মধ্যরাতে মেঘনায় চলমান লঞ্চে কন্যার জন্ম; দোয়া চেয়েছেন বাবা মা
মেয়ের ছবি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মওদুদ আহম্মেদের ফেইসবুক থেকে নেওয়।
বিশেষ প্রতিবেদকঃ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বরিশালে আসার পথে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে গর্ভবতী এক নারী নিরাপদে কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন বলে লঞ্চে থাকা যাত্রীরা ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।
নিরাপদে শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার পর মাজ নদীতে লঞ্চে মাইকে এর ঘোষণা দেয়া হয়। ওই শিশুটির নাম রেখেছেন নুসাইবা।
বর্তমানে শিশুসন্তান সহ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল এলাকার বাসিন্দা ফোরকান হাওলাদারের স্ত্রী ফাহিমা বেগম সুস্থ রয়েছেন বলে জানায় অভিভাবকেরা।
সবার কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন তারা।
দুধল এলাকার বাসিন্দা ফোরকান হাওলাদার ঢাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। তার গর্ভবতী স্ত্রী ফাহিমা বেগমকে নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা থেকে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে করে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্ত্রী প্রসব বেদনা দেখা দিলে তিনি লঞ্চের অন্য যাত্রীদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন। সেখান থেকে বিষয়টি লঞ্চের দায়িত্বরত স্টাফরা জানতে পেরে দুজন নারীর সহায়তায় নিরাপদে বাচ্চা প্রসব করান। এ সময় গরমপানি, স্যাভলন সহ যাবতীয় সহায়তা করেন লঞ্চের স্টাফরা।
ঢাকা থেকে বরিশাল গামী চলমান লঞ্চে একটি কন্যা শিশু হয়েছে এমন খবর জানতে পেরে লঞ্চ কোম্পানির চেয়ারম্যানের স্ত্রী ওই শিশুটির নাম নুসাইবা রেখেছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মৃধার পক্ষ থেকে ওই দম্পতি ও সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুটির আজীবনের জন্য এ কোম্পানির লঞ্চে যাতায়াত ফ্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন লঞ্চের সুপারভাইজার নুর খান মাসুদ।
তিনি আরও জানান, শিশুটি ও তার মা সুস্থ থাকলেও লঞ্চটিকে নিরাপদে যথাসম্ভব আগভাগে বরিশালে নেয়ার জন্য মাস্টারদের বলা হয়েছে। সেখানে কোম্পানির পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো ও চিকিৎসার যাবতীয় সহায়তা কোম্পানির পক্ষ থেকেই করা হবে।
এ খবর জানতে পেরে লঞ্চের কেবিন যাত্রী বরিশালের
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মওদুদ আহম্মেদ তার ফেইসবুকে লিখেন, ” একজন নুসাইবার গল্প :
বরিশাল কর্মস্থল এবং ঢাকায় পরিবার থাকায় প্রায়ই আমাকে লঞ্চে যাতায়ত করতে হয়। আজ ঢাকা থেকে এডভ্যান্সার-৯ লঞ্চে বরিশালের উদ্দেশ্যে ফিরছি। লঞ্চ তখন মেঘনা নদীতে, রাত ১১:৩০ পর দেখলাম লঞ্চের ইনচার্জ মাসুদ সাহেব হতভম্ব হয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন। ডাক দিয়ে কারন জিগ্যেস করলে, বললো ‘ স্যার, একটা বিপদে পড়ছি, ২১০ নম্বর কেবিনের এক যাত্রীর হঠাৎ করে প্রসব বেদনা উঠছে,কোনো ডাক্তার পাচ্ছিনা, এখন কি যে করি! ‘ এই বলে সে চলে গেল। কিছুক্ষন পর এসে জানালো, ‘ স্যার,ডাক্তার না পেলেও নীচের ডেক থেকে দুইজন মহিলা যাত্রী নিয়ে এসেছি। গরম পানি, স্যাভলন, সাদা কাপড় এই সবের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। একটু দোয়া করবেন। ” কিছুক্ষন পর যখন খেতে বসলাম তখন দৌড়ে এসে কেউ একজন জানালো,
” একটা মেয়ে বাবু হয়েছে “??
একটু পর লঞ্চের অভ্যন্তরীন মাইকে বেজে উঠলো, ” একটি সুখবর। একটি সুখবর। কিছুক্ষন আগে আমাদের লঞ্চে একটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহন করেছে। বাচ্চা এবং বাচ্চার মা সুস্থ আছেন।এই সুসংবাদ শুনে লঞ্চের মালিক আমাদের নিজাম স্যার বাচ্চা এবং বাচ্চার মা বাবার জন্য আজীবন এই লঞ্চে যাত্রা ফ্রী করে দিয়েছেন। বাচ্চার বাবার অনুরোধে আমাদের ম্যাডাম ( নিজাম সাহেবের স্ত্রী) বাচ্চার নাম রেখেছেন,
??’ নুসাইবা ‘ ??”
মাইকে ঘোষনাটি শুনে এক অজানা আনন্দে চোখে পানি চলে আসলো। দেখলাম, লঞ্চের সবাই অত্যন্ত খুশি। কিছুক্ষন পর মাসুদ সাহেব লজ্জিত আনন্দিত হতভম্ব পিতাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসলো।ভাগ্য ভালো, আসার সময় বন্ধু Rakibul Hasan Saon খাওয়ার জন্য আমার সাথে কিছু মিষ্টি দিয়ে দিয়েছিল, সেই মিষ্টি দিয়েই সদ্য পৃথিবীর অন্যতম একজন সুখী পিতা নুসাইবার বাবাকে বরন করে নিলাম।।
#নুসাইবা —তোমার আকস্মিক আগমনে পাচ শতাধিক যাত্রীর আনন্দ উল্লাস তুমি যদি একবার শুনতে!বড় হয়ে এই গল্প একদিন তোমার পিতার কাছ থেকে শুনে নিও। সুস্থ এবং স্বাভাবিক ভাবে নিরাপদে বেচে থাকো এই ভালোবাসার পৃথিবীতে ???”
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মওদুদ আহম্মেদের অনুমতি ছাড়াই তার লেখাটি হুবুহু তুলে ধরা হল।