রাজবাড়ী জেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম সহীদ নূর আকবর ক্ষমতার দাপট! কে রুখবে কে!
অপরাধ প্রতিবেদকঃ চাকরি করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। কিন্তু আইন প্রয়োগ করেন জেলা প্রশাসনের। এই আইনের ভয় দেখিয়ে অধীনস্থদের রাখেন তটস্থ। তছরুপ করছেন সরকারি তহবিল। জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয় এবং সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য যখন সরকার কঠোর ঠিক সেই সময়ে জ্বালানির টাকা নয়ছয় করছেন।
রাজবাড়ী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, দেড় বছর ধরে হুকুম দখল আইনের অপব্যবহার করে আসছেন রাজবাড়ী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর। অস্থাবর সম্পত্তি হুকুম দখল আইন, ১৯৮৮ অনুসারে, কোনো অস্থাবর সম্পত্তি সরকারি কাজে জনস্বার্থে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য আবশ্যক হলে জেলা প্রশাসক তা লিখিত আদেশ দ্বারা হুকুম দখল করতে পারেন। এই কর্মকাণ্ড চলাকালে সম্পত্তির মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। এই কাজে কেউ বাধা দিলে জেলাপ্রশাসক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। ডেপুটি কমিশনার এবং তার অধীনস্থ কোনো কর্মকর্তা হুকুমদখল করতে পারেন।
কিন্তু জেলা প্রশাসকের অগোচরে দিনের পর দিন নিজ বিভাগের গাড়ি রিক্যুইজিশন করে যাচ্ছেন রাজবাড়ী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম সহীদ নূর আকবর। নিজের দপ্তরের গাড়ি নষ্ট থাকায় নানা কাজের কথা বলে উপজেলা থেকে গাড়ি রিক্যুইজিশন করেন তিনি। কিন্তু নষ্ট গাড়ি বাবদ তেলের টাকাও উত্তোলন করেন। আবার রিক্যুইজিশন করা গাড়ির তেল বাবদ কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয় না তাকে। গাড়ি না পেলে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের আইনে বর্ণিত শাস্তির ভয় দেখান। বদলির হুমকি-ধমকি দেন। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে তথ্য-প্রমাণসহ। তথ্য প্রমাণে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে রাজবাড়ী সদর বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলা থেকে গাড়ি রিক্যুইজিশন করেন। ওই দুই মাসে তিনি নিজের গাড়ির তেল বাবদ এক লাখ বিশ হাজার টাকার অধিক খরচ করেন। তিনি এখতিয়ার বহির্ভূত গাড়ি রিক্যুইজিশন করে তেল দেয়ার কথা বললেও তিনি উপজেলার গাড়ির জ্বালানি ব্যয় পরিশোধ করেন না। এরকম প্রায় দেড় বছর ধরে হুকুমদখল আইনের ভয় দেখিয়ে উপজেলা কর্মকর্তাদের গাড়ি রিক্যুইজিশন করে আসছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজবাড়ীর উপ-পরিচালক মনে হয় তিনি নিজেই এক পেট্রোল পাম্প। সহীদ নূর আকবর তার দপ্তরের গাড়ি গত দেড় বছর ইচ্ছাকৃতভাবে বিকল ও অচল করে রেখেছেন। রাজস্ব জ্বালানি তেলের ব্যবহার দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। গাড়ির ড্রাইভারকে ওভার টাইমের বিলও দিয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রকল্প থেকে জ্বালানি ও মেরামতের বরাদ্দ এনে গাড়ি মেরামতের টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
এর বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিনিয়ত অস্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল আইন-১৯৮৮ মোতাবেক এখতিয়ার বহির্ভূত গাড়ি রিক্যুইজিশন দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিজ দপ্তরের জ্বালানি তেল ভক্ষণ করছেন এবং মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকাণ্ডকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি নীরবে সুকৌশলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই বিধি বহির্ভূত কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও রাজবাড়ী শহরের আনাচে-কানাচে সমালোচিত হয় যে গাড়ি মেরামতের কথা বলে বিভিন্ন কোম্পানির/স্টেকহোল্ডারগণের নিকট থেকে টাকা আদায় করেন এবং কৃষির কোনো প্রযুক্তি নিয়ে তার নিকট যাওয়া মানে গাড়ি মেরামতের নামে টাকা চাওয়া। এ বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালককে হুকুমদখল আইন ব্যবহারের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
গাড়ির তেল আত্মসাৎ ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জোরপূর্বক উৎকোচ আদায়, নিম্নমানের বীজ বিতরণ, সারে ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সংকট সৃষ্টিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় উপকরণ বিতরণে উপজেলা কৃষি অফিসারদের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে তিনি নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। যার ফলশ্রুতিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাঠে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের তা সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়। সহীদ নূর আকবর রাজবাড়ী খামারবাড়ীতে তার ঘনিষ্ঠদের সহায়তায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মৌসুম না থাকার পরও উপজেলার চাহিদা না নিয়ে সার সংকটের কথা বলে দুইবার রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত বরাদ্দ মঞ্জুর করান। তিনি বিসিআইসি ও বিএডিসি সার ডিলারদের কয়েক দফায় অতিরিক্ত উপ-বরাদ্দ এনে দিয়ে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, উপ-পরিচালক বিভিন্ন সময় কীটনাশক, খুচরা সার বিক্রেতা ও জৈব সার কোম্পানির কাছে নিজ নম্বরে টেলিফোন করে টাকা দাবি করেন। রাজবাড়ী যোগদানের পর থেকে তিনি খামারবাড়ীতে থাকা ব্যাচমেটদের সহায়তায় তাদের কিছু সুবিধা দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড তৈরি, প্রশিক্ষণ রুম সুসজ্জিতকরণ, আসবাবপত্র মেরামত বাবদ মোটা অঙ্কের বরাদ্দ নিয়ে আসেন এবং ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে তা সমন্বয় করেন।
এ ছাড়াও অধিকার ভাতা, কম্পিউটার সামগ্রী, মুদ্রণ ও বাঁধাই, অন্য মনিহারি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আবাসিক ভবন মেরামত ও সংরক্ষণ, অফিস সরঞ্জামাদি ইত্যাদি কোডে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে একইরকম বরাদ্দ এনে স্থায়ী বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। পরবর্তীতে খতিয়ে দেখবেন।