দুদকের সামনে ভুয়া দুদক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

দুদকের সামনে ভুয়া দুদক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

অপরাধ প্রতিবেদকঃ কখনো দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক, কখনো পরিদর্শক আবার কখনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল দুদকের ভুয়া কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।

দুদকের আশপাশেই ছিল তাদের আনাগোনা। এই সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য মজিবর। মজিবরের কথা অনুযায়ী জাহাঙ্গীর দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে দীর্ঘদিন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করে দুদকের নকল প্যাড বানিয়ে একটি কাল্পনিক আদেশনামা লিখে তদন্ত প্রতিবেদনে দালিলিকপত্র তৈরি করে এই সিন্ডিকেট। এই কাগজ দেখিয়েই দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে দুদকের ঝামেলায় পড়তে হবে বলেও দেওয়া হয় হুমকি।


সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে এই চক্রের ভুয়া দুদক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে সহকারী পরিদর্শক পদবির দুদকের নকল পরিচয়পত্র, দুদকের নাম ব্যবহৃত একটি চিঠি, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ধামরাই শাখার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি চেক, ডাচ্্ বাংলা ব্যাংকের একটি নেক্সাস কার্ড, সোশাল ইসলামি ব্যাংকের মানিক মিয়া স্বাক্ষরিত একটি চেক, দুইটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ জব্দ করে দুদক।

দুদকের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কথা শিকার করে জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর ঢাকার ধামরাই উপজেলার সোয়াপুর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।

জানা গেছে, প্রতারক জাহাঙ্গীর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাহহার সিদ্দিককে দুদকের উপপরিচালক ফয়সাল পরিচয়ে ফোন করে জানায়, তার নামে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে তিনি আছেন (ফোন করা ব্যক্তি)।

সোমবার সকালে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে। অন্যথায় অসুবিধা হবে। সঙ্গে করে কিছু টাকা পয়সা দিলে অভিযোগটি শেষ করে দিবেন। গতকাল ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান আব্দুল কাহহার দুদকের সামনে এসে জাহাঙ্গীরের নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখা করেন। এ সময় জাহাঙ্গীর নিজেকে দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে দুদকের নাম ব্যবহৃত একটি চিঠি ধরে দেন এবং বলেন এই চিঠির তদন্ত প্রতিবেদন তিনি প্রদান করলে সমস্যা হবে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে আব্দুল কাহহার দুদকের ভেতরে প্রবেশ করে দায়িত্বদের সঙ্গে আলাপ করেন আব্দুল কাহহার। পরে জানতে পারেন তিনি প্রতারকদের ক্ষপ্পরে পড়েছেন। পরে দুদক সদস্যরা দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই প্রতারককে আটক করে।

চেয়ারম্যান আব্দুল কাহহার সিদ্দিক বাংলাদেশের আলোকে বলেন, তাকে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দিয়ে ঢাকায় আসতে বললে তিনি ঢাকায় এসে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তার সন্দেহ হলে দুদকের ভেতরে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের অবগত করেন। এরপর দুদকের উপসহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে দুদকের নিরাপত্তারক্ষী আক্তারুজ্জামান, মুকুল মিয়া ও মুখলেছুর রহমানের সহায়তায় ভুয়া দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী জাহাঙ্গীরকে আটক করা ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে দুদকের সহায়তায় ডিএমপির রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক জানায়, পূর্বেও একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বেশ কিছু প্রতারককে গ্রেপ্তার করে দুদক। এরপর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দুদক থেকে সর্বসাধারণকে সচেতন করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি কমিশনের কর্মকর্তা কিংবা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে টেলিফোন করে বা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কমিশনের কর্মকর্তা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বজন পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কোনো বিষয়ে তদবির করে, তাহলে টেলিফোনের সত্যতার নিশ্চয়তা এবং প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক দুদকের পরিচালক (গোয়েন্দা) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী (মোবাইল নং- ০১৭১১-৬৪৪৬৭৫) অথবা দুদকের কল সেন্টার ১০৬ এ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top