শুভ জন্মদিন আমার ছোটো খোকা – শাহানা সিরাজী
সেদিন ছিলো বুধবার ২২ আগস্ট বেলা আড়াইটায় আমার দ্বিতীয় সন্তান মুশফিকুল আনোয়ার মিশু আমার পিত্রালয়ে নিতান্তই গ্রামীন জীবনের অন্য প্রসূতির মতোই আমার কোলে আসে। প্রথম সন্তানও একই ভাবে পিতৃগৃহে জন্ম দিয়েছি।
আজকের নারীদের মতো আজকের বাবাদের মতো কোন উৎকণ্ঠা উদ্বেগ কোন সঞ্চয় আমার ছিলো না। কোন প্ল্যান ছিলো না। আব্বাই ভরসা ছিলো। গ্রামীন ধাত্রী আশ্ববি বিজা (বিজা মানে বুবু) আমার সন্তান্দের ধাত্রী। সন্তান জন্মের পর নার্সিং ছিলো কবুতরের মসলা খাওয়া। আম্মা দশদিন যাবৎ কবুতরের মাংস বাইশ পদ মসলায় রান্না করে খাইয়েছেন। তাদের বাবার কোন দায়িত্ববোধ ছিলো না। উনি ছিলেন উনার পিতার সন্তানদের লেখাপড়া খাওয়া দাওয়া নিশ্চিত করণ নিয়ে ব্যস্ত। এ দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন পাহাড়।
উনাকে আমার জন্য কিছু আনার জন্য বলতে হবে এই বোধ ছিলো না কিংবা সাহস ছিলো না।
যাই হোক সময়ের পরিক্রমায় আমিও চাকুরিজীবী হলাম।
দুসন্তান নিয়ে শুরু হলো আমার যুদ্ধ।
মিশু খুব কাঁদতো। কেন কাঁদতো বুঝতেই পারতাম না। কেবল কাঁধে নিয়ে রাতভর পায়চারী করতাম। অপুও ছোটো। তারা মাত্র এক বছর এগারো মাসের বড়ো ছোটো। দুটো ফিডার এক সাথে সাজাতাম।
আমার সেই ছেলেটিকে গানে তালিম দিলাম। নিজেই গিটার কীবোর্ড বাজানো শিখলো। গানের গলা ভারী মিষ্টি।
ধীরে ধীরে পড়াশোনার চাপ বাড়তে বাড়তে সে সব থেকে দূরে সরে গেলেও লেখা অব্যাহত আছে।
তার লেখার হাতও অসাধারণ। ছোটগল্প,কবিতা থ্রিলার লেখায় সিদ্ধ হস্ত। বড়ো ছেলেকেও গীটার বাজানো শিখিয়েছি। তারও শুরু হয়েছে গান দিয়ে। হারমোনিয়াম প্রথম তার জন্যই কিনেছিলাম। সেও প্রফেশনাল রাইটার। ইন্টারন্যাশনালি তার লেখাই আগে ছাপা হয়েছে।
আমি যেহেতু লেখার পাঠ নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করছি সেহেতু আমার ছোট ছেলে এম এ সিরাজীও যুদ্ধ করুক চাইনি। তাই ধীর গতিতে যাতে এগুতে পারে সে চিন্তায় আছি।
তথাপিও “রমিজের ২৯ দিন” এবং “মর্গানাইট” নামক দুটো থ্রিলার আত্মপ্রকাশ করেছে। যারা এ মুহূর্তে খুব লিখছেন তারা স্বীকার করতেই হবে তার সৃষ্টি অনন্য অসাধারণ।
সে পিএইচডি অধ্যয়নরত। করোনাকাল তার ভাগ্যকে চাপা দিয়ে রেখেছে অথবা আরো ভালো কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে।
বর্তমানে মোনাসের ছাত্র হলেও হার্বাটের সাথে কোলাবোরেশান করেই তার রিসার্চ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়দিন আগে অক্সফোর্ডের প্রফেসর তার প্রেজেন্টেশন দেখে তার সম্পর্কে এমন রিমার্ক করেছে যে তার মা হিসেবে আমি গর্বিত এবং ধন্য এ জন্যই যে তারা দুই ভাই জ্ঞানে- প্রজ্ঞায়- বিচক্ষণতায়- ভদ্রতায় -শিষ্টাচারে সেরাদের সেরা।
তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে মনে হয় এমন কোন জগতে আছি যেখানে কোন দুঃখ নেই, কোন কষ্ট নেই
যন্ত্রণা নেই, কুটকাচালি নেই কেবল শেখো আর শেখো। আমি তাদের খুব মনোযোগী শিষ্য।
মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা তারা যেন ন্যায্য পাওনাটুকু পায় যা তাদের জন্য বাজেট করা হয়েছে। তারা যেন মানবতার মানসপুত্র হতে পারে৷
প্রতিটি জায়গা থেকেই মানুষের জন্য কাজ করা যায়। আপন কর্তব্য সুচারুরূপে সম্পাদনও মানবতার সেবা।
আজ আমার এই ছেলেটির জন্মদিন। তার লেখক নাম
এম এ সিরাজী।
প্রকাশিত বই
১. রমিজের ২৯ দিন
২. মর্গানাইট
শুভ জন্মদিন আমার ছোটো খোকা
পাঠকের লেখক
এম এ সিরাজী।
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ।
কবি প্রাবন্ধিক কথা সাহিত্যিক।