ঈশ্বরের মুগ্ধতা এবং দেবীর কান্না – শাহানা সিরাজী

PicsArt_05-08-12.33.53.jpg

ঈশ্বরের মুগ্ধতা এবং দেবীর কান্না – শাহানা সিরাজী

বিষন্ন শাহানা বসে আছে ধলেশ্বরীর পারে। ও নদী, কতো আর আছড়ে পড়বে ! কতো আর ভাঙবে! আর যে নিতে পারছি না। এ দুনিয়ার এতো রঙ্গো কী ভাবে তুমি হজম করো! তার স্বগোতোক্তিতে হেসে ওঠ পাগলা ফারুক। হি হি হি হো হো হো বাড়ি বাড়ি লুকিং করি , লুকিং করি বিউটি , সুযোগ পেলে টাচ করি এটাই মাই ডিউটি। ওরে বাপরে! শাহানা চমকে ওঠে। ফারুক থামে। সারা দুনিয়ায় তোলপাড় হচ্ছে পরীমণিকে নিয়ে। হি হি হি… ঈশ্বর নিজেই পরীমণির প্রেমে দিওয়ানা। আহা রূপ! আহা নারী! শাহানার ঘুম ভাঙে। ফারুক কোনো ম্যাসেজ দিয়ে গেলো নাকি! খানিক বাদেই দেখা গেলো এক নারী সন্তান সম্ভবা। একা একা কাতরাচ্ছে আর হেঁটে আসছে। পাগলা ফারুক ছড়ি ঘোরাচ্ছে আর ধপধপ হাঁটছে। গায়ে পোশাক বলতে এক টুকরো লেংটি। একটা জামা কাঁধে ঝোলানো, হাতে একটি ছড়ি। ফারুককে দেখে নারী ভীত সন্ত্রস্ত হলো এবং হাউমাউ কান্না শুরু করলো। ফারুকের ছড়া কাটা থেমে গেলো। সে অবাক হয়ে সে নারীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তার এমন তাকানো দেখে যে কোন সংবেদনশীল মানুষের কলিজা কেঁপে উঠবে। শাহানা নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভুলে সে দিকে তাকিয়ে রইলো । ফারুক নিচু গলায় বললো, কেঁদো না নারী। তুমি কাঁদলে পৃথিবী দুঃখ পাবে। কেঁদো না । ফারুক নারীর দিকে এগিয়ে যায়। নারী ভয়ে আতঙ্কে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফারুক কাছে গিয়ে হাঁটুমুড়ে বসে পড়লো, ‘ক্ষমা করো নারী আমি পারিনি তোমায় ঘর দিতে, নিরাপত্তা দিতে। আমার ব্যর্থতার জন্য আমিই দায়ী।’ যেন কতো জনম ধরে সে তাকে চিনে! যেন সে নারী তার ঘরেরই কেউ। নারীকে হাত ধরে তোলার চেষ্টা করলো। তার চোখের জল নিজের ময়লা জামায় মুছে দিয়ে বললো, তুমি মা, তুমি শ্বাশত সুন্দর। কে তোমায় কাঁদায়! তারপরই আবার তার নিজের ফর্মে গিয়ে চিৎকার করে ‘ঈশ্বর যার প্রেমে মত্ত সে কেন কাঁদে!’ যথারীতি ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়। শাহানা তাজ্জব হয়ে ফারুকের কান্ড দেখে তবে কী সে পাগল নয়? বহুকাল আগে কমলা নামের মেয়েটিকে সে ভালোবেসে ছিলো। কিন্তু কমলা তাকে পাত্তাই দেয়নি। একজন উচ্চ শিক্ষিত ফারুক কমলা কমলা করেই পাগল হয়ে গিয়েছে। কমলা ফিরে এলে সে কী আবার সুস্থ হবে! যে দিন কমলা শুনেছে ফারুক তার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েই পাগল হয়েছে সেদিন কমলার কী অনুভূতি ছিলো? শাহানা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ফারুক কিছুক্ষণের জন্য হুঁসে ফিরলো কেন? এই নারীর সাথে তার কমলার কোন মিল আছে ? নাকী তার কান্নার কাছে পরাভূত হলো! নারীর চোখের জল বড়ো অস্ত্র। এ জল যুদ্ধ বাঁধাতে পারে!

এদিকে নদীর পাড়ে সবার মুখেই এক কথা পরীমণির কী শক্তি সাদেক-আশেক- বজলু- ফজলুর মতো ব্যবসায়ী এবং চিত্র পরিচালক সবাই কাবু তার কাছে! তার জন্য সবাই কোটি কোটি টাকা দেদারসে ঢালছে ! এমনকি ডিবি-পুলিশ সবাই তার জন্য উন্মাদ! কী আছে পরীমণির ভেতর!চারদিকের ঝাঁঝালো শব্দে শাহানা অস্থির। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই!

সে ভাঙছে কাঁদছে। তার অসহনীয় জীবন তাকে বার বার বলে দিচ্ছে ঝাঁপ দাও ধলেশ্বরীর ভরাজলে। উথালপাথাল ডেউয়ের মাঝে হারিয়ে যাও কিন্তু এক স্বাপ্নিক জীবন তাকে আহ্বান জানায় না না তুমি ইশ্বরের অনন্য সৃষ্টি। তোমার মাঝেই ইশ্বরের প্রতিরূপ । পাগলা ফারুক বোঝে তুমি বোঝো না! শাহানা বিভোর নিজের ভেতর ঠিক তখনই তার ভেতর বাজতে থাকে অচেনা এক সুর। ঐন্দ্রজালিক সে সুরের ভেতর দেখতে পায় পৃথিবীতে কে বেশী শক্তিশালী এবং কেন?

নদীর পাড়ে মাঝিরা কেউ নৌকা নিয়ে ব্যস্ত কেউ মাছ ধরায় ব্যস্ত বটে তাদের বিক্ষিপ্ত আলোচনাগুলো শাহানাকে বৃষ্টির শলাকার মতো বিঁধছে। কেউ কেউ মোবাইল হাতে পরীমণিবিষয়ক নানান খবর স্পিকার অন করে শুনছে এবং হাসছে। পাগলা ফারুক আবারো এসেছে। একজনের পাশে দাঁড়িয়ে বললো, কী রে ঈশ্বরের প্রেম নিয়ে কী খেলা খেলছিস! সবাই তাকে দূর দুর করে তাড়িয়ে দিলো। একমাঝি বললো, ‘আরে ভাগে পেলে তুমিও ছাড়তা না, যে একখান সুন্দর মুক! এমন মুকোর দিকে চাইয়া জীবন কাটানো যায়’ । শাহানা ভাবে মানুষ কতো বিচিত্র। নর-নারী সৃষ্টির যে মিথ সেখানেই তো ইশ্বর নরকে করেছে পরাভূত! সেখানেই দেখিয়েছে নর নারীর হাতের পুতুল। যেমনি চালাবে তেমনিই চলবে। গন্ধম তো আদম না খেলেই পারতো! খেলো কেন? তার কী বুদ্ধি বিবেক নেই? নারীকে ঈশ্বর দিয়েছে এমন এক শক্তি যে শক্তির কাছে নরের দৈহিক শক্তি কিছুই না। ঢাল তলোয়ার সবই অকার্যকর! নারীর শক্তি পাহাড়ের মতো, সাগরের মতো, আকাশের মতো বিশাল। নারীকে তুমি এক ইঞ্চি দিলে দশ ইঞ্চি পাবে। এখন তোমাকেই হিসেব করতে হবে ওই এক ইঞ্চি ভালো দেবে নাকি খারাপ! একবার তুমি তার দিকে তাকিয়ে হাসো সে দশবার হাসবে । একবার তীর ছুঁড়ে দেখো সে এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে দেবে। এটাই নারীর শক্তি! এখানেই ইশ্বরের নীরব খেলা। যতোই স্বর্গ নরকের গল্প বানাও নারী ছাড়া সব বিফল। নারীর উপর চড়াও হও? কারণ নারী সে সুযোগ দেয়। পরীমণিকে বাঁচানোর জন্য কোন না কোন নর দাঁড়াবেই। কারণ ওটাই তার ঐশ্বরিক শক্তি। শাহানা ভাবে সে এতো শক্তিশালী অথচ কোন এক অভাগা তাকে কী বললো তার জন্য সে মরতে বসেছে!

মাঝিদের পরীমণি ভাবনা এখনো চলছে- এবার তারা অতি মানবিক হয়ে উঠেছে, একজন বললো, ‘দেখ মাইয়াডার বাপ মা নাই, নানা-নানীর কাছে মানুষ অইছে। হে কোন বরিশালে বাড়ি। তারে এ ঢাকা শহরে কে আইনলো?কে তারে এতো টাকার ভেতর ঢুকাইলো! অহন মাইয়াডার দোষ অইলো! এমন চান্দের লাহান মুক নীল কইরা দিলো! ক দেহি ডিবি , পুলিশ ব্যবসায়ী সবাই নাকী মাইডার লগে আনন্দ কইরছ। অহন মাইয়াডার দোষ ওইছে।’

শাহানা ভাবে হাওয়ার মন চেয়েছে গন্ধম খেয়েছে আদম কেন নিজেকে রুখতে পারলো না! যে শক্তির বড়াই করে নারীকে তুচ্ছ করো সে শক্তি মিছে। কোন না কোন নারী তোমার লাগবেই। কাম শক্তি থাকলে এক রকম নারী না থাকলে অন্য রকম নারী । নারী লাগবেই। জগতে কোথা কী আছে নারী ছাড়া! দিন শেষে নারী ছাড়া আর কোশায় পাও শান্তি! সারা দিনের সকল কাঝে সকল খেলায় নারীই কেন্দ্র বিন্দু তবুও নারীকেই বলো বেশ্যা। আর কতো কাল মিথ্যের কাছে নিজেদের লুকাবে?

এ পৃথিবী ছিলো একদা অলস লোকের আখড়া। তারা খেতেও পারতো না। কারণ প্রয়োজন ছিলো না। একদিন ইশ্বরের ঘুম ভাঙলো । সকল সৃর্ষ্টিকে ডেকে বললো, এই তোরা সবাই ঘুমিয়ে থাকিস কেন? তোদের কাজ কাম নেই? সবাই এক যোগে বললো, আপনি আমাদেন কোন কাজ দেননি। আমরা কী করতে পারি! ঈশ্বর বললো, আগামী শনিবারে সবাই চতুর্থ আসমানে আসবে । সবাইকে কাজ ভাগ করে দেবো। সকল দেব-দেবী অবতার যথাসময়ে এলেও সুন্দরী তন্বী কামদেবী আসতে বিলম্ব করলো। তার সাজগোজেই বেলা গেলো! ঈশ্বর যথারীতি সবার মাঝে শৌর্য –বীর্য –প্রাচুর্য বিতরণ করে শেষ করলো। সবাই যার যার শক্তি নিয়ে আসর ছেড়ে মর্তালোকে নেমে এলো এবং কাজে নিমগ্ন হলো। ঈশ্বর আরাম করবে বলে ঠিক করলো এমন সময় ভূবনভোলানো হাসি নিয়ে কামদেবী উপস্থিত হলো। বললো, হে ঈশ্বর আমার শক্তি কোথায়? আমাকে আমারটা দাও। ঈশ্বর বললো, তুমি লেট কামার! তোমাকে কিছুই দিতে পারবো না। সব কিছু সবাইকে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দেবী নাছোড়বান্দা কিছু না নিয়ে সে যাবেই না। তুমি ঈশ্বর , তোমর ভাণ্ডার অফুরন্ত। তুমি চাইলে দিতেই পারো। তুমি মালিক । মালিক চাইলে দিনকে রাত, রাতকে দিন করা যায়ই। বিরক্ত হয়ে ইশ্বর বললো, কী চাস তুই? দেবী যা বললো ঈশ্বর লিস্ট চেক করে দেখলো তা আগেই দেয়া হয়ে গিয়েছে। পর পর দেবী অনেক কিছুই চাইলো কিন্তু সব আগেই বিলিবন্টন শেষ । এবার ঈশ্বর বললেন, যা তোর যা আছে তাই তোকে দিলাম। সে বললো, আমার কী আছে ঈশ্বর? ইশ্বর বললো, তোর রূপ আছে তোকে তাই দিলাম। দেবী বলেলো, তুমি আর আমাকে দিলেই বা কী ! আমার রূপ যা আছে তাই তো আছেই। এর বেশি কিছুই তো চোখে পড়লো না! ইশ্বর বললো যা এখন আরাম করতে দে। কামদেবী বললো,একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি। এই বলে সে গেলো বুশসেনাবাহিনীর কাছে । বুশসেনারা সাদ্দ্দামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে এবং জুনিয়র অফিসারদেরকে সেনাপ্রধান ডিরেকশান দিয়ে যাচ্ছে । এমন সময় সেনাপ্রধান লক্ষ্য করলো কেউই তার কথা শুনছে না। ব্যাপার কী ! চিন্তিত হলো সেনাপ্রধান। দেখলো এক রূপবতী নারী পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। কী অপূর্ব সে রূপ! যার আলোচ্ছটায় চারদিক আলোকিত হয়ে আছে। দুধের মতো সাদা ফুলের মতো পেলব তার সৌন্দর্য । সেনাপ্রধান নিজেই অস্থির হয়ে উঠলো এবং সে নারীকে কামনা করতে লাগলো। সে নারীকে নিয়েই সেখানে যুদ্ধের ঢামাঢোল বেজে উঠলো। ইরাক আক্রমণ তুচ্ছ হয়ে মূখ্য হলো রূপবতীকে কে অধিকার করবে এই নিয়ে গোলাগুলি। সে যুদ্ধে কে জিতলো তা এখানে অপ্রয়োজনীয়। দ্রুত রূপবতী সে স্থান ত্যাগ করে ঈশ্বরের কাছে হাজির হলো।হাঁপাতে হাঁপাতেই বললো, ঈশ্বর তুমি ঠিক বলেছো।

ইশ্বর বললো, এবার ভাগো , আরাম করতে দাও। কামদেবী বললো মাত্র একটা শক্তি নিয়ে কিছুতেই আমি যাবো না । দেবী শুরু করলো কান্না। ঈশ্বর মিটিমিটি হাসে আর বলে যা তোকে এই কান্নার শক্তিও দিলাম। দেবী আবারো তাচ্ছিল্য করলো ‘আর কিছুই নেই হে ঈশ্বর, তোমার ভাণ্ডারে? এই তুমি দিলে! ইশ্বর বললো , হ্যাঁ এটাই তোকে দিলাম। দেবী বললো, আমি ফেরা পর্যন্ত জেগে থাকো।

দেবী এবার গেলো সিরাজপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখে কুলখানির যেয়াফত হচ্ছে। দেবী একজনের প্লেট কেড়ে নিয়েই কান্না জুড়ে দিয়েছে। যারা খাবার দিচ্ছে তাদের একজন তার কাছে এগিয়ে এসে কান্নার কারণ জানতে চাইলো, সে বললো, ওই যে দেখেন বিধবা মহিলা নিজের খাবার খেয়ে আমারটাও খেতে চায়। আমাকে দিতে চাচ্ছে না বলেই চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে গেলো। কান্নার তোড়ে সারা মুখ লাল হয়ে গেলো। তাই দেখে লোকটি বিধবা মহিলাকে কটু কথা শুনিয়ে খাবারের আসন থেকে তুলে দিলো এবং দেবীর পাতে আরো খাবার দিলো।

তৎক্ষণাৎ দেবী ঈশ্বরের পায়ের কাছে এসে উপুড় হয়ে বললো অনেক কৃতজ্ঞতা তোমার কাছে কিন্তু আর একটি শক্তি না দিলেই নয় । আমি যাবোই না। ইশ্বর পড়লো বিপদে! তার দেয়া শক্তি দিয়েই তাকে কাবু। দেবীর সে কী কান্না! ঈশ্বর তার দিকে তাকাতে পারছে না। লাল টকটকে হয়ে আছে। ঈশ্বর নিজের জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো দেবী অমনি তার সামনে গিয়েই কান্না শুরু করে। আবার ইশ্বর সরে দাঁড়ায় দেবীও আবার সামনে দাঁড়ায়। এবার ঈশ্বর বললো যা তোকে এটাও দিলাম । ছলাকলা এবং দরজা বন্ধ করে দেয় যাতে সে আর প্রবেশ করতে না পারে।

দেবী মর্তালোকে এসে প্রথমেই পড়ে সাকলাইনের সামনে। অমনি শুরু করে কান্না। আমারে বাঁচাও । ওরা আমার সাথে অন্যায় করেছে। আমাকে তারা অত্যাচার করেছে। সাকলাইন তার রুপ দেখে ও কান্না শুনে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। গাড়ির হুইল থেমে যায়, স্টিয়ারিং কোন দিকে ঘোরাবে ভুলে যায়। ফলে জ্বলন্ত উনুনের সামনেই ব্রেক কষে এবং ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনে। এ আগুনে সাদেক- বজলু –হিরণ-কিরণ –মীরণ-চয়ন সবাই পুড়লো। ওরা কখন ঝাঁপ দিলো কেউই টের করতে পারলো না!

দেবী ছাই হাতে উড়তে শুরু করলো এবার কাকে পোড়াবে এই নিয়ে তার ভাবনা নেই। যারা পোড়ার তারা ঠিকই ব্রেকফেল করে হাত পা ভাঙবে, আইসক্রীম খাবে! দেবী তখনো নীল আলোয়ান উড়িয়ে উল্কার মতো ধেয়ে আসবে এ পৃথিবীর পুতুলদের নাচাতে। কারণ পুতুলদের নিজের বুদ্ধি-বিবেক সব লোপ পায় আগুনের সন্ধান পেলে! এ আগুন ভিসুভিয়াসকে হার মানায় ! এ আগুন জাহান্নামকেও বৃদ্ধা আঙুলি দেখায়! এ আগুনে পোড়ার স্বাদই ভিন্ন। এখানে পুড়তে পুড়তেও সাঁতার কাটা যায়!

দেবীর এ শক্তি ঈশ্বর প্রদত্ত। যারা শৌর্য –বীর্য –প্রাচুর্য চেয়েছো তারা তাই পেয়েছো। ক্ষমতা থাকলে দেবীর ক্ষমতাকে উপেক্ষা করো। তাই তো নারীর জন্যই প্রাসাদ গড়ো, হীরে -গয়না-গাড়ি-বাড়ি কতো কী বানাও তবুও সে দেবীকেই আবার অপমান করো। সে দেবীকেই আবার ঘর ছাড়া করো, জেলে ভরো জরিমানা করো! দেবী তেমনই আছে যেমন ঈশবর তাকে ক্ষমতাবান বানিয়েছে। পারলে ঈশ্বরের কাছে ফেরত যাও জিজ্ঞেস করো, এ ক্ষমতা তাকে কেন দেয়া হলো? কেন ট্রয় নগরী ধ্বংস হলো? কেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলো?
পাগলা ফারুক আবার উপস্থিত হয়েছে দে দে আমার কমলাকে ফিরিয়ে দেয়। কমলা, কমলা ,কমলা জপ করতে করতে ছড়ি ঘোরায় । চিৎকার করে ‘যার প্রেমে ঈশ্বর মত্ত তারে আমি কী ভাবে ভুলি!’
মাঝিরা তখনো পরীমণির রূপের মোহে ঘুরপাক খাচ্ছে। ‘যার দেহে এতো আগুন তার জন্য সবাই পাগল অইতেই পারে!’ মাঝিদের কথার তালে তাল মিলিয়ে ধলেশ্বরী তেমনই ছলাৎছলাৎ প্রবাহিত হচ্ছে। যেন বলেই যাচ্ছে নদীর কাজ প্রবাহিত হওয়া। যতোক্ষণ জল আছে নদীতে মাঝি আছে ঢেউ আছে। জলবিহীন নদী তো মরা। কে যায় সেখানে কাদাজল খেতে!

শাহানার এতোক্ষণে হুঁস ফিরে। এখনো এখানে! তাকে যে ডানা মেলতে হবে ! আজ যে তার কাছে আহূতি দেবে এক বীর্যবান!

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top