লজ্জা করেনা ? – সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
স্পেনে গিয়ে মাদ্রিদের রাস্তায় বেশি “ইংলিশ , ইংলিশ” বলে হাত-পা নেড়ে কিছু বোঝাতে চাইলে, লোকজন স্প্যানিশে খিস্তি করে চলে যাবে, ধরতে পারবেন না। স্প্যানিশরা ইংরেজি তেমন জানেনা, জানার কোনো ইচ্ছেও নেই , না জেনেও খুব একটা ক্ষতি তাদের হয়নি , স্পেন ছাড়াও গোটা লাতিন আমেরিকায় ব্রাজিল ছাড়া সব জায়গায় স্প্যানিশ বলা হয়।
প্যারিসের রাস্তায় ইংরেজিতে কপচালে , নাক উঁচু ফরাসী যুবতী জাস্ট ফিরে না তাকিয়ে চলে যাবে। ফরাসীরা ইংরেজি জানলেও, মাতৃভাষাকে সর্বোত্তম ভাবে , ফ্রেঞ্চ না জানলে আইফেল টাওয়ারের সামনে গিয়ে চিনেবাদাম চিবোন। এবং সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করে তলায় লিখুন “অসাম ডে @ আইফেল …”
বার্লিনের ক্যাফেতে বসে ইংরেজিতে হ্যাম স্যান্ডউইচ অর্ডার করলে , ওয়েটার দিয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু কথা বলবে জার্মানে , বুঝিয়ে দেবে এটা জার্মানি , আমেরিকা বা ইউ.কে. নয়।
বেজিংয়ে ইংরেজি বলে কাজ সেরে ফেলার ইচ্ছে আর হাওয়াই চটি পরে এভারেস্ট টপকানোর ইচ্ছে অনেকটা এক রকম। খুদে চোখ বুজে আসবে হাসিতে, কিন্তু আপনার কানে ক্রমাগত গুঁজে দেওয়া হবে ম্যান্ডারিনের বুলেট। অথচ, চীন পৃথিবীর জিও-পলিটিক্স কন্ট্রোল করে আজ।
টোকিওর রাস্তায় ইংরেজি বলে দেখুন, ওই পাতলা প্রজাপতির মত মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করুন সামনে কোনো এ.টি.এম. আছে ? সে মিষ্টি হেসে “আরিগাতো ” বলে দ্রুত হেঁটে বেরিয়ে যাবে।
কিংবা ধরুন কোহিমার রাস্তায় আপনি বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন “আশেপাশে সিগারেটের দোকান আছে ?” , অথবা ব্রহ্মপুত্রের তীরে দাঁড়িয়ে অহমিয়াতে কথা বলে চলা দোকানিকে আপনি ক্রমাগত বাংলায় উত্তর দিয়ে গেলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অন্য ভাষার, বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনকে রুখে দেওয়ার , নিজের শিকড়ের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার দিন , ভাষার জন্যে রক্ত ঝরাবার ডাকটিকিট।
অথচ , আপনার “বাংলাটা ঠিক আসেনা …”, অথচ সারা জীবন দেশে থেকেও আপনি সান ফ্রান্সিসকোর মনেপ্রাণে বাঙালির চেয়ে কম বাঙালি , অথচ আপনি “কেন কি” বলেন এবং বলান।
লজ্জা করেনা ?
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি, লেখক ও অভিনেতা
কলকাতা, ভারত।