পৃথিবীর সকল মায়েদের জন্য মা দিবসের শুভেচ্ছা – নাজনীন আহমেদ।
আমরা দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। ছোট বলে আদর আর প্রশ্রয় দুটোই বেশি ছিল পরিবারে। লেখাপড়ায় ভালো ছিলাম বলে সাত খুন মাফ ছিল আমার।
ইচ্ছে মত হেসে খেলে বেড়ানো এক শৈশব। পড়াশোনা ছাড়াও গান, বিতর্ক, বক্তৃতা, অভিনয় সবকিছুতেই প্রচন্ড আগ্রহ ছিল আমার। কিছুদিন নাচও শিখেছি।
আমার এই সকল কিছুতে ছায়ার মত যিনি আমার পাশে পাশে থেকেছেন তিনি আমার মা। ছোটবেলায় রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে খুব ভোরে উঠে পড়ার অভ্যেস ছিল আমার।
নিজের আলাদা কোনো ঘর না থাকায় বাবা-মায়ের ঘরেই ছিল আমার পড়ার টেবিল। আমি টেবিলে পড়তাম । আম্মা কিছুক্ষণ পরপর আমার জন্য এটা সেটা খাবার এনে দিতেন।
গান, বিতর্ক কিংবা বক্তৃতার কম্পিটিশনে প্রায়ই এদিক ওদিক যেতে হতো। সাথে থাকতেন মা । নজরুল জয়ন্তী, রবীন্দ্র জয়ন্তী এমন নানান প্রোগ্রামে ঘন্টার পর ঘন্টা রিহার্সেলে ছায়াসঙ্গী ছিলেন মা।
আমি বড় হয়েছি খুলনায়। আব্বার চাকুরীর সুবাদে সেখানেই কেটেছে ক্লাস থ্রি থেকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত।
গান, বিতর্ক, বক্তৃতা, অভিনয় -এসবের প্রতিযোগিতায় কখনো চলে গেছি বরিশাল, কখনো খুলনা থেকে এসেছি ঢাকায়।
আম্মা থেকেছেন সাথে সাথে। আমার জীবনে আজ আমি যতটুকু হয়েছি, যা কিছু অর্জন করেছি তার পেছনের শক্তি আমার মা।
আজ মা দিবসে একই শহরে থাকা মা কে এক নজর দেখবো না সেটা ভাবতে পারছিলাম না। হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ম্যাসেঞ্জারের ভিডিওতে দেখে মন ভরবে না।
তাই সকাল বেলা মায়ের জন্য তার পছন্দের ইলিশ মাছ, পেঁপে, আরো কয়েক রকমের ফল কিনলাম স্বপ্ন সুপার শপ থেকে।
সেখানে দেখি আম্মার পছন্দের বুন্দিয়া আর ডায়াবেটিক মালাই চপও আছে। মনটা খুশি হয়ে গেল। কিনে ফেললাম, তারপর চলে গেলাম মগবাজারে মায়ের বাসায়। ভেতরে ঢুকি নাই। দরজায় দাঁড়িয়ে জিনিসগুলা রেখে, মাকে এক নজর দেখে চলে এসেছি।
আম্মার মন ভরছিল না। বারবার বলছিলেন ঘরে যেতে। রাজি হইনি। দেখলাম উনি অস্থির হয়ে গেছেন আমাকে একটু জড়িয়ে ধরার জন্য। তাও ধরতে না দেয়ায় শুধু মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলেন।
আহা মা। আরো অনেক বছর যেন এভাবেই মায়ের আদর আর দোয়া পাই সবার কাছে সেই দোয়া চাই। সাথে বিছানায় শয্যাশায়ী আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। পৃথিবীর সকল মায়েদের জন্য মা দিবসের শুভেচ্ছা।
নাজনীন আহমেদ
সিনিয়র রিসোর্সার
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান