দীপু মনি পরিবারের বিরুদ্ধে তিনশো কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ

PicsArt_09-25-01.28.42-1.jpg

দীপু মনি পরিবারের বিরুদ্ধে তিনশো কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ

অপরাধ প্রতিবেদকঃ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

খোদ চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ এ অভিযোগ করেছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ অভিযোগ করে বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের নামে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির পরিবারের লোকজনের কারণে সরকারের ৩ শ’ ৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা শুনেই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে জমি কিনেছেন ডা: দীপু মনির পরিবারের লোকজন। পরে এই জমি স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ দামে অধিগ্রহণের দরপত্র দাখিল করা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এনেছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠন করা তদন্ত কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমির সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর সাব রেজিস্টার অফিসের নির্ধারিত বাজার মূল্য অনুযায়ী নাল, বাড়ি/বাগান, পুকুর/ডোবা ও ভিটি শ্রেণির মূল্য পর্যায়ক্রমে ১৩ হাজার ৮০২, ২৩ হাজার ৯৬৬, ৩৮ হাজার ৯৫৬ এবং ৩৩ হাজার ২৯৪ ধরে প্রকল্প প্রাক্কলন দাঁড়ায় ১ শ’ ৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা। কিন্তু দেখা যায়, সর্বশেষ নির্ধারিত মৌজা মূল্যের তুলনায় অধিগ্রহণের নিমিত্ত সংগৃহীত দরপত্র চরম অস্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর খসড়া আইন পাস হয় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। এর পরের বছর ৯ সেপ্টেম্বর সংসদে বিল পাস হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। এ নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয় সেবছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিক্ষামন্ত্রীর জ্ঞাতসারে তার বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ২০২০ সালের জুন-জুলাই মাসের বিভিন্ন তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার কয়েকটি মৌজায় জমি ৯৯ শতাংশ জমি কেনেন। একই বছরের ২১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক একর ৬১ শতাংশ জমি কেনেন ডা: দীপু মনির মামাতো ভাই মো: জাহিদুল ইসলাম। শিক্ষামন্ত্রীর একান্তজন সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানও তিনি, সে বছর একই এলাকায় জমি কেনেন এক একর। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর একান্তজন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান নিজের নামে এবং তার মেয়ে পিংকী ও ছেলে শাহীন খানের নামে কয়েক একর জমি কেনেন সে বছরের ৮ জুন থেকে ১৪ জুলাই এর মধ্যে।

স্থানীয়রা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন পাস হওয়ার কয়েক মাস পরেই পরিকল্পিত ভাবে ওই এলাকার বিভিন্ন মৌজার নিজেদের নামে-বেনামে জমি কেনেন শিক্ষামন্ত্রী পরিবার- পরিজনরা। ভূমি অধিগ্রহণের দরপত্র আহ্বান করা হলে সেই জমিই দেখানো হয় বাজার মূল্যের ২০ গুণ বেশি দামে। দরপত্রে ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য অস্বাভাবিক দেখে তা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গত বছরের ২৪ অক্টোবর জেলা কানুনগো ও সার্ভেয়ারদের সমন্বয়ে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের (২০২১) পহেলা নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে সেই কমিটি।

তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত দাগের জমিগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ১ শ’ ৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা থাকলেও দরপত্রে তা দেখানো হয় ৫ শ’ ৫৩ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজার ২৯০ টাকা। যা বাজার মূল্যের ২০ গুন বেশি। তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত দাগের ভূমি হস্তান্তর ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ শ’ ৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজা ৭৮২ টাকা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সরকারের ৩ শ’ ৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকা আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলেই আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিত আকারে সব কিছু জানিয়েছি। আমি চাই, বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে এই টাকা ফিরিয়ে আনা হোক।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি প্রতিউত্তর করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top