আজ মঙ্গলবার পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার জন্মবার্ষিকী
বিশেষ প্রতিবেদকঃ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ৭৯তম জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)।
বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী বিশ্ববরেণ্য এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৭ বছর বয়সে তিনি ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে রংপুর মহানগরী এবং তাঁর জন্মস্থান পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামে ড. ওয়াজেদ স্মৃতি সংসদ, ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ড. ওয়াজেদ মিয়া’র পরিবার, রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো তাঁর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্মৃতিচারণ, ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও গরীবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি তাঁর সমগ্র কর্মজীবনে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন।
পিতা মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া ও মাতা মরহুমা ময়জুনেসার চার পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ।
তিনি ১৯৫৬ সালে রংপুর শহরের সরকারি জিলা স্কুল থেকে ডিস্টিংশনসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হোন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দেন।
১৯৬৩-৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাঁকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়। তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।
তিনি বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং ঢাকার বৃহত্তম রংপুর কল্যাণ সমিতি, উত্তরবঙ্গ জনকল্যাণ সমিতি, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ এবং রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার মির্জাপুর বছির উদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।