এসআইদের গুরুদণ্ড পিএসসির পরামর্শ থেকে অব্যাহতি চায় পুলিশ
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদণ্ড দিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরামর্শ নেওয়ার বিধান থেকে অব্যাহতি চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ সদর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৩০ জুলাই এসআই ও সমমানের পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। পুলিশে এসআই (নিরস্ত্র/সশস্ত্র), সার্জেন্ট ও টিএসআই পদে বর্তমানে অনুমোদিত জনবল ২৬ হাজার ৫১৫ জন। সরাসরি নিয়োগ ও বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যম পদগুলি পূরণ করা হয়। পিআরবি (পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল) অনুযায়ী এসব পদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট। দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এসআরও অনুযায়ী বর্ণিত পদগুলোতে নিয়োগ ও স্থায়িকরণের বিষয়ে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই মর্মে প্রজ্ঞাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত: বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এসআই বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এবিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, পিএসপির পরামর্শ নিতে গেলে বিভাগীয় মামলা নিস্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়।
ভুক্তভোগীরাও সিদ্ধান্ত জানার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। এতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজে জটিলতা দেখা দেয়। তাই পুলিশ বাহিনীর কাজে আরও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে আরো বলা হয়েছে, পুলিশের এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআইসহ সমমর্যাদার পদে নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থায়ীকরণ এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম জেলা বা অধস্তন অফিসের অধীনে হলে তাদের ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেহেতু পিএসসির অর্ডিন্যান্স বিবেচনায় এসআই/সার্জেন্ট ও সমমানের পদে নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থায়ীকরণ এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি জেলা বা অধস্তন অফিস থেকে সম্পন্ন হয় এবং নিয়োগকারী কর্মকর্তা পুলিশ সুপার বা সমপদমর্যাদার, যিনি জেলা বা অধস্তন অফিসের প্রধান হিসেবে কাজ করে থাকেন।
তাই এসআই বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার আওতামুক্ত থাকার আইনত স্পষ্ট সুযোগ রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক হিসাব থেকে জানা যায়, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০০-২২০ জন এসআই/সার্জেন্ট, টিএসআই বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরণ ও অন্যান্য বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড দেওয়া হয়। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট এসব সাজা দেন। সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অনেক সময় চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ, বাধ্যতামূলক অবসর বা পদাবনত মতো গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
যুগযুগ ধরে ইউনিটের পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তাগন গুরুদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আসছেন। গুরুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি নথিতে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার বিধান অনুসরণ করতে হলে একদিকে যেমন বিভাগীয় মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। এতে বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে।