শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জাতীকে মেরুদণ্ডহীন করে দিচ্ছে – জাফরুল্লাহ চৌধুরী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে রেখে জাতীকে মেরুদণ্ডহীন করে দিচ্ছে – জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বিশেষ রিপোর্টঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে রেখে জাতীকে মেরুদণ্ডহীন করে দিচ্ছে উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নেবে কিন্তু হল খুলবেন না। এর থেকে বড় ভুল হতে পারে? ছাত্ররা কি মাঠে থাকবে? মাটিতে বসে থাকবে?

শনিবার (১৯ জুন) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘শিক্ষক-কর্মচারী-অবিভাবক ফোরাম’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সংসদে পরীমনি নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু শিক্ষা নিয়ে একটা কথাও হয় না। এই লজ্জা আমরা কোথায় রাখি? এই ভুলের সংশোধন কীভাবে হবে? এই ভুলের সংশোধন তারা (সরকার) করবে না। বর্তমান সরকার বিনা ভোটের সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার। এই সরকারের সকল সিদ্ধান্ত ভুল হবে, এটায় স্বাভাবিক। আজ সব কিছু খোলা। বাজার খোলা, ব্যাংক খোলা, অফিস খোলা। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।

তিনি বলেন, আগে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা পেত। আমাদের আমলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মাত্র ৮ জন ঢাকা শহরের ছিলাম। বাকি সবাই গ্রাম থেকে এসেছিল। তারা আমাদের থেকে পরীক্ষায় ভালো ভালো করতেন। আজ সেই সুযোগ নেই।

শিক্ষক-কর্মচারী-অবিভাবক ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহাসুল হক মিলন, লেবারপার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, মৎসজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবদূর রহিম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, কৃষক দলের মিয়া মো. আনোয়ার, মানুষ বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শিক্ষকরা রিকশা-ভ্যান চালাচ্ছেন জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘শিক্ষার চূড়ান্ত অপমান এ রকম করে হচ্ছে। তারা (সরকার) বসে বসে ডুগডুগি বাজায়! আমরা তো উন্নয়নের মহাসড়কেই উঠে গেছি। উন্নয়ন মানেই কি মগবাজার ফ্লাইওভার?’

মান্না বলেন, ‘পত্রিকায় পড়েছি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ; কিন্ডারগার্টেন মানে একটি বিশেষ মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর একজন প্রিন্সিপাল নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল বিক্রি করে ভাড়া পরিশোধ করেছেন, এরপর গ্রামে গেছেন। গ্রামের বাজারে চা বিক্রি করছেন। লজ্জা করে না এই শিক্ষামন্ত্রীর? লজ্জা করে না এই প্রধানমন্ত্রীর?’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা… এমন কী ভ্যানগাড়ি চালায়, রিকশা চালায়- শিক্ষিত মানুষ যারা চাকরি হারিয়েছেন যাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ। গ্রাম-গ্রামান্তরে অনেক মানুষ এমন। বাংলাদেশে শিক্ষার চূড়ান্ত অপমান এ রকম করে হচ্ছে। তারা (সরকার) বসে বসে ডুগডুগি বাজায়! আমরা তো উন্নয়নের মহাসড়কেই উঠে গেছি। উন্নয়ন মানেই কি মগবাজার ফ্লাইওভার?’

‘মুরুব্বি, গার্ডিয়ান পিতা-মাতা তাদের অনেকে ফেসবুকে লিখেছে- কচি কিশোর কেবল যৌবনে পা দিয়েছে তারা অনলাইন ক্লাসের নামে, অনলাইন কাজের নামে ইন্টারনেটে ঢুকে আজ সমস্ত অশ্লীলতার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আমরা কি প্রজন্ম তৈরি করছি!’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘যারা এতদিন ধরে বললেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল করেছি এগুলো সবই ফোর-টুয়েন্টি কথাবার্তা ছিল। তার প্রমাণ- অনলাইন পরীক্ষায় কোনো গার্ড নেই। কোনো পরিদর্শক নেই। যিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন উনি বই খুলে দেখে দেখে লিখছেন, তাকে চেক দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা বহুবার বলেছি- এই সরকার দেশের ভোট নষ্ট করেছে।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দেড়শ-দুইশ পর্যন্ত মামলা আছে জানিয়ে মান্না বলেন, ‘পরিশ্রম করে করে মামলা দিয়েছে না? তাদের অবশ্য মামলা দেয়ার জন্য বুদ্ধি খাটানোর দরকার লাগে না। আমাকে যখন গ্রেফতার করল। ইন্টারোগেশন করে, জিজ্ঞেস করে খালি উল্টাপাল্টা কথা। আমি বললাম ভাই, যা জানতে চান সেটা বলেন। বলে মামলাতো সাজাতে হবে কিছু পয়েন্ট দেন। আমি বললাম- আমি যদি পয়েন্ট দেই তবে আপনারা কি মামলা সাজাবেন?’

মান্না বলেন, ‘তাদের যে প্রধান প্রশ্নকর্তা তিনি আমাকে একদিন বললেন, আপনাকে আমরা একটা মামলা দিয়েছি সেটা বিদ্রোহের, কিন্তু সেনাবাহিনীর কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন সেটা বের করতে পারিনি। আরও কঠিন একটা মামলা দেয়ার চেষ্টা করবো। পুলিশ জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে।’

‘আমি পুলিশের দোষ দেই না। পুলিশের সরদার তারে যদি বলে মিথ্যা কথা না লিখলে চাকরি থাকবে না, তো সে কি করবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় একজন বক্তা আছেন না ত্ব-হা (আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান)। তাকে অনেক দিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর এখন কোথায় পেলেন?’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা জানি একটি রাষ্ট্রকে যদি ধ্বংস করতে হয়, তবে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশের পথ রুদ্ধ করতে হবে। তাহলে আর সেই জাতি সামনে এগোতে পারবে না। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। আমি মনে করি আজকে যে কাজটা হচ্ছে সেটা আত্মঘাতী।’
‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top