আদম -১২ শাহানা সিরাজী
আদমের সাথে হাওয়ার নতুন করে দেখা হলো-
আদম বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে হাওয়কে পরখ করল। হাওয়া ঠিক আছে তো? কেউ আবার হাওয়ার হাত ধরেনি তো!
অথচ আদম জানে মাটিগন্ধা হাওয়ার দুনিয়ায় অন্য কোন প্রাণী এখনো জন্মায়ইনি। মানুষ তো দূরে!
হাওয়ার তীক্ষ্ম চাহনী আদমের কলিজা ভেদ করে।
আদম শক্তি সঞ্চয় করে। আমি পুরুষ!
হাওয়া দেখে আদমের বিভাজিত মূর্তি!
খন্ডিত আদম ঘোষণা করে এখানে আমি যা বলবো তাই চলবে!
হাওয়া ভাবে, তুমি যা করো যা বলো সবই তোমার আশে পাশে বন্তু জগতেই রয়ে যাবে। তোমাকে ফিরে যেতে হবে!
আদমের এক খন্ড মধ্যপ্রাচ্যে,এক খন্ড ভারতীয় উপমহা দেশে, এক খন্ড ককেশীয় অঞ্চলে তুমুল ঝড় তোলে।
প্রত্যেক অংশ নতুন নতুন কথা বলে! আদম নিজের মুখে হাত বুলায়,কেমন দেখতে আমি!
হাওয়া লজ্জিত হয়
একদিন তোমায় ভালোবেসে স্বর্গ ছেড়েছিলাম। গন্ধম কাহিনী তুমিই রচনা করেছিলে আমার দিকে বাঁকা হাসি ছুঁড়ে
এখন তুমি খন্ডিত বিভাজিত!
আমারই নাড়িছেঁড়া সন্তান আমাকে আঁটকে রাখে চার দেয়ালে!
এ কী আমার প্রেমের প্রতিদান!
একী তোমার প্রেমের নতুন নমুনা!
হাওয়া তীব্রবেগে ছুটতে থাকে। তার হাতের সংখ্যা বাড়তে থাকে! প্রতিটি হাতে অসুর বধের অস্ত্র ঝনঝন শব্দ তোলে!
কম্পিত আদম মাথা নত করে
এ কী রূপে বেরিয়ে আসলে আবার তুমি!
হাওয়া শান্ত হয়, নিজ হাতে প্রেমের মালা কী ভাবে ছিঁড়ে দেবে!
তখনই আদম হাওয়ার চারদিকে দেয়াল তুলে দেয়
প্রতিটি খন্ড অদ্ভুত দেয়াল গেঁথে দেয়।
যেমন গাঁথুক প্রতিটি দেয়ালেরই লক্ষ্য হাওয়ার উছল প্রাণ,হাওয়ার উদার চোখ, হাওয়ার উদ্দাম হাসি রোধ করা।
সেই থেকে অবরুদ্ধ হাওয়া নীরবে সয়ে যাচ্ছে
আদমের নানাবিধ ছলাকলা
নানাবিধ সঙ্গবাস,নানাবিধ শব্দের খেলা!
হাওয়া ঢেকে দেয় নিজের মুখ,চোখ নাক কান
পুড়ে দেয় কানের পর্দা,কেটে দেয় জিহবা…
আদম দশ দুয়ার ঘুরে হাওয়ার দিকে তাকায়
আর ক্রুর হাসি হাসে
দুনিয়া আমার, আমি যা ইচ্ছা করবো। এ ভাবেই বধির থাকো,অন্ধ থাকো,বোবা থাকো-
আদম এক এক করে তৈরি করে পাথরের কুটির।
কতো হাওয়া!
একদিন নিসঙ্গ হয়ে পড়ে আদম
একটা শব্দ চাই,মাত্র একটা!
হাওয়ার নীরবতায় ঈশ্বরের আরশ থর থর কাঁপে
“আমার অপূর্ব এ সৃষ্টি কেন নীরব!”
হাওয়া অপেক্ষা করে
আদম হাঁটুমুড়ে নতজানু
প্রভু হে, একটি শব্দ শোনাও
একটি হাতের স্পর্শ দাও
একটি মুখের হাসি দাও
যতোবার জন্ম নেবো
ততোবারই হাওয়াকে চাই
ইশ্বর হাসে, হাওয়ার চারপাশে দেয়াল তুলেছো তুমি
তোমাকেই ভাঙতে হবে দেয়াল….
শাহানা সিরাজী
কবি প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।