বোরহানউদ্দিন বাটামারা স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগে জালিয়াতি
ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের বাটামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জসিমউদদীন হায়দারের বিরুদ্ধে।
মঙ্গল বার (২৫ মে) সকালে এমন অভিযোগ করেন ওই স্কুলের দপ্তরী আঃ রব ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ এপ্রিল বাটামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগের জন্য একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা লোক মুখে শোনা গেলেও আসলে বাস্তবে তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি জনবহুল পত্রিকায় প্রকাশ করার কথা থাকলেও পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার কৌশল হিসেবে নামসর্বস্ব কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ব্যাকডেটে পত্রিকায় প্রকাশ করে শুধুমাত্র তারা অফিস কপি হিসেবে সংরক্ষণে রাখেন। ফলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় অবৈধ সিন্ডিকেটের পছন্দের প্রার্থী ছাড়া চাকরি প্রত্যাশী কোন প্রার্থী আবেদন করতে পারেন না। নিয়োগ জালিয়াতি চক্র তাদের পছন্দ প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ দিতে তাদের সাজানো চার জন প্রার্থীকে আবেদন করানোর অভিযোগ রয়েছে। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আব্দুর রব কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি শিক্ষকদের মুখে শুনে তার ছেলে শরীফকে দিয়েও একটি আবেদন করান।
গত ৩ এপ্রিল কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগের জন্য জসিম উদ্দিন হায়দারকে নিয়োগ কমিটির সভাপতি, স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমানকে সদস্য সচিব ও তজুমুদ্দিন ফজিলাতুন্নেছা মহিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিল্লাল কে ডিজির প্রতিনিধি, বোরহানউদ্দিন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার বিশ্বাস সদস্য, গঙ্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র দে সদস্য করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে নিয়োগ কমিটি করা হলেও স্কুল কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন হায়দার এর নির্দেশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা না নিয়ে স্কুল সভাপতির বাসায় অর্থ লেনদেন করে সিন্ডিকেটের পছন্দের প্রার্থী সৌরভকে নিয়োগের বন্দোবস্ত করেন। অপর দিকে এই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আঃ রবের ছেলে শরিফ সিন্ডিকেটের পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে রাখা হয়নি তাকে। অবৈধ ভাবে নিয়োগ-প্রক্রিয়ার এই খবর অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষেভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন বলেন, বড় মানিকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকে একের পর এক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। অবৈধ ভাবে নামসর্বস্ব আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অফিস কপি সংরক্ষণ করে কয়েক ধাপে কাব্যত্বত্ত, লাইব্রেরিয়ান, কৃষি ও বিএসি শিক্ষক অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
স্কুলে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়নি কখনো।
তাহলে কিভাবে নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয় জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। তবে স্থানীয়রা মনে করেন ক্ষমতা ও টাকার বিনিময় জসিম হায়দার অসৎ উপায়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য ও অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একের পর এক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।
স্কুল সভাপতি জসিম উদ্দিন হায়দার সরকার দলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক কর্মচারী ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা এসকল অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ বিষয়ে বাটামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী সৌরভ কমিটির সভাপতি জসিম হায়দারের পছন্দের প্রার্থী। নিয়োগের সকল নিয়ন্ত্রন তিনি করেছেন।
এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জসিম হায়দারের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার বিশ্বাস জানান, বাটামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। নিয়োগ অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় এমপি আলী আজম মুকুল স্যার আমাকে জানিয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে নিয়োগ বাতিল করে ওই স্কুলে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।