হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী শিউলী আক্তার এর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুয়েত বাংলাদেশ সরকারী মৈত্রী হাসপাতাল এর স্টোর অফিসার ও তার স্ত্রী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
সাগর চৌধুরীঃ আসামী (১) মোঃ হাবিবুর রহমান, স্টোর অফিসার, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া, সংযুক্ত কুয়েত বাংলাদেশ সরকারী মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা; পিতা মোঃ খোরশেদ আলম, গ্রাম: চিত্রী, পো.অ. চরলাপাং, থানা: নবীনগর, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আসামী (২) শিউলী রহমান ওরফে মোসাম্মাৎ শিউলী আক্তার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, নবীনগর উপজেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া; স্বামী মোঃ হাবিবুর রহমান (যিনি ১ নং আসামী) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম চিত্রী, পো.অ চরলাপাং, থানা: নবীনগর, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া একে অপরের সহযোগিতায় যথাক্রমে ২৪,৮৯,৬৬৬/- টাকা ও ৭৯,২৫,০৯৮/- সর্বমোট ১,০৪,১৪,৭৬৪/- টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মোঃ নাজমুস্ সা’দাৎ বাদী হয়ে আজ একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
দুদক, সজেকা, কুমিল্লা’র ই/আর নং ১৭/২০২২ এর অনুসন্ধানে প্রকাশ পায়, আসামী (১) মোঃ
হাবিবুর রহমান ১৯৮৮ সালে স্বাস্থ্য সহকারী পদে স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে স্টোর কিপার পদে এবং ২০১৫ সালে স্টোর অফিসার পদে পদোন্নতি লাভ করে বর্তমানে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকায় কর্মরত আছেন।
অনুসন্ধানকাল মোঃ হাবিবুর রহমান কর্তৃক তার নামে ৫৫,৯১,৬৬৬/- টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩২,৮০,০০০/- টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি তার নিজ নামে সর্বমোট (৫৫,৯১,৬৬৬+৩২,৮০,০০০) = ৮৮,৭১,৬৬৬/- টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এছাড়া তার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত পারিবারিক ব্যয় ১৫,০৬,৫০৮/- টাকা।
অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ (৫৫,৯১,৬৬৬+৩২,৮০,০০০+১৫,০৬,৫০৮) =
১,০৩,৭৮,১৭৪/- টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০১৭-১৮ করবর্ষে আয়কর নথি খোলার সময় পূর্বের বছরগুলোতে চাকুরীর বেতন-ভাতা হতে সঞ্চয় এবং আয়কর নথি খোলার পরের বেতন-ভাতাসহ মোট আয় পাওয়া যায় = ৭৮,৮৮,৫০৮/- টাকা। অর্থাৎ অনুসন্ধানকালে তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে আয়ের উৎস (১,০৩, ৭৮, ১৭৪-৭৮, ৮৮,৫০৮)=২৪, ৮৯, ৬৬৬/- টাকা কম পাওয়া যায়।
অপরদিকে আসামী(২)শিউলী রহমান ওরফে মোসাম্মাৎ শিউলী আক্তার এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য ও আয়-ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিউলী রহমান ২০১৯ সাল থেকে নবীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ২০১৪-১৫ করবর্ষ হতে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত খাতভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী দাখিল করে আসছেন। তিনি তার দুই পুত্রের নিকট থেকে হেবা ঘোষনাপত্রের মাধমে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পদ ব্যতীত তার নামে ১,১৫,৪৫,০০০/- টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪৯, ৩২,৫১৪/- টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি তার নিজ নামে সর্বমোট (১,১৫,৪৫,০০০+ ৪৯,৩২,৫১৪) = ১,৬৪,৭৭,৫১৪/- টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ২৬,৫৮, ৯৩৩/- টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহতার মোট সম্পদের পরিমাণ ১,১৫,৪৫,০০০+ ৪৯,৩২,৫১৪ +২৬,৫৮,৯৩৩ = ১,৯১,৩৬,৪৪৭/- টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০১৪-১৫ করবর্ষে আয়কর নথি খোলার পূর্বের বছরগুলোতে বিভিন্ন আয় এবং আয়কর নথি খোলার পরের ব্যবসা বাড়ী ভাড়া ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত ভাতাসহ তার মোট=১,১২,১১,৩৪৯/- টাকার আয়ের উৎস যায়। অর্থাৎ তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে
(১,৯১,৩৬,৪৪৭- ১,১২,১১,৩৪৯) = ৭৯,২৫,০৯৮/- টাকার আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়। অর্থাৎ অনুসন্ধানকালে মোঃ হাবিবুর রহমান এবং তার স্ত্রী শিউলী রহমানের নামে সর্বমোট ( ২৪,৮৯,৬৬৬ + ৭৯,২৫,০৯৮) = ১,০৪,১৪,৭৬৪/- টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
আসামী মোঃ হাবিবুর রহমান-এর অর্থে অর্জিত সম্পদসমূহ হলো: ১. ঢাকা জেলার আশুলিয়া ইউনিয়নের ধলপুর মৌজায় দলিল নং ৭৫৩৮, তারিখ: ০৩/০৩/২০০৮ মূলে ১২.০০ শতাংশ ভিটি ভূমির (সিএস খতিয়ান ৫৬৪, আরএস ৪২ খতিয়ানের কাতে ৫১৬ নং জোত) মধ্যে তার দুই পুত্র (জমি রেজিস্ট্রির সময় নাবালক) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (টুটুল) ও মোঃ মশিউর রহমান (মিশু)-এর নামে ৭ শতাংশ জমি ক্রয়, যার মূল্য ২,৯১,৬৬৬/- টাকা;
২. ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এলাকায় ভাদুঘর (শিট নং ৩) মৌজায় দলিল নং ১০০৩১, তারিখ: ০৮/০৭/২০১০ মূলে হাবিবুর রহমানের নিজ নামে ১৪ শতাংশ জমি ক্রয়, যার মূল্য ৮,০০,০০০/- টাকা;
৩. হাবিবুর রহমানের নিজ নামে ফ্লাট ক্রয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান বাবদ ৪৫,০০,০০০/- টাকা (যা তার TIN 177029515566) ২০২১-২২ অর্থবছরের আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে);
৪. ঢাকা জেলার খিলক্ষেত থানার বরুয়া মৌজায় দলিল নং ২৫০২, তারিখ: ০৯/০৩/২০১৭ মূলে আসামী হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আসামী শিউলী রহমান ও অপর একজনের (মোঃ কাওসার ভূঁইয়া)-এর নামে ৮.২৫ শতাংশ নাল জমি ক্রয়; যার মহানগর জরিপ ৬৩ (১.০৩
শতাংশ) এবং ৫৯ (৭.২২ শতাংশ) ২টি দাগের উক্ত জমিতে তার অর্ধেক অংশ ৪.১২৫ শতাংশের দলিল মূল্য ৮,৪৫,০০০/- টাকা;
৫. শিউলী রহমান ওরফে মোসাম্মাৎ শিউলী আক্তারের নামে তার পুত্র মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও মশিউর রহমানের নিকট থেকে হেবা দলিল নং ৯৭৯১, তারিখ: ২৬/০৬/২০১৪ খ্রি. মূলে প্রাপ্ত ঢাকা জেলার আশুলিয়া ইউনিয়নের ধলপুর মৌজাস্থিত ৭ শতাংশ জমিতে ৬ তলা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং যার নির্মাণ ব্যয় ১,০৪,০০,০০০/- টাকা;
৬. ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৭০ নং পুনিয়াউট মৌজায় শিউলী রহমান ওরফে মোসাম্মাৎ শিউলী আক্তারের নামে ২.৫ শতাংশ নাল জমি [খতিয়ান নং সাবেক ৫৪, হালে ১৩ (ডিপি ৮৩) দাগ নং সাবেক ৪০ হালে ৫৯] দলিল নং ৬০৩২, তারিখ: ১৩/০৬/২০০৫ মূলে ক্রয়, যার দলিল মূল্য ১,০০,০০০/- টাকা এবং
৭. ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৭০ নং পুনিয়াউট মৌজায় শিউলী রহমান ওরফে মোসাম্মাৎ শিউলী আক্তারের নামে ৬ শতাংশ নাল জমি [খতিয়ান নং সাবেক ৫৪, হালে ১৩ (ডিপি ৮৩) দাগ নং সাবেক ৪০, হালে ৫৯] দলিল নং ৪৯৮০, তারিখ: ২১/০৯/২০০৪ মূলে ক্রয়, যার দলিল মূল্য ২,০০,০০০/- টাকা।
উল্লেখিত ১,০৪,১৪, (এক কোটি চার লক্ষ চৌদ্দ হাজার সাতশত চৌষট্টি) টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত পদ আসামী মোঃ হাবিবুর রহমান তার নিজ নামে এবং তার স্ত্রী আসামী শিউলী রহমানের নামে অবৈধ পন্থায় অর্জন করত: ভোগদখলে রেখে একে অপরের সহযোগিতায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তদন্তকালে জ্ঞাত আয়
বহির্ভূত আরও সম্পদ পাওয়া গেলে তা মামলায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
এমতাবস্থায়, আসামী (১) মোঃ হাবিবুর রহমান, স্টোর অফিসার, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া, সংযুক্ত : কুয়েত বাংলাদেশ সরকারী মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা; পিতা : মোঃ খোরশেদ আলম, গ্রাম: চিত্রী, পো.অ. চরলাপাং, থানা: নবীনগর,
জেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আসামী (২) শিউলী রহমান ওরফে মোসাম্মাৎ শিউলী আক্তার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, নবীনগর উপজেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া; স্বামী : মোঃ হাবিবুর রহমান (যিনি ১ নং আসামী), স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চিত্রী, পো.অ. চরলাপাং, থানা: নবীনগর, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া একে অপরের সহযোগিতায় ১,০৪,১৪,৭৬৪/- টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখেছেন বিধায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরও সংবাদ পড়ুন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন এর প্রধান প্রকৌশলী’র বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে – দুককের অভিযান
আরও সংবাদ পড়ুন।
ফরিদপুরে উপ-খাদ্য কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন দুদকের হাতে গ্রেফতার
আরও সংবাদ পড়ুন।
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লি:-এর এমডি তৌহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে – মামলা করেছে দুদক