতে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে পিটিআই ইন্সট্রাক্টর হিসেবে রাজস্বখাতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে রাজস্বখাতে নিয়মিত হওয়া ১৭ বছরের জুনিয়র ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদের অধীনে চাকরি করতে হবে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্খিত। তাছাড়া ২০০৬-২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের পিএসসির সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদেরও বঞ্চনার শিকার হতে হবে যা ‘নন ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা-২০১১’ এর অনুচ্ছেদ ৪(২) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ফলে পিটিআই পরিবারে ইন্সট্রাক্টরদের ২৭-২৮ বছরেও পদোন্নতি হবে না এর ফলে তাদের মধ্যে হতাশার কারণে বিশৃঙ্খল কর্ম পরিবেশ তৈরি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top