মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন উপদেষ্টার সাথে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এর বৈঠক

PicsArt_09-17-12.22.37.jpg

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন উপদেষ্টার সাথে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এর বৈঠক।

আজ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর আবাসিক আইন উপদেষ্টা (জবংরফবহঃ খবমধষ অফারংড়ৎ) এরিক অপেঙ্গা (ঊৎরপ ঙঢ়ধহমধ) দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন।

এসময় দুদক  চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও  এফবিআই  এর সাথে দুদকের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠান এদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ প্রত্যার্পণ (জবঢ়ধঃৎরধঃরড়হ) ও কমিশনের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে যথেষ্ট সহযোগিতা করছ্। এজন্য দুদক চেয়ারম্যান তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, দুদক এফবিআইয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। কমিশন প্রত্যাশা করে,  দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত  বিশেষ করে মানিলন্ডাংি, সাইবার ক্রাইম, আর্থিক লেন-দেনের তদন্তের ক্ষেত্রে ফরেনসিক এনালআইসিস, ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং,,অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল, সম্পদ পুনরুদ্ধার (স্টোলেন এসেট রিকভারি), তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত আর্থিক ক্রাইম, মিউচুয়াল লিগ্যাল এ্যসিস্টেন্স, তথ্য বিনিময়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টেমেন্ট এর সঙ্গে পারাস্পরিক সহযোগিতা আরো বিকশিত হবে।

তিনি বলেন শুধু প্রশিক্ষণ নিলে হবে না, প্রতিটি প্রশিক্ষণ হতে হবে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সংমিশ্রণ। দেশীয় ও বিদেশী জ্ঞানের সংমিশ্রণে যে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তারা গ্রহণ করবেন, তার বাস্তব প্রয়োগ নিজ কর্মে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধের সাথে মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রের যেসব অপরাধের মিল রয়েছে, সেসব বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ মানেই বিদেশে যেতে হবে কমিশন এমনটা মনে করে না। প্রয়োজনে এসব বিষয়ে এফবিআই অথবা জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের প্রথিতযশা রিসোর্স পারসনগণ বাংলাদেশে এসে কমিশনের কমকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন অথবা আঞ্চলিক পর্যায়ে যেমন সিঙ্গাপুর , মালোয়েশিয় কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় সমন্বিতভাবে এসব প্রশিক্ষণ হতে পারে। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কমিশন সবসময়ই ভ্যালু ফর মানির বিষয়টি বিবেচনা করে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত রিপোর্টের সাথে নোট বুক অব ইনকোয়ারি সংযোজন বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে কমিশন রিপোর্ট দেখেই তদন্তের গতি-প্রকৃতি অনুধাবন করতে পারছে। এতে কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধ করাও ক্রমান্বয়ে সহজ হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং।  এ জাতীয় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে দুদক,  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় সমন্বয়ের প্রয়োজন। তাই কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে অভিপ্রায় ব্যক্ত করে পত্র দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থ পাচারের লাগাম টেনে ধরা যেতে পারে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কেউ যদি আমেরিকায় অর্থ উপার্জন করে গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ গড়ে তোলেন- সে বিষয়ে দুদকের কোন মাথা ব্যাথা নেই,  তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ যদি অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে আমেরিকা বা পৃথিবীর অন্য  কোনো দেশে সম্পদ তৈরি করেন সেটা দুদক আইনের আওতাভুক্ত অপরাধ । এসব অর্থ পাচারকারীদের আইন-আমলে আনতে তিনি এফবিআইসহ সকল দেশের এ জাতীয় সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যৎ  প্রজন্মকে  সততা ও নৈতিকমূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে কমিশন দেশের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করেছে। এসব সততা সংঘের সদস্যদের মাধ্যমে কমিশনের অর্থায়নে দুর্নীতিবিরোধী এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিতর্ক প্রতিযোগীতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি জীবনে নৈতিকতার ব্যবহারিক চর্চার উদ্দেশ্যে সততা সংঘ রয়েছে এমন প্রায় ৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপন  করা হয়েছে। এসব স্টোরে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ, চিপস্, চকলেটসহ বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী রয়েছে। আবার  প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা, পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য ক্যাশ বাক্স ইত্যাদি সবই রয়েছে, নেই শুধু বিক্রেতা। এমনকি এসব স্টোরগুলো সিসিটিভির আওতামুক্ত। অর্থাৎ কোনো প্রকার নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তিনি বলেন তারপরও  আজ পর্যন্ত এসব স্টোরের বিষয়ে অনৈতিকতার একটি অভিযোগও কমিশন পায়নি। তরুণ প্রজন্মের  নৈতিকতার উৎকর্ষ আমাদের আশান্বিত করে।

তিনি বলেন, নৈতিকতাবিহীন উন্নয়ন কখনও কখনও অর্থহীন হতে পারে, তাই কমিশন জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল-২০১২ এর আলোকে সমাজে সততা ও নিষ্ঠাবোধ বিকাশে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি কমিশন কর্তৃক পরিচালতি গণশুনানি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিয়ংযের জন্য গঠিত ২৮ টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম, কমিশনের অভিযোগকেন্দ্র-১০৬ এ প্রবর্তনসহ শুদ্ধাচার বিকাশে কমিশনের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম উল্লেখ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর আবাসিক আইন উপদেষ্টা (জবংরফবহঃ খবমধষ অফারংড়ৎ) এরিক অপেঙ্গা (ঊৎরপ ঙঢ়ধহমধ) দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের ভূংয়সী প্রশংসা করেন। তিনি কমিশনের অভিযোগকেন্দ্রের হটলাইন-১০৬ ও তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি গণশুনানি ও সততা স্টোর পরিদর্শনে অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে দুদক চেয়ারম্যান তাকে এসব কার্যক্রম দেখানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক-কে অনুরোধ করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, প্রতিরোধ অনুবিভাগের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, আইসিটি ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম সোহেল প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top