সংসদে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২৩ পাস
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নে সরকার কাজ করছে। কিছু দিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত বিল সংসদে আনতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সোমবার সংসদে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২৩’ পাশের প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপিরা এ সময় বিচার বিভাগের সত্যিকারের স্বাধীনতা দেখতে চান বলেও মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী বিলটি পাশের প্রস্তাব করার পর জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, আমরা বিচার বিভাগের সত্যিকারের স্বাধীনতা চাই। বিচারকদের আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা দিলেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু, মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে হবে। জাপার আরেক এমপি পীর ফজলুর রহমান মিস্বাহ বলেন, বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে, আমরা এমন বিচার চাই না। মামলাজট ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মানুষ সময়মতো বিচার পায় না।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সরকারের ব্যর্থতার কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। যারা দুর্নীতি করে, তাদের কথা আলাদা। এই সময়ে বিলটি পাশ না করে, এর ওপর আরো জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। তাদের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মামলাজট আগের চেয়ে অনেকাংশে কমেছে।
বিচারক নিয়োগে আইনের বিষয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এখন উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্যতার কথা বলা থাকলেও যোগ্যতার মানদণ্ড বলা নেই। এক্ষেত্রে বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন করা হলে নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন হয়েছে। একইভাবে বিচারক নিয়োগেও আইন করা দরকার।
জাপার পীর ফজলুর বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আগে আইন ছিল না। গত বছর এই আইন হয়েছে, ঐ আইনের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। একইভাবে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগেও আইন করার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনো হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হয়। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। জাপার ফখরুল ইমামও একই দাবি জানিয়ে বলেন, বিচারক নিয়োগে আমরা এখনো আইন করতে পারিনি।
বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও দফাওয়ারি প্রস্তাবনা নিষ্পত্তি শেষে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২৩’ কিছু সংশোধনীসহ পাশ হয়েছে। ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন প্রণয়েনের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২৩’ পাশ করা হয়েছে।
পাশকৃত বিলটিতে বলা হয়েছে, ‘অবসরের পর প্রধান বিচারপতি তার জীবদ্দশায় গৃহ সহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম বাসভবন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য মাসে ৭০ হাজার টাকা করে বিশেষ ভাতা পাবেন। একজন বিচারককে তার মোট কর্মকালীন ছুটির শর্ত অনুযায়ী অর্ধেক গড় বেতনে মোট ৩৬ মাসের অধিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারকের প্রকৃত কর্মকালের এক-চব্বিশাংশ ভাগ মেয়াদ পর্যন্ত তাকে পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি মঞ্জুর করা যাবে। পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি এককালীন পাঁচ মাস এবং অন্য কোনো ছুটি এককালীন ১৬ মাসের অধিক মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে তার নির্ধারিত মাসিক বেতনের সমান হারে ছুটিকালীন বেতন পাবেন। এছাড়া কোনো বিচারক অনভিপ্রেত কোনো আঘাতের দ্বারা বা কারণে অথবা স্বীয় দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়ে কর্মে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি পাবেন। অবসরে যাওয়া বিচারকরা উৎসব ও বাংলা নববর্ষ ভাতাও পাবেন।’