বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন – ‘বিশ্বাসের ঋণে’ খেলাপি ৩৫৭৭ কোটি

bangladesh-bank.jpg

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন – ‘বিশ্বাসের ঋণে’ খেলাপি ৩৫৭৭ কোটি

এলএটিআর ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৩৬০ দিন করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিসিআইসি’র চিঠি

 
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিশ্বাস করে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক । এখন আর ফেরত দিতে পারছে না গ্রাহক। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বিসিআইসিকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি টাকা ‘বিশ্বাসের ঋণ’ দিয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে। ব্যাংকিং পরিভাষায় বিশ্বাসের ঋণকে এলএটিআর (লোন অ্যাগেইনিস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট) বলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া সার আমদানির এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। কারণ প্রতিষ্ঠানটির বিপুল অঙ্কের ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। তবে সে অনুরোধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিআইসির কাছে সোনালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ আরও দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাওনা ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সারের মূল্য পরিশোধের জন্য বিভিন্ন সময় এই ঋণ দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। ৯ শতাংশ সুদে নেওয়া এসব ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এ মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়াতে পারে। এরই মধ্যে বিসিআইসির নেওয়া ঋণের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

বিসিআইসি জানিয়েছে, নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউরিয়া সার আমদানি করতে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনুকূলে কাউন্টার গ্যারান্টি ইস্যু করে সরকার। এই গ্যারান্টির বিপরীতে ব্যাংকগুলো ছয় মাস মেয়াদে এলএটিআর ঋণ (লোন অ্যাগেইনিস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট) সৃষ্টির মাধ্যমে সারের মূল্য পরিশোধ করে। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি হিসাবে বিবেচনায় করা হয়। ঋণের মেয়াদ পার হলেই নতুন সুবিধা না দেওয়ার কথা নীতিমালায় বলা আছে। সে অনুযায়ী বিসিআইসি’র সার আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কারণ সংস্থাটি খেলাপি হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিআইসি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ইউরিয়া সারের এলসির মূল্য পরিশোধের মেয়াদ ছয় মাস নির্ধারিত আছে। বিভিন্ন কারণে এই সময়ের মধ্যে দায় পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। তাই এর মেয়াদ ১ বছর করার অনুরোধ করেছি। তা না হলে এলসি খোলা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বিসিআইসির চিঠি পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা যায়, এলএটিআর ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে ২৩ জানুয়ারি বিসিআইসি থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ৩১ জানুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয় ওই চিঠি। এর একটি অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগেও পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারি কাউন্টার গ্যারান্টির বিপরীতে সরকারি চার ব্যাংক এলএটিআর দায় সৃষ্টির মাধ্যমে আমদানি করা ইউরিয়া সারের মূল্য পরিশোধ করে থাকে। সার বিক্রির টাকা ও সরকার থেকে পাওয়া ভর্তুকির অর্থ দিয়ে এলএটিআর পরিশোধ করা হয়। প্রতিটি এলএটিআরের মেয়াদ ৬ মাস। এ মেয়াদের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। তখন ঋণ খেলাপি গ্রাহকের এলসি খুলতে পারে না ব্যাংক।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিসিআইসির আমদানি করা ইউরিয়া সারের বিপরীতে সরকারি ব্যাংকগুলোর ১২ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বেশি এলএটিআর দায় রয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকলে তা খেলাপি ঋণ হিসাবে বিবেচিত হয়।

ফলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে নতুন করে এলসি স্থাপনের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় বিসিআইসির ইউরিয়া সার আমদানি অব্যাহত রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা শিথিল করার অনুরোধ করা হয়। অর্থাৎ ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন এবং ঋণ পুনঃতফসিলে ৬০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন মেয়াদ বৃদ্ধি করা।

আরও সংবাদ পড়ুন।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৬ সালে হবে দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার

আরও সংবাদ পড়ুন।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৬ সালে হবে দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিশ্ব অর্থনীতির গতি ফিরতে ৫ বছর সময় লাগবে – বিশ্বব্যাংক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top