এমপি-মন্ত্রীদের মান-ইজ্জত, কর্তৃত্ব রক্ষা বনাম আমলাতন্ত্র – হাসান জাভেদ
২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, ”সংসদ সদস্যদের মান-ইজ্জত রক্ষা করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, তাতে তাদের মান-ইজ্জত থাকে না। এগুলো ঠেকাতেই এ আইন করা হয়েছে।”
ওই বছরই সাংবাদিকদের কাছে ‘কালো আইন’ নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাশ হয়।
তৎকালীন মন্ত্রীর কথায় আমিও একমত। আমি একজন সাধারন মানুষ। আমি বা আমাদের ভোটে এমপিরা নির্বাচিত হন। তাদের ইজ্জতই যদি না থাকে, আমার শরীরে তো লুঙ্গি থাকার কথা না।
২০২০ সালে করোনা এলো, সরকারের পক্ষ সারাদেশে সাধ্যমত চাল বা ত্রান সামগ্রী দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কোন কোন জায়গায় চুরির চিত্রও উঠে আসে। আমার জন্মস্থানে খাটের নিচে সয়াবিন তেলের ‘খনি’ উদ্ধার হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বার কর্তৃক গরীবের চাল-তেল চুরি সহ ত্রানে অনিয়ম/অব্যবস্থাপনা ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোয় রিপোর্ট হয়। কেউ কেউ আমার মতো দৈনিক ফেসবুকে লিখেছেন।
এতে গাত্রদাহ হয় জনপ্রতিনিধিদের। গত একবছরে জামিন অযোগ্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ১৩৩টি মামলা হয়ে, আসামিদের অধিকাংশই সাংবাদিক, ব্লগার, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট।
ওই মামলায় লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যান, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন কার্টুনিস্ট কিশোররা। রোজিনা ইসলামের কথা নাই বললাম।
তবুও ভাল চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ওপর দিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের মান-ইজ্জত রক্ষা পেয়েছে। এও দেখা গেছে, অনেক এমপি-মন্ত্রী/তাদের ছেলে-মেয়েও নিজ এলাকায় সুষ্ঠভাবে ত্রান বণ্টন করেছেন।
অন্যদিকে করোনা মহামারীর ত্রানের সুষ্ঠ বণ্টনে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলায় একজন করে সচিবকে প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর চুরির খবরের সূচকও অনেকটা কমে আসে।
কতিপয় জনপ্রতিধিরা জনগণের সম্পদ চুরি করেছেন বলেই তো আমলাদের হাতে কর্তৃত্ব গেছে। আর তাদের নিয়ন্ত্রণ তো প্রধানমন্ত্রীই হাতেই রয়েছে। তাহলে মান-ইজ্জত রক্ষার বদলে কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন করে গাত্রদাহ কেন?
হাসান জাভেদ
সাংবাদিক ও লেখক।