ভোলা সদরে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও

Picsart_23-09-04_13-26-16-997.jpg

ভোলা সদরে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও

উপজেলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় মুসলিম পরিবারের কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রীকে হিন্দু সনাতন ধর্মের ছেলে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করার খবর পাওয়া গেছে। বিয়ের পর ওই কলেজ ছাত্রীর বাসায় সাত মাস সংসার করার পর ইতালি যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীর বাবার কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় প্রতারক স্বামী। স্বামীর খোঁজে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু শ্বশুর বাড়ি গেলে, তাদের পরিবারের লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, সেই মুসলিম কলেজ ছাত্রী ।

ভিক্টিম কলেজ ছাত্রী অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের প্রথম দিকে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড গুপ্ত মুন্সী এলাকার ঝন্টু পাত্র এর ছেলে সৌরভ পাত্র (২৭) নিজের নাম পরিচয় গোপন করে ভোলা সদর উপজেলার মুসলিম পরিবারের কলেজ ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।

কিছুদিন যাওয়ার পর কলেজ ছাত্রী তার প্রেমিকের আসল পরিচয় জানতে পারে সৌরভ হিন্দু সম্প্রদায়ের সনাতন ধর্মের ছেলে। ভিকটিম কলেজ ছাত্রী মুসলিম পরিবারের হওয়ায় হিন্দু প্রেমিক সৌরভের প্রেম প্রত্যাখ্যান করে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

কিন্তু কথায় আছে না, প্রেমের মরা জলে ডুবে না। সুচতুর প্রেমিক সৌরভ পাত্র প্রেমিক কলেজ ছাত্রীর মন ভুলাতে সুকৌশলে মুসলিম প্রেমিকাকে আকৃষ্ট করতে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়ে কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন। ভিকটিম কলেজ ছাত্রী সরল বিশ্বাসে প্রেমিকের ছলা কলায় মুগ্ধ হয়ে চতুর প্রেমিকের আশ্বাসে বিশ্বাস করে  রাজি হয়ে পুনরায় প্রেমে মজেন।

প্রেমের কারণে ধর্মান্তরিত হওয়ার এত বড় আত্মত্যাগের কথায় প্রেমিকার প্রেম যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসে। অভিমানের বরফ গলে শুরু হয় দুজনের প্রেম কাব্যে। সৌরভ পাত্র মুসলিম পরিবারের কলেজ পড়ুয়া প্রেমিকার বিশ্বাস জোগাতে গত ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ভোলার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ১ এফিডেভিট করে হলফনামা দিয়ে সৌরভ পাত্র হিন্দু সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে পূর্বের নাম পরিবর্তন ও ইসলাম ধর্ম  গ্রহণ করে (নও মুসলিম) হিসেবে মোহাম্মদ ইব্রাহিম নাম রাখেন।

প্রেমের পূর্ণতা দিতে পরিবারকে না জানিয়ে প্রেমিক যুগল নিজেদের সিদ্ধান্তে ১২ লক্ষ টাকা কাবিন দেনমোহর ধার্য করে ইসলামী সরিয়াহ মোতাবেক বিবাহে আবদ্ধ হয়। সৌরভ নওমুসলিম হওয়ার পর নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে না পারার কথা জানায় সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর কাছে। ভিকটিম কলেজ ছাত্রী নওমুসলিম ছেলেকে বিয়ের বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে ম্যানেজ করে স্বামীসহ তার পরিবারের কাছে আশ্রয় নেন।

নবদম্পতি প্রায় ৭ মাস কলেজ ছাত্রীর পরিবারে সাথে বসবাস করেন। এরপর (সৌরভ পাত্র) নওমুসলিম ইব্রাহিম কলেজ পড়ুয়া স্ত্রী কে জানায় তার বন্ধু ইতালিত প্রবাসী হিসেবে কর্মরত আছেন। এক মাস পর ছুটিতে দেশে ফিরবেন। ৮ লক্ষ টাকা দিলে ছুটিতে আসার সময় ওই বন্ধু নওমুসলিম ইব্রাহীম এর জন্য একটি ভিসা নিয়ে দেশে ফিরবেন। যে করে হোক স্ত্রী যেন নওমুসলিম স্বামীকে ৮ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে দেন। স্বামীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে কলেজ ছাত্রী তার বাবা-মাকে অনুনয় বিনিয় করে রাজি করিয়ে ৮ লক্ষ টাকা তার স্বামীর হাতে তুলে দেন। রাতে টাকা দেওয়ার পর সকাল বেলা নওমুসলিম ইব্রাহীম বন্ধুর কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বলে তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। টাকা নেওয়ার পর মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আর ফেরত আসেনি নওমুসলিম স্বামী।

এদিকে স্বামীর খোঁজে দিশেহারা হয়ে পড়ে কলেজ পড়ুয়া স্ত্রী। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর ভিকটিম কলেজ ছাত্রী জানতে পারে তার বাবা-মা ও পরিবারের লোকজনের প্ররোচনায় নওমুসলিম ইব্রাহিম কৌশলী স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছে।

ভিকটিম আরো জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সৌরভ পাত্র (নওমুসলিম ইব্রাহিমের) বাবার বাড়ি ভোলা পশ্চিম ইলিশা গুপ্ত মুন্সি এলাকায় ঝন্টু পাত্রের বাসায় গেলে ভিকটিম কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে শাঁখা সিদুর পরে তাদের ধর্ম পালন করতে বললে তাদের ছেলেকে এনে দেওয়ার কথা বলেন।

মেয়ে তাতে রাজি না হওয়ায় কলেজ ছাত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালায় স্বামীর পরিবার। এক পর্যায়ে ওই ভিকটিম জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে ভিক্টিম কলেজ ছাত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে সৌরভ পাত্র (নওমুসলিম মোঃ ইব্রাহিম) এর বাবা ঝন্টু পাত্র কলেজ ছাত্রীকে মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেন।

তার ছেলে সৌরভ পাত্র নওমুসলিম হওয়ার পর তাকে এডভোকেট এর মাধ্যমে স্ট্যাম্পে নোটারি করে তেজ্যপুত্র করেছেন, বলে জানায় ঝন্টু পাত্র।

আরও সংবাদ পড়ুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top