পলাশী দিবসের আলোচনা সভা – দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই
বিশেষ প্রতিবেদকঃ পলাশী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, পলাশীর ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চলছে। ভিনদেশের অঙ্গুলি নির্দেশে চলছে আমাদের দেশ। বিদেশীরা আজ সরকারকে ক্ষমতায় বসায় ও সরকার উৎখাত করে। তাই সকল জাতীয়তাবাদী ইসলামিক মূল্যবোধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আজ বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঐতিহ্য সংসদ আয়োজিত “আর কোন পলাশী নয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব বলেন।
সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক। বিশিষ্ট কবি. গবেষক ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, দৈনিক দিনকাল সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম, সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট জালাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন
মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক বলেন, এখনো ভিন্ন নামে মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎশেঠরা দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা আর ন্যায্যপ্রাপ্তি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। পলাশীর ইতিহাস তাই আমরা ভুলে যেতে পারি না। পলাশী ফিরে আসে বারবার নতুনরূপে।সুতরাং আমাদের সজাগ ও তৎপর হতে হবে। যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাতন্ত্র্য সুরক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন,বাংলাদের ট্রাজেডি এই যে, প্রচ- ক্ষমতালোভী ও জাতীয়তাবিরোধী মীর জাফরের প্রেতাত্মারা বারবার গোর থেকে উঠে আসে। ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের উত্তরসূরীরাও একই আচরণ অব্যাহত রাখে। তারা এ দেশকে ‘কলোনি’ বানাবার স্বপ্নে বিভোর। তাই পলাশীর চেতনার নির্যাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন,১৭৫৭ সালের ২৩ জুন স্বদেশী ক্রীড়নকদের নীলনকশায় পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য দুইশত বছরের জন্য অস্ত যায়।মীরজাফরদের মতো বিশ্বাসঘাতকরা এখনো আমাদের চারপাশে রয়েছে।তাদের কবল থেকে দেশকে রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষায় আদর্শবান হতে হবে।
আমাদেরকে অর্জন করতে হবে জাতীয় ঐক্যের শক্তি। নিজেদের মধ্যে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদকে ভুলে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশপ্রেমকে শুধু জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না।
সদাসর্বদা আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে হবে। প্রিয় জন্মভূমিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের থেকে মুক্ত রাখতে হলে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক নাগরিক গঠনের লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলে আর কখনো মিরজাফররা সফল হবে না।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, পলাশীর ট্রাজেডি আমাদের জাতীয় জীবনে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। দেশীয় গাদ্দারদের বিশ্বাসঘাতকতা, ইংরেজ বেনিয়াদের চক্রান্ত ও জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবে দুইশত বছরের জন্য বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। এর মাধ্যমে সোনার বাংলাকে গোরস্তানে পরিণত করা হয়েছে। পলাশীর ঘটনা আমাদের জাতিসত্তার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র এখনো চলমান আছে। পলাশী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের জাতিসত্তার বিরুদ্ধে চলমান সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানেও মীর জাফরদের কারণে দেশবাসী অধিকার বঞ্চিত হয়েছে।দেশে গণতন্ত্র নেই। বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন হচ্ছে। সীমান্ত নির্বিচারে মানুষ হত্যা হচ্ছে কোনো প্রতিবাদ নেই। এ ঘৃণিত মীর জাফরদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা একটি জাতির বড় সম্পদ। জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবেই ১৭৫৭ সালের পরাজয়ের বিভিন্ন সময়ে আমাদের নিগৃহীত হতে হয়েছে। বর্তমান সময়েও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিনাবিচারে মানুষ হত্যার উৎসব চলছে। জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে এটাই হোক পলাশী দিবসের অন্যতম শিক্ষা।