পরিবেশ অধিদফতর জেগে ঘুমাচ্ছে: হাইকোর্ট
আদালত প্রতিবেদকঃ অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পরিবেশ অধিদফতর ‘জেগে ঘুমাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটা নিয়ে মামলার শুনানিকালে মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে অ্যাভোকেট মো. শাহজাহান ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে সিনিয়র অ্যাভোকেট সাইদ আহেমেদ এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের পক্ষে অ্যাভোকেট মো. মনিরুজ্জামান শুনানিতে ছিলেন।
আজ মামলার শুনানিতে রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটার তথ্য তালিকা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। পরিবেশ অধিদফতর আদালতকে জানায়, মানিকগঞ্জের ১১টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৮টিতে, মুন্সিগঞ্জে ২৬টি অবৈধ ইটভাটার ১৬টিতে, ঢাকার ১১৩টির মধ্যে ২৫টিতে, গাজীপুর ৪৬টি অবৈধ ইটভাটার ৩৩টিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার ডিসি আদালতকে জানান, নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১৬৭টি এবং বৈধ ৮৮টি।
শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, জেগে ঘুমাচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর।
পরিবেশ অধিদফতর হাইকোর্টকে জানায়, দূষণ নিয়ে কাজ করতে তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে মাত্র তিন জন। স্বল্প লোক নিয়ে কাজ করছে তারা।
এরপর আদালত রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন। ঢাকা ছাড়াও বাকি চারটি জেলা হলো- গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার ৩১৯টি অবৈধ ইটভাটার তথ্য হাইকোর্টকে জানান পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ।
ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদি সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। এরপর ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কয়েকদফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়েকটি নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো, বিশেষজ্ঞ কমিটি হঠন হওয়ার পরে তাদের মতামত বিবেচনা করে বায়ুদূষণ বন্ধ করতে ঢাকা শহরে পরিবহন গাড়িতে, নির্মানাধীন এলাকায় মাটি/বালি/বর্জ্য ঢেকে রাখা, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা খোড়াখুড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, কালো ধোঁয়াবাহী যানবাহন জব্দ করা ও অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা।
তবে সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়। উক্ত আবেদনের সঙ্গে ঢাকা শহরের বর্তমান দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থান ও অবৈধ ইভাটা পরিচালনা সম্পর্কে মিডিয়ার সংবাদ সংযুক্ত করে ৪ দফা নির্দেশনা চাওয়া হয়।
উক্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রনে আদালতের দেয়া একাধিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না থাকায় পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি জেলাগুলোর অবৈধ ইটভাটার তালিকা দাখিলেরও নির্দেশ দেন আদালত। সে আদেশের ধারাবাহিকতায় ডিসি ও তাদের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি হাইকোর্টে যুক্ত হয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেন।