চরফ্যাশনে প্রভাষক থেকে এক লাফে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ!

PicsArt_10-09-12.26.00.jpg

প্রভাষক থেকে এক লাফে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ!

চরফ্যাশন প্রতিনিধিঃ এক লাফে প্রভাষক থেকে সরাসরি উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে গভর্নিং বডির যোগসাজশে দুই দফায় জালিয়াতির আশ্রয় নেন এক মাদ্রাসা শিক্ষক। কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হন তিনি। জালিয়াতি প্রমাণের পর তার এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিত করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। তবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মিয়াজানপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় জালিয়াতির মাধ্যমে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের কারণে আরবি বিভাগের ওই শিক্ষক মাওলানা শরীফ মো. মনিরুল ইসলামের এমপিও স্থগিত করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। এছাড়া, কেন ওই শিক্ষকের এমপিও স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে আদেশ জারি করা হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষক শরীফ মো. মনিরুল ইসলাম মিয়াজানপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগের আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মির্জাকুল ফাজিল মাদ্রাসায় আরবি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সহকারী অধ্যাপক পদে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও কোনোটিই তার নেই। এই শিক্ষকের শুধু প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

আদেশে জানানো হয়, গভর্নিং বডি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশ করে জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১৪ মার্চ উপাধ্যক্ষ পদে এ নিয়োগ দেয়। নিয়োগ কমিটিতে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি আবশ্যক। তাই প্রতিনিধি মনোনয়নপত্র নিজেরা তৈরি করে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। আর নিয়োগের পর এমপিও পান অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।

অধিদফতরের আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, আগেও জালিয়াতি করে উপাধ্যক্ষ পদে ওই শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছিল গভর্নিং বডি। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির জাল স্বাক্ষরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই সময় নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায় এবং এমপিওভুক্তও হতে পারেননি শরীফ মো. মনিরুল ইসলাম।

আদেশটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। আদেশের বিষয়টি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভোলা জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়।

আদেশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা শরীফ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নিয়োগসহ সবকিছুই বৈধ। সবকিছু নিয়মমাফিক হয়েছে, এক দল ষড়যন্ত্রকারী এগুলো করছে। অধিদফতর টাকা খেয়ে এসব আদেশ দিচ্ছে।’

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কত বছর দায়িত্ব পালন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও সহকারী অধ্যাপক হইনি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ের আগেই বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। সেই আলোকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

আদেশে দেখা গেছে, উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের গত ১৪ মার্চ। আর ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বলা আছে, উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পেতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। সেই হিসেবে সহকারী অধ্যাপক না হয়ে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে—নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথম দফায় জালিয়াতির পর দ্বিতীয় দফায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে আবারও জালিয়াতি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top