আদালতে মামলাজট; পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে নিরসন সম্ভব – ড.এবিএম মাহমুদুল হক
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট অবসরে আদালতে মামলাজট নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখলাম কিছু পদক্ষেপ নিলে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে এই ৩৮ লক্ষ মামলার জট পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব। এই পদক্ষেপ গুলো বিষয়ে আলোচনার পূর্বে সমস্যাগুলো বিষয়ে একটু আলোচনা করা যাক। আমি আমার আলোচনাকে তিন ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমে দেওয়ানি আদালত। তারপর দায়রা আদালত ও সবশেষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। প্রিয় ফেসবুক বন্ধুগণ, আশা করি আমার পোস্টে আপনারা মূল্যবান কমেন্ট করে আলোচনা ও সুপারিশগুলোকে আরো সমৃদ্ধ করবেন।
দেওয়ানি আদালতে মামলাজটের সবচেয়ে বড় কারণ বিচারক স্বল্পতা। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে সব মিলিয়ে বিচারক মাত্র ১৭০০ জন। এর মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেসি, বিভিন্ন ট্রাইব্যাল ও প্রেষণে কর্মরতদের বাদ দিলে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০ জনে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ পদের ৪০০ জন বিচারক দেওয়ানি মামলার বিচার করে থাকেন। বাকী ৪০০ জন যুগ্ম জেলাজজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ পদের বিচারকগণ শতকরা ৮০ ভাগ দায়রা জজ ও শতকরা ২০ ভাগ সিভিল জজ। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক-জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজগণ সাধারণত সপ্তাহে একদিন দেওয়ানি মামলার শুনানি করে থাকেন। যুগ্ম জেলা জজগণ দায়রা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, মাদক ইত্যাদি মামলার শুনানি শেষে সময় পেলে দেওয়ানি মামলার শুনানি করেন। তারা মোট নিষ্পত্তির শতকরা ২০ ভাগ দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি করেন কিনা এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। তবে কেউ কেউ অনেক বেশি পরিমাণে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি করে থাকতে পারেন তবে সেটা ব্যাতিক্রম। সুতরাং যুগ্ম জেলা জজ থেকে জেলা জজ পর্যন্ত ৪০০ বিচারকের মধ্যে দেওয়ানি বিচারক শতকরা ২০ ভাগ অর্থাৎ ৮০ জন। সুতরাং ১৭ কোটি মানুষের দেওয়ানি মামলার বিচারের জন্য বিচারক মাত্র ৪৮০ জন। ভাবা যায়?
অবস্থা আরো ভয়াবহ আপিল শুনানির ক্ষেত্রে। সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ পদের ৪০০ ও যুগ্ম জেলা জজ পদের ২০০ বিচারকের আপিল শুনানির জন্য বিচারক সেই ৮০ জন। এতো অল্প বিচারক নিয়ে এতো বিশাল পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি করা কি আদৌ সম্ভব?
মজার বিষয় হলো বিচারকদের এই অরগ্যানোগ্রাম ৩৭ বছর আগেকার। এই ৩৭ বছরে এদেশের লোকসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। সরকারি সব বিভাগের পদ বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ গুন। অথচ দেওয়ানি আদালতে বিচারকের পদসংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ অর্থাৎ ৫০ টিও বাড়েনি। ম্যাজিস্ট্রেসি হয়েছে, কিছু বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হয়েছে কিন্তু দেওয়ানি আদালতগুলো সেই ৩৭ বছর আগের জায়গাতেই রয়ে গেছে। (অসমাপ্ত)
ড.এ.বিএম মাহমুদুল হক
জেলা ও দায়রা জজ, ভোলা।