চিকিৎসকের অনৈতিক কাণ্ড, নারী কর্মী স্যান্ডেল খুলে পেটালেন চিকিৎসকে

চিকিৎসকের অনৈতিক কাণ্ড, নারী কর্মী স্যান্ডেল খুলে পেটালেন চিকিৎসকে

অপরাধ প্রতিবেদকঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. পীযূষ কান্তি মিত্রের বিরুদ্ধে হাসপাতালের এক নারী কর্মীর সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন আচরণের জন্য শেফালী আক্তার নামের ওই নারী ডা.পীযূষকে স্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

ডা.পীযূষ কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শেফালী আক্তারের হাত ধরে টান দেন ও তাকে গালাগালি করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি শেফালীর সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণও করেন।

ঢামেক হাসপাতালের নারী কর্মচারী শেফালী আক্তার বলেন, সে আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। আমি তার কথায় রাজি না হওয়ায় সে আমাকে বার বার হেয় প্রতিপন্ন করে। আমি ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতাম। পরে আমি তার কথায় রাজি না হওয়ায় সে পরিচালককে বলে আমার ডিউটি রান্না ঘরে দিয়ে দেয়। আগে আমি যখন ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে ডিউটি করতাম, সে আমাকে বারবার রুমে ডাকতো। ১ মাস আগে সে আমাকে রুমে ডেকে বলে আমার তোয়ালে, কাপড়-চোপড় ধুয়ে দিতে। আমি বলি এখানে ধোয়ার জায়গা নেই, বাসা থেকে ধুয়ে এনে দেব। সে বলে না আমার এখান থেকে ধুয়ে দিতে হবে। আমি ধুয়ে না দেওয়ায় সে আমাকে গালাগালি করে। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালককে দিয়ে আমার বদলি রান্না ঘরে দিয়ে দিয়েছে।

শেফালী আরও বলেন, বুধবার বিকেলে আমি ওয়ার্ডে গেলে সে আমাকে গালাগালি করতে থাকে। আমি খারাপ কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছি, আমি খারাপ, এসব কথা বলে ওয়ার্ডের রোগী-নার্সদের সামনে। আমি তাকে সবার সামনেই বললাম বাজে কথা বলবেন না। পরে আমাকে হাত ধরে টেনে বের করে দিতে গেলে আমি পা থেকে স্যান্ডেল খুলে তার কাঁধে মারি। আমি একজন বিধবা মানুষ। আমার ৩টা ছেলে-মেয়ে। সে একজন ডাক্তার হয়ে কেন আমার হাত ধরে টেনে বের করে দেবে? আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি তাহলে আমার ওয়ার্ড মাস্টার আছে, সর্দার আছে, তাদের বলুক। তা না বলে সে কিভাবে আমার গায়ে হাত দেয়।

শেফালীর সহকর্মী নিপা বলেন, এখানে আরও অনেক ডাক্তার আছে, তারা তো আমাদের কাউকে রুমে ডাকে না। সে খালি রুমে ডাকে। তার রুমে কাজ করতে গেলে বাইরে একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে তারপর কাজ করতে হয়। আমরা মেয়েরা কাজ করার সময় মনে ভয় নিয়ে কাজ করি। এভাবে ভয় নিয়ে কাজ করা যায়?

নিপা আরও অভিযোগ করেন, আমাদের একটি রেস্ট রুম আছে, সে সেখানে যখন-তখন ঢুকে যায়। রাত ২টা-৩টার সময়ও হুট করে রুমে ঢুকে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে একাধিক কর্মকর্তার মুখেও ডা. পীযূষের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যায়। তারা বলেন, তার জন্য আমাদের ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারদের বদনাম হচ্ছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা.পীযূষ কান্তি মিত্র বলেন, আমার সাথে শেফালীর কোনো সমস্যা হয়নি। এক সপ্তাহ আগে তাকে ২০১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বদলি করা হয়েছে। সে এখানকার কোনো কর্মচারী না।

শেফালীর অভিযোগ আপনি তাকে হাত ধরে ওয়ার্ড থেকে টেনে বের করে দিয়েছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,না আমি আনসার ডেকেছি। কুপ্রস্তাবের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী না। এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, আমার কাছে ডা. পীযূষ কান্তি মিত্র মৌখিক একটা অভিযোগ করেছিলেন। আমি তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি আপনার যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন। মৌখিক কোনো কথায় কাজ হবে না। এখন পর্যন্ত ওই নারীও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কারও মুখের কথা আমরা আমলে নিচ্ছি না। অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। তবে যে ঘটনাটি শুনতে পেয়েছি সেটি খুবই দুঃখজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top