ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অপরাধ প্রতিবেদকঃ রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকারা আদালত।
আ।জ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এই গ্রেফতারি৷ পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ মে দিন ধার্য করেন আদালত।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেখ হাসিনা-পুতুল ছাড়াও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অপর ১৬ আসামি হলেন: জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্ত প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় গত চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্ত আরো দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ১৬ জনকে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট নেন।
প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই মায়ের কাছে আবদারপূর্বক আবেদন পেশ করেন পুতুল। এরপর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বরাদ্দকৃত প্লট নিজ নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে নেন এবং সরকারি জমি আত্মসাৎ করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত অপর ১৬ আসামি অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে আইনবহির্ভূত প্লট বরাদ্দ দেয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটি গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন সম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন। প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।