বরিশাল-ভোলা সড়কে দেশের দীর্ঘতম সেতু অনুমোদন
সাগর চৌধুরীঃ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে তেঁতুলিয়া ও কালাবাদোর নদীর উপর দিয়ে বরিশাল-ভোলা সড়কে দেশের দীর্ঘতম ভোলা সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণে সায় দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী দেশে উপস্থিত না থাকাতে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে তেঁতুলিয়া ও কালাবাদোর নদীর উপর দিয়ে বরিশাল-ভোলা সড়কে ভোলা সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে এবং ২০২১ সালে এটি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ভোলা সেতুর প্রভাব পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আরও জোরদার করা হবে। প্রস্তাবিত সেতু বাস্তবায়নের পরে ভোলা জেলা সরাসরি পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে যুক্ত হবে। প্রস্তাবিত ভোলা সেতুটি নির্মাণ হলে পদ্মা সেতুর সুবিধা আরও বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো: ফেরদৌস বলেন, “১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু প্রকল্পের মধ্যে দুটি নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হবে মাঝে চরের উপর চার কিলোমিটার ভায়াডাক্ট তৈরি করা হবে।”
সেতু নির্মাণে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সেতু নির্মাণে নকশা চূড়ান্ত হলে এ খরচ আরও বেশি হতে পারে বলে জানান ফেরদৌস।
সেতু নির্মাণ হলে ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সেতুটি দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার সুযোগ থাকবে বলেও জানান ফেরদৌস।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভায় মোট ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়।
আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, ভোলায় সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ভেঞ্চার এনার্জি রিসোর্সেস লিমিটেডের গ্যাসচালিত ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুই বছরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকারে ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘সৌর বিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় টার্ন-কি পদ্ধতিতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প স্থাপনের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ পেয়ে পাওয়ার ইউটিলিটি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং জার্মানির রাচ সোলার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৯ টাকা।
একই প্রকল্পের আওতায় অপর একটি প্রস্তাবে টার্ন-কি পদ্ধতিতে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প স্থাপনের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ পেয়েছে যৌথ ভাবে পাওয়ার ইউটিলিটি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং জার্মানির রাচ সোলার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৭ টাকা।
সভায় সিঙ্গাপুরের সিএনএএমপিজিসি কোম্পানি থেকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে (বিসিআইসি) ১ লাখ টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া সার চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ২৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
এছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর অধীনে ১ লাখ মেট্রিক টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া সার মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৬৫ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ১৫০ টাকা।
সভায় বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (বিওজিসিএল)-এর অধীন বসুন্ধরা বিটুমিন/অ্যাসফল্ট প্রোডাকশন প্ল্যান্টের টেস্ট রানের জন্য ন্য জি-টু-জি সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশনের মাধ্যমে ৬৫ হাজার টন বিটুমিনাস ক্রুড অয়েল আমদানির প্রিমিয়াম ও মূল্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ১৯৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ইন্দোনেশিয়ার বুমি শিয়াক পুশাকো এ সরবরাহের কাজ পেয়েছে।
এছাড়া ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া জাতীয় মহাসড়কের কুষ্টিয়া শহরাংশ ৪-লেনে উন্নীতকরণসহ অবশিষ্টাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ” শীর্ষক প্রকল্পের কয়েকটি প্যাকেজে কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাজ পেয়েছে এবং এখাতে ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।