ফিলিস্তিনে হামলা: ‘ভুল বাজি ধরে ফেঁসে গেছেন’ নেতানিয়াহু!
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদকঃ ভয়াবহ সংঘাতে উত্তপ্ত ফিলিস্তিন-ইসরাইল। গত সোমবার থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে এখন পর্যন্ত ১২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে ২৯টি। এখন পর্যন্ত অন্তত আহত হয়েছেন ৯ শতাধিক।
এদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছে হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া (হামাস)।
এ পর্যন্ত ইসরাইল অভিমুখে সহস্রাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে তারা।
বলা হচ্ছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের ঘটনা এবার ঘটেছে।
বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, নিজের ‘ভুল বাজিতে ফেঁসে গেছেন’ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি তিনি কল্পনা করেননি নেতানিয়াহু। যেমনটি আমরা দেখেছি, ফিলিস্তিন ও ইহুদিবাদী ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে। নেতানিয়াহু এমন কিছু শুরু করেছিলেন যা তিনি আশা করেননি।
কারণ হামাসের প্রতিরোধে এখন ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দরগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। বিমানবন্দরগুলো সত্যি সত্যি হুমকিতে পড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের আয়রন ডোম এবার হামাসের ছোঁড়া সব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এবার হামাসের রকেট হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো।
মঙ্গলবার তেল আবিবে রকেট হামলা চালালে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইসরাইল।
যে কারণে তেল আবিবের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউরোপীয় এয়ারলাইনসগুলো। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ভার্জিন আটলান্টিক, জার্মানির লুফথানসা, স্পেনের আইবেরিয়া প্রভৃতি।
এছাড়া হামাসের রকেট গিয়ে আঘাত হেনেছে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় শহরে, বসতবাড়িতে, পাইপলাইনে, তেল শোধনাগারে।
এসব বিচারে হামাসের এবারের হামলায় ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেশি ও তাদের বিমানবন্দরগুলো হুমকির সম্মুখীন বলে মনে করছেন মারওয়ান বিশারার।
এদিকে সংঘাত বন্ধে মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশ জোরদার প্রতিবাদ জানিয়েছে। মিশর, জর্ডান এবং লেবানন এগিয়ে এসেছে। তুরস্ক হুমকি দিয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার বার্তা এসেছে। ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মারওয়ান বিশারার দাবি, এমন সমর্থন ফিলিস্তিন আগে পায়নি। যতই দিন গড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত বাড়ছে।
২০১৪ সালের সংঘর্ষের সময়ও এমন চিত্র দেখেননি বলে দাবি করেন তিনি।
ইসরাইলের জন্য বিপদের কারণ হচ্ছে, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত আটজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই শিশু, একজন ভারতীয়, একজন বয়স্ক নারী ও এক ইসরায়েলি সেনাসদস্য রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিব।
হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি, দুটি আয়রন ড্রোম (আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) এবং একটি রাসায়নিক কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এছাড়া নেজেভ মরুভূমির নাহাল ওজ কিবুৎজ রাসায়নিক কারখানায় আত্মঘাতী শিহাব ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
এসব হামলার পর আল-আকসা টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল আরোয়ি বলেছেন, এখনও অনেক দেখার বাকি আছে। মূল ক্ষেপণাস্ত্র আমরা এখনো ব্যবহার করিনি।আমাদের কয়েকজন কমান্ডারের শাহাদাতের কারণে প্রতিরোধ সংগ্রাম দুর্বল হয়ে পড়বে, শত্রুদের এমন ভাবনা মারাত্মক ভুল। বাস্তবে প্রতিরোধ প্রতিদিনই আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে লেবানন সীমান্ত থেকেও ইসরাইল অভিমুখে রকেট ছোঁড়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হামাসের পর হিজবুল্লাহ যোগ দিয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে ইসরাইলি বর্বরতায় নেতানইয়াহুর এবারের পদক্ষেপ কিছুটা হলেও ভারী পড়ছে তার জন্য।
এসব কারণে নেতানিয়াহু বর্তমানে সঙ্কটে রয়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষক বিশারা।
হামাসের এমন শক্ত প্রতিরোধ ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মুসলিম জোটের প্রতিবাদের মুখোমুখি এর আগে হননি নেতানইয়াহু। কিছুটা হলেও কোণঠাসা তিনি এবার। এছাড়া রাজনৈতিকভাবেও একঘরে হয়েছেন নেতানিয়াহু।