সংঘবদ্ধ চক্রের ছয় সদস্য গ্রেফতার
যাত্রীবেশে বাসে ডাকাতি করতেন তারা
অপরাধ প্রতিবেদকঃ কেউ ট্রাকচালক, কেউ-বা পোশাককর্মী, আবার কেউ অটোরিকশাচালক। তবে তারা প্রত্যেকেই সংঘবদ্ধ গাড়ি ডাকাতি চক্রের সদস্য। গত ৯ মাসে আটটি বাসে যাত্রীবেশে উঠে যাত্রীদের মালামাল লুণ্ঠন করলেও ধরা পড়তে হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। কিছুদিন পরপরই তারা পরিকল্পিতভাবে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসে ডাকাতি করে আসছিল।
সম্প্রতি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায় হানিফ পরিবহনের চালককে জিম্মি করে ডাকাতি, যাত্রীদের মালামাল লুণ্ঠন ও চালককে হত্যার ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা বাস ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রবিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ৩১ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া হানিফ পরিবহনের একটি বাস রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায় পৌঁছার পর ডাকাতের কবলে পড়ে। ঐ বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যদের ছুরিকাঘাতে বাসের চালক মনজুর হোসেন গুরুতর আহত হন। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঐ ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার মো. পইমুল ইসলাম বাদী হয়ে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ঐ ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।
চাঞ্চল্যকর এই বাস ডাকাতি ও চালক হত্যার ঘটনায় র্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। শনিবার রাতে র্যাব-১ ও ১৩-এর যৌথ অভিযানে ঢাকার আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাসহ ডাকাতির কাজে সরাসরি জড়িত নয়ন চন্দ্র রায়, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে লালু, ওমর ফারুক, ফিরোজ কবির, আবু সাঈদ মোল্লা ও শাকিল মিয়াকে গ্রেফতার করে। প্রত্যেকের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাঁচটি ছুরি, লুণ্ঠিত একটি মোবাইল ফোন এবং তাদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ বাসে ডাকাতি ও চালককে হত্যায় গ্রেফতারকৃতরা সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি র্যাবের।
যাত্রীবেশে হানিফ বাসে ওঠে ডাকাতেরা: কমান্ডার খন্দকার কাল মঈন বলেন, গত ৩১ আগস্ট রাত ৮টায় হানিফ পরিবহনের একটি নন-এসি বাস পঞ্চগড়ের উদ্দেশে গাবতলী থেকে ছেড়ে যায়। বাসটি রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভারে পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাত দলের তিন সদস্য রিয়াজুল ইসলাম লালু, সাঈদ মোল্লা ও পলাতক আরও এক সদস্য ওঠে। এরপর রাত ১০টা ৫০ মিনিটে নবীনগর থেকে ওঠে ডাকাত দলের আরও তিন সদস্য নয়ন চন্দ্র রায়, ওমর ফারুক ও ফিরোজ কবির।
বাস নিয়ন্ত্রণে নিতে চালককে ছুরিকাঘাত: বাসটি রাত আড়াইটার দিকে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড় অতিক্রম করার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রথমে বাসের চালক মনজুর হোসেনকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় চালক বাসটি ঘুরিয়ে আনার চেষ্টা করলে তারা আবার চালকের কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ডাকাত দলের সদস্য রিয়াজুল ইসলাম লালু বাসটি চালাতে থাকে এবং ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা বাসে লুটপাট করতে করতে রংপুরের শটিবাড়ী ভাবনা ফিলিং স্টেশনে ইউটার্ন করে পুনরায় উলটো পথে রওনা করে। পলাশবাড়ীতে পৌঁছার আগেই ডাকাতেরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে রাত ৩টার দিকে যাত্রীসহ বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতেরা যাত্রীদের মোবাইলফোন ও নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় বাসের চালক মনজুর হোসেনকে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তিনি সেখানে মারা যান।