২৬ বিচারপতির অপসারণ দাবি আইনজীবীদের
বিশেষ প্রতিবেদকঃ উচ্চ আদালতের ২৬ বিচারপতিকে অপসারণের দাবিতে ক্রমেই সোচ্চার হচ্ছেন আইনজীবীরা। রায় বা আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, অযোগ্যতার অভিযোগ তুলে তাদের অপসারণের দাবি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরেও তালিকা পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীরা তাদের (বিচারক) অপসারণের দাবি তুলছেন। প্রথমে তিনিও এমন দাবি করেছিলেন। তাঁর ধারণা, সরকার বা বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা অবিচারকসুলভ আচরণ করেছেন, অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছেন এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে বিচার বিভাগের ওপর হামলাকারীরাও এখন হাইকোর্টের বিচারক। বিচারক হওয়ার মতো যোগ্যতা না থাকলেও অনেকে নিয়োগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এখনই তাদের সরানোর উপযুক্ত সময়।
আইনজীবীরা জানান, ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মারা হয় এবং এজলাস ভাঙচুর করা হয়। সেদিন নামিয়ে ফেলা হয় জাতীয় পতাকা। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। সে সময় আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই হামলার পুরস্কার হিসেবে দু’জনকে বিচারক নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি কয়েকজনকে সুপ্রিম কোর্টে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বিচারকের বিরুদ্ধে। জেলা জজ থাকাকালে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া ওই বিচারক এখন হাইকোর্টের বিচারপতি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া এক জেলা জজ বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি। তাদের অপসারণের দাবি উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারক অপসারণে আপাতত কোনো আইন নেই। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর না থাকায় বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। অসমর্থতা ও অযোগ্যতার কারণে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। এর আগে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ছিল। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ। এর বিরুদ্ধে সরকারের করা রিভিউ আবেদন এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
সরকার পতনের পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর পর থেকে আইনজীবীরা হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২৬ বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানানোর আগে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার খোকন ৫০ জন বিচারকের অপসারণের দাবি করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘যে তালিকা করা হয়েছে, তাদের বাদ দিলে যাদের বসানো হবে, তারা কী দলকানা নয়? যদি চাপ সৃষ্টি করেই বিচারক অপসারণ করতে হয়, তাহলে আদালতের কাছে বিচার চেয়ে লাভ কী?’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব দুর্নীতিবাজ বিচারকদের বিদায় করা উচিত। যে বিচারপতিরা চেয়ারে বসে নিয়মিত শপথ ভঙ্গ করছেন এবং নির্দেশনামূলক রায় বা আদেশ দিয়েছেন, তাদের দ্রুত অপসারণ করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, মানববন্ধন, সভা, মিছিল করে বিচারপতিদের অপসারণের চর্চা চলতে থাকলে তাদের (বিচারক) আরও বহু বছর স্বাধীনভাবে রায় দেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে এবং কোন রায়টা পক্ষপাতিত্ব মূলক এবং কেন পক্ষপাতিত্বমূলক হয়েছে, এটা প্রমাণ করতে হবে। এখন ২৬ জনের তালিকা দিল। তাদের অপসারণ করলে আবার হয়তো আরও ১০ জনের তালিকা দেবে। আবার মানববন্ধন শুরু করতে পারে। এ ধরনের কার্যক্রম কোনো আইনের শাসনের মধ্যেই পড়ে না।
তার মানে, সরকার পরিবর্তন হলে বিচারপতিদের চাকরি নেই। বিচারপতিদের স্বাধীন রায় দেওয়ার মানে হলো, তাদের কেউ চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারবে না।
আপিল বিভাগের সবাইকে যেভাবে ভাগিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী সরকার যেই আসুক না কেন, তাদের কাছে তো এ অভিযোগ করতে পারবে না। কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে তা দাখিল করতে হবে। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন অধিকতর তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে পাঠাবেন।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, নতুন বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে হলে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতিকে যেভাবে পদত্যাগ করতে হয়েছে, ঠিক সেভাবে দুর্নীতিবাজ ২৬ বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের সময় দলীয়রা বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন; কিন্তু বিচারকের আসনে বসে নিয়মীত ভাবে ওই দলের স্বার্থ হাসিল করার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। আমরা বিচারকের সংখ্যা ও অপসারণের বিষয়টি প্রধান বিচারপতির ওপর ছেড়ে দিয়েছি, তিনিই বিতর্কিত কয়েকজন বিচারককে চায়ের দাওয়াত দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন। তা না হলে তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতা আগস্টের মতো আবারও সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করতে বাধ্য হবে।’
বিচারপতিদের অপসারণে আলটিমেটাম
সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে ৩০ সেপ্টেম্বর বার ভবনের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
বক্তারা বলেন, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ না করলে ওই বিচারপতিদের বিচারকাজে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। এর আগে গত ৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে উচ্চ আদালতের ৫৬ জন বিচারপতির অপসারণ দাবি করেন আইনজীবীরা।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন: আসিফ নজরুল
আরও সংবাদ পড়ুন।
বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে : আইন উপদেষ্টা
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী কমিটি গঠন
আরও সংবাদ পড়ুন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
হাইকোর্টের রায় – কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন দ্রুত পাস করতে
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।