নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, বিএনপির প্রস্তাবে তিন ইস্যু অগ্রাধিকারে
রাজনৈতিক প্রতিবেদকঃ সংবিধান সংশোধন করে ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে অনঢ় থেকে এক দফার আন্দোলনের পথে এগোচ্ছে বিএনপি।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করছে দলটি। ইতোমধ্যে এর একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়ায় কার্যত তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে- সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা।
সবকিছু ঠিকভাবে এগোলে আগস্টের শেষদিকে কিংবা সেপ্টেম্বরে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা জনসমক্ষে তুলে ধরার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, এই সংসদ বিলুপ্ত করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করা- এটাই এক দফার মোদ্দা কথা। দাবি আদায়ে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, এখনও করছি। সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই একটা রূপরেখা দেওয়া হবে।’
বিএনপির নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে দলটির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও নিজেদের ঘরানার কয়েকজন চিন্তকও। রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপরেখায় বিলুপ্ত কাঠামোতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হুবহু ফিরিয়ে আনার কথা সরাসরি থাকছে না। বিলুপ্ত ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার এনে নতুন ধাঁচের ফর্মুলা প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিশেষত, সম্ভাব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অনুযায়ী) পদে সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতির বিধানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি’ কথাটি যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তারা জানান, যেই ফর্মুলাই চূড়ান্ত হোক না কেন, সেখানে মূল কথা থাকবে- সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও ইসি পুনর্গঠন।
রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা বিএনপির একজন ভাইস-চেয়ারম্যান জানান, গতবছরের ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি ‘?রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত’ শিরোনামে যেই ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেছিল, সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার রূপরেখায়ও প্রধান দাবি থাকছে, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন’। বিএনপির এই নেতা জানান, শুধু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনই নয়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা যাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়- সেই লক্ষ্যে এটিকে স্থায়ীভাবে প্রবর্তনের প্রস্তাব দেবে বিএনপি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের পাশাপাশি বিদ্যমান সংবিধানের বিতর্কিত বিষয়গুলো পর্যালোচনারও প্রস্তাব থাকবে বিএনপির রূপরেখায়। এজন্য একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দেবে দলটি। দাবি বাস্তবায়নে দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সংবিধানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনারও প্রস্তাব দেওয়া হবে। এছাড়া পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না- এমন প্রস্তাবও থাকতে পারে বিএনপির রূপরেখায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, শিগগিরই তারা এক দফার আন্দোলন শুরু করবেন। সেই আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষও সম্পৃক্ত হবেন- এমন আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়কের ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।’
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, চলমান পদযাত্রা এবং তরুণ সমাবেশ এবং পরবর্তীতে নারী সমাবেশের পর নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের এক দফার আন্দোলনে যাবে দলটি। রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে মাঠে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। বর্তমান মিত্রদের পাশাপাশি দোদুল্যমান থাকা দলগুলোকেও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবে বিএনপি।
তবে, এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের কর্মসূচিতে এবার নতুনত্ব আনার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গতবারের চেয়ে এবারের আন্দোলনের ধরন একটু ভিন্ন হবে। আমরা হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচিতে সচেতনভাবে যাচ্ছি না। তবে, সরকার যদি কোনোভাবে ওইসব দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে সেই দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।’ এর আগে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচিতে যেতে চায় না, কারণ এরকম কর্মসূচি দিলে সরকারি দল সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপায়। বিএনপি এবার সরকারকে সেই সুযোগ দিতে চায় না, বিএনপি কোনো ফাঁদেও পা দিতে চায় না।’
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি হিসেবে বিএনপি ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ স্লোগানে রাজধানীতে রাজপথে লাগাতার অবস্থান নেওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে বিএনপি।
আরও সংবাদ পড়ুন।
খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’য় ঈদ উদযাপন করবেন; সাক্ষাৎ করবেন নেতা কর্মীদের সাথে
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।