চাকরির লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ
অপরাধ প্রতিবেদকঃ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এয়ার কার্গোতে বিভিন্ন পদে চাকরির প্রলোভন দিয়ে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অন্তত আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা আত্মসাতকারী চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রটির মূল হোতা মো. আমিনুল ইসলাম লালুকে (৪২) গ্রেফতার করেছে সিআইডি ঢাকা মেট্রো উত্তরের একটি টিম।
শেখ মো. রেজাউল হায়দার জানান, লালু একজন বড় প্রতারক। মানুষকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সে টাকা নিতো। কিন্তু কাউকেই চাকরি দিতে পারতো না। ভুক্তভুগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, আমিনুল ইসলাম লালু অন্তত ডজন খানেক প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়োগের কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো। সেগুলো হলো এনবিজি এয়ার কার্গো লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল আউটসোর্সিং লিমিটেড, বগুড়া ডেভেলপার অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, বগুড়া ট্রেডিং কম্পানি লিমিটেড, এম/এস হযরত শাহ আলী বাগদাদী (আর) এন্টারপ্রাইজ, নর্থ বেঙ্গল বাজার বিডি লিমিটেড, এম/এস নূরে মুজেসাম করপোরেশন, এনবিও সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড, এম/এস গরীবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ এবং শাহজালাল আন্তজাতিক বিমানবন্দর এয়ার কার্গোতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় দুই শতাধিক প্রার্থীর থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
পার্থ পাল নামে এক যুবকের কাছ থেকে পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা নেয় লালু এবং তাকে চাকরি করতে হলে তার এলাকা থেকে আরও প্রার্থী নিয়ে আসতে হবে বলেও শর্ত দেয়। পার্থ পাল লালুর কথা মতো তার নিজ এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী অজয় রায়(২৩), অনুতম বর্মন(২৪), পলাশ চন্দ্র(২০), প্রিয় রঞ্জন(১৯), নাঈম রানা(২০), পবিত্র পালকে (১৯) নিয়ে আসেন। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সোয়া দুই লাখ করে টাকা নেয়। কেবল ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যেই ভিকটিমদের পর্যন্ত ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়।
এক পর্যায়ে ভুক্তভুগীরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে সিআইডির কাছে অভিযোগ করে। ২৯ সেপ্টেম্বর আমিনুর ইসলাম লালুকে সিআইডি ঢাকা মেট্রো-উত্তর এর টিম-২ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হতে গ্রেফতার করে।
লালুকে গ্রেফতারের পর সিআইডির কার্যালয় অর্ধশতাধিক ভুক্তভুগী একত্র হয়ে অভিযুক্ত লালুর বিচারের দাবি জানায়।
সিআইডি জানিয়েছে, লালু একটি প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে। এই চক্রটি ইতিমধ্যে প্রায় ২/৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। লালু বর্তমানে দক্ষিণখান এলাকায় ভাড়া থাকে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়ও তার অফিস রয়েছে।
তার কাছে থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিড কার্ড, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে চাকরি প্রার্থীদের জন্য বানানো আইডি কার্ড, কম্পিউটার সিপিইউ, প্রিন্টার, তার বিভিন্ন ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫টি সিল ও ৭টি ব্যাংকের চেক বই ও দুটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।