জলের অক্ষর – শাহানা সিরাজী
জলের অক্ষর
জলের অক্ষরে লিখে যাই আঁধার ভুবনের ইতিকথা-
এ জীবনে হলো না আকাশের গায়ে উল্কি আঁকা
হলো না বৈশালী পাখায় ভর দেয়া
আহা ! নন্দন ! পাঁজর ভেদ করে জাগিনি বলে ছায়া সরিয়ে দেবে!
কুশিলব খোঁজে কোথা যাবো আর ! ফিরে আসি মেঘনার পার!
ঝাঁপ দিই অলিখিত নগরের বন্ধ-দুয়ার দ্বার!
প্রতিটি ভোরে প্রতিটি সাঁঝে অগণিত ইচ্ছা যায় মরে।
ইচ্ছার লাশ কাঁধে নিয়ে ঘুরি দ্বারে দ্বারে একটু দেবে জায়গা ?
জলের অক্ষরে লিখে যাই স্বপ্নের ইতিবৃত্ত
অগ্নিগিরিসম আগুনের গোলা গিলে গিলে ছাই হয়ে যাই
ছাই নিয়ে ফিরি দ্বারে দ্বারে
নেবে নাকি কেউ একমুঠো তার
বিনিময়ে একটু শুধু হাসি দিও
একটু শুধু কথা দিও একটু শুধু দিও সুর
মোড়ে মোড়ে দাঁড়াই কে গো তুমি ,দাঁড়াও. শোনো রজঃস্বলা নদী প্রবাহমান – চলো ভাসাবে নৌকা!
আজকাল নৌকার চল নেই জানি
তথাপিও খানিক সময় বৈঠা হাতে নিও-
জলের অক্ষরে লিখে যাই
ঐন্দ্রজালিক সূঁতোর নিষ্ঠুর বন্ধনের কথা
পুরো আকাশ কালো হয়ে কেমন ঢেকে দিলো সোনালী মাটির পৃথিবী !
আমারো সাধ ছিলো কালিজিরা ধান ফলানোর !
আমারো সাধ ছিলো ডুলো হাতে জেলের পেছনে পেছনে হাঁটার!
আমারো সাধ ছিলো এলামেলো বিলি কেটে দেয়া আষাঢ়ষ্য রাতের মাথায় !
ইচ্ছার ধুম্রজালে জড়িয়ে ক্রলিং করি-
কেউ কী আছো হাতটি ধরো- চারদিক হতে ধেয়ে আসা রাবনসেনা , চোখের পলকে মুছে দেয় পুরাতন ইতিহাস
আর্যনারী চুড়ি খুলে আঁচল উড়িয়ে সীতা সীতা চিৎকার করে!
সম্ভাবনার সমুজ্জ্বল ক্ষণ জোসেফপুত্রের নিঃশ্বাসে মিশে
হয়েছে অস্পৃশ্যা! বৃত্তের পরিধি উড়ে যায়: ভেঙে পড়ে এক এক করে ব্যাস, ব্যাসার্ধ, জ্যা-
তবুও মাথা উঁচু করে অঙ্কুর-ভাঙা মটরের মতো
নিশিগন্ধার কান্নার মতো
রজনীগন্ধার নিভৃত পতনের মতো,
চিম্বুকপাহাড়ের নীরবতার মতো
মাথা উঁচু করে বৈসাবী আয়োজনের মতো
বার বার হেরে যাবার আনন্দের মতো
কাঠঠোকরার প্রলয়ানন্দের মতো
বাড়ির আঙিনায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকা বাজপড়া নারিকেল গাছের মতো!
জলের অক্ষরে লিখে যাই
সময়ের নন্দীপাঠ হয়নি
অসময়ে ঘোরলাগা প্রণয় একাই হাসে একাই কাঁদে একাই সুর সাধে!
আছে যারা তারা ভাসে আর ভাসে
আছে যারা তারা কেবলই ইশারা আলেয়ার অনুপ্রাসে
অবিকল সামনে দাঁড়ায়
কিছুই দেখতে পাই না। একটা চোখ দেবে কেউ
দেখতে চাই হলুদমাঠ, গোলাপী গাছ আর নীল রঙের মাছ!
জলের অক্ষর –
শাহানা সিরাজী
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।