রাষ্ট্রায়ত্ত এক বিশেষায়িত ও চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকার অনিয়ম

PicsArt_08-09-11.15.50.jpg

অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ইনসেনটিভ বিতরণ

রাষ্ট্রায়ত্ত এক বিশেষায়িত ও চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকার অনিয়ম

অর্থনৈতিক প্রতিবেদকঃ দেশের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের ইনসেনটিভ বোনাস বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হিসাবের মারপ্যাঁচে আয় দেখিয়ে এসব ব্যাংক কর্মীদের প্রণোদনা ভাতা দিলেও কার্যত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা সঙ্গিন। এমনকি লোকসানি হয়েও ইনসেনটিভ বোনাস প্রদান কতোটা যৌক্তিক—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু কমিটির কাছে ব্যাংকগুলোর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়নি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানায়, উল্লেখিত ব্যাংকগুলোর ইনসেনটিভ বোনাসের বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ব্যাংক মুনাফা করলেই তো বোনাস দেওয়ার বিষয়টি আসবে। কিন্তু সে রকম কোনো তথ্য তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে নেই। তবে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক বলেছে, তাদের সংঘবিধি এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়েই কর্মীদের মধ্যে প্রণোদনা ভাতা বিতরণ করা হয়েছে।

যেসব ব্যাংকের ইনসেনটিভ বোনাস নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) লিমিটেড। এসব ব্যাংকের ইচ্ছেমতো ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও উদ্বেগ প্রকাশের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অতিরিক্ত সচিবদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি ঐ চার ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ তদন্ত কমিটির কাছে তাদের ব্যাখ্যা প্রেরণ করেছে। তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষেই ইনসেনটিভ বোনাস বিতরণের কথা বলা হয়।

বিডিবিএল তাদের ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৯৭৫ সালের ৩০ মে তারিখের এক সার্কুলারের বরাত দিয়ে বলেছে, বিডিবিএলের কর্মী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনসেনটিভ বোনাস প্রাপ্য হবেন। তবে প্রধান নির্বাহীর ইনসেনটিভ বোনাস ১০ লাখ টাকার বেশি হবে না। প্রতিষ্ঠানটির সংঘবিধি অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ সন্তুষ্ট হলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ উত্সাহভাতা দিতে পারে।

আলোচ্য ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা সঙ্গিন। নিয়ম অনুযায়ী, ভালো মুনাফা করলে কিংবা কোনো কর্মীর পারফরম্যান্সের ওপর তাকে প্রণোদনা ভাতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সবাইকে প্রণোদনা ভাতা দেওয়ার যৌক্তিকতা প্রশ্নসাপেক্ষ। তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তথা সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক ২০১৯ সালে নিট লোকসান গুনেছে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঐ বছরেই চারটি ব্যাংক ৪৩৭ কোটি টাকা ইনসেনটিভের নামে কর্মীদের দিয়েছে। এই চারটি ব্যাংকে প্রায় ৪৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতিও প্রবল। খেলাপি ঋণের সিংহভাগই এসব ব্যাংকের। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্সসহ নানা জালিয়াতির ঘটনায় আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। গ্রাহকসেবা থেকে শুরু করে ঋণ বিতরণেও নানা অনিয়মের অভিযোগ পুরনো। এমনকি করোনা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গড়িমসির অভিযোগও রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করে শুধু বড়দের সন্তুষ্ট করতেই এসব ব্যাংকের আগ্রহ বেশি ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top