আদম ৮ শাহান সিরাজী
মাটিরে পা রেখেই আদম টগবগে যুবক।
হাতের তালুতে বালি নিয়ে নতুন কোন প্রাণের সঞ্চারণে ব্যস্ত হয়ে পড়লো!
চারদিকে সিংহের গর্জন.
আদম অনুভব করে সিংহ তার ভেতরেই-
প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলো এবং গর্জন শুরু করলো!
হাওয়া আপন মনে হেঁটে বেড়াচ্ছে- ফুল-পাখি তাকে তুমুল হর্ষধ্বনিতে বরণ করে নিলো।
হাওয়া লুটিয়ে পড়লো শিউলিতলায়
বনলতায় মালা গাঁথে আর গুনগুন করে
মাঝে মাঝে দমকা বাতাসে উড়ে আসে গন্ধমের বহুজাতিক ঘ্রাণ!
সে মালা হাতে উঠে দাঁড়ায় এবং ধীরে ধীরে পা বাড়ায়
সেই কবে গন্ধম পুড়ে ক্ষীর করেছে!
মুজদালিফায় এসে ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়ে
খোলা আকাশ, ঝকঝকে আকাশে ঝলমলে তারা
তীব্রঠাণ্ডায় ঠকঠক কাঁপছে
আদম তার দীঘল পা বাড়িয়েছে শ্রীলংকার ভয়ঙ্কর অরণ্য থেকে..
হাওয়া কোথায়?
হাওয়া… হাওয়া…. হাওয়া…
কী এক বেদনায় ঈশ্বরের প্রতি রুষ্ট হয়!
কেবল হাওয়ার জন্যই স্বর্গ ছেড়েছি!
সেই রাতে আদম মুজদালিফায় কী ভাবে পৌঁছলো!ধুলোমলিন হাওয়ার গায়ে জোছনার শাড়ি
নাকে জোছনার ফুল, গলায় জোছনার হার!
অপূর্ব দ্যুতিময় হাওয়ার ঐশ্বর্য দেখে স্বয়ং ঈশ্বরই নাকাল!
আরশ থেকে নেমে এলো প্রহরী ফেরশতা
কিন্তু তাদের চোখও ঝলসে গেলো।
কী নিদারুণ বিধি
নুরের তৈরি হাত দিয়ে হাওয়াকে স্পর্শ করতে পারলো না!
অপলক চেয়ে থাকলো
এবং আদমের পথকে শর্ট করে দিলো।
মুজদালিফায় হাওয়ার পায়ের কাছেই আদম নিজেকে সমর্পণ করলো- অবশেষে তোমায় পেলাম প্রিয়তমা।
নিজের দেহের উষ্ণতা দিয়ে হাওয়ার দেহে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলো।
কোন সিলিকন প্রলেপ নিয়ে আদম এসেছে যে জোছনায় গলে গলে উত্তাপ থেকে আলো, আলো থেকে উত্তাপে হাওয়া কেঁপে ওঠে! আদম বিশাল বাহু প্রসারিত করে,
লোমশবুক উঁচিয়ে ধরে
মুজদালিফার আকাশ চাঁদোয়া হয়ে ঢেকে দেয়
ফেরেশতারা চাঁদোয়ার বাইরে ছিটকে পড়ে
হাওয়া কেবলই আদমের
আদম কেবলই হাওয়ার
ফেরশতারা বেগানা!
ভোরে আদম-হাওয়া আকাশ-চাঁদোয়ায় আরাফাতের পথে হাঁটে।
ঈশ্বর অবাক হলেন,এ আমার অপূর্ব সৃষ্টি
গন্ধমের ঘ্রাণে উম্মাতাল আদম
হাওয়ার রূপালী পোশাক উড়ে যায় নিমিষেই
মাটির কম্পনে দুটিপাতার একটি কুঁড়ি আসি আসি করছে।
শুরু হলো মানবের দোতরায় সুরের মূর্ছনা!
ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন,চলে আসো,আদমের জন্য হাওয়ার চোখই যথেষ্ঠ।
আদম তখন ততোধিক গভীরতায় আচ্ছন্ন।
ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সঁপে দিয়ে বলে
জন্ম-জন্মান্তর হাওয়াকেই কেবল চাই…
শাহান সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই মুন্সিগঞ্জ
কবি প্রাবন্ধিক কথা সাহিত্যিক