সারাদেশে শক্তিশালি সিন্ডিকেট! কারা দুর্নীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না?

Picsart_22-11-26_09-40-53-862.jpg

সারাদেশে শক্তিশালি সিন্ডিকেট! কারা দুর্নীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না?

অপরাধ প্রতিবেদকঃ সারাদেশের দুর্নীতির শীর্ষে থাকা কারাগারগুলোতে বহুমাত্রিক দুর্নীতির লাগাম টানা হচ্ছে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দিনেদুপুরে দুই জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনায় আবারও কারা দুর্নীতির বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এমন অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার রাতে জরুরি নোটিসে পাঁচ কারা কর্মকর্তার পদে রদবদল করা হয়। আরও ১২ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে এক রাতে ৫ জনকে বদলি করায় দেশের বিভিন্ন কারাগারের দুর্নীতিবাজ কারা কর্মকর্তারা ও কর্মচারীদের মধে বদলি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার বেশ ক’জন ফোন করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে চায় পরবর্তী বদলি তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা।

এদিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরও তৎপর হয়েছে দুদক।

এরই মধ্যে ৬৪ জেলার কারাগারের ৪৭ জন দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে অন্তত ২৯ জনকে। সর্বশেষ সম্প্রতি হেড অফিসের দু’জন কারা কর্মকর্তাকে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য কাগাারের জন্য মসুর ডাল ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগে তলব করা হয়েছে দুদক কার্যালয়ে। বাকিগুলোর তলব প্রক্রিয়াধীন।

প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হবে। দুদকের এহেন উদ্যোগে কার্যত তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। কারাগারগুলোতে দেখা দিয়েছে দুদক ভীতি। অনেকে নেমেছেন রেহাই পাওয়ার জন্য তদ্বীর বাণিজ্যে। তারা অতীতের মতো সিন্ডিকেট তৈরি করে এই অনুসন্ধান বন্ধ করার জন্য নানাভাবে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, এবার যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্বে দীর্ঘদিন ধরেই ছিল দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। তাদের মতো আরও বেশ ক’জন রয়েছেন দুদকের নজদারিতে।

হবিগঞ্জের জেল সুপার জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জেরে মাহবুব আলম, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল, জাহানারা, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, সিলেটে জেল সুপার মনজুর হোসেন, হবিগঞ্জের নুরশাদ হোসেন, রংপুরের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী, দিনাজপুরের মোকাম্মেল হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে দায়িত্বরত ৪৭ কারা কর্মকর্তার নাম রয়েছে দুদকের অনুসন্ধানের ফাইলে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কারা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোনও ব্যক্তি বিশেষের ওপর টার্গেট করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। যার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন ও বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হবে। দুর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে, তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদক সূত্র জানায়- বর্তমানে কারাগারের তিন জন ডিআইজি সহ কয়েকজন জেল সুপার ও জেলারের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা নানাভাবে তা বানচাল করে দেয়। এই সিন্ডিকেটের একজন কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত- যিনি দেশের কারা ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর। ওই চক্রটিই দুনীর্তির বিরুদ্বে আনীত অভিযোগ সব নস্যাৎ করে দেয়। কারারক্ষী নিয়োগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানেও ব্যাপক অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এক জেলার প্রার্থী হয়েও অন্য জেলার কোটায় নিয়োগের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দুদক ও কারা সূত্র জানিয়েছে, প্রভাবশালী এসব কারা দুর্নীতিবাজের শাস্তির আওতায় আনার জন্য যখনই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়- তখনই তারা সক্রিয় হয়ে ওঠেন তদ্বিরে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা এতই প্রভাবশালী ও সম্পদশালী- যে যখন যেখানে যেটা লাগে সেখানে সেটাই ব্যবহার করা হয়।

তাতে পেরেও উঠছে না তারা। শাস্তির খড়্গ থেকে এবার তাদের রেহাই নেই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কারাগারগুলোর পাশাপাশি অন্তত ৩২টি জেলার কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্বে চালানো হয়েছে অনুসন্ধনান। অধিকাংশের বিরুদ্বে আনীত ও পাওয়া অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। যা এখন মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কারাগার সূত্র জানিয়েছে- দেশের সব কারাগারেরই দুর্নীতির চিত্র একই। কারাগারে সিট বাণিজ্য, বন্দি বাণিজ্য, খাবারে অনিয়ম, মাদক কারবার, টাকার বিনিময়ে বন্দিদের বিশেষ সুবিধা, মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বিশেষ ব্যবস্থায় নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতেই ৪৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত মোটা দাগের অভিযোগগুলোকে আমলে নিয়ে গোপন অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরই নোটিস দিয়ে দুদক অফিসে তলব করা হচ্ছে। এভাবে ৪৭ জনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, যাদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে কিংবা জেরার মুখে রাখা হয়েছে তাদের অবস্থা দেখে অন্যরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ আবার কারাগার ছেড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

কারাগার ও দুদক সূত্রগুলো জানিয়েছে, অতীতে যখনই কারা দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তখনই তাতে বাধা এসেছে। প্রভাব খাটিয়ে সেগুলোর আইনি প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।

যদিও দুদক নিশ্চিত- দীর্ঘ দিন ধরেই কারা অধিদপ্তর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। কারা প্রশাসনের কেউ দুর্নীতি দমনে শক্ত ব্যবস্থা নিতে চাইলে অধিদপ্তরের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নানাভাবে সেই কর্মকর্তাকে হেনস্তা করে। এ কারণে কারাগারের দুর্নীতি নিয়ে নানা আলোচনা হলেও তা দমনে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এ অবস্থায় ঘটে যায়- বহুল আলোচিত ঘটনা। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস থেকে কারা কর্মকর্তা সোহেল রানা বিশ্বাসকে নগদ ৪৪ লাখ টাকা ও কয়েক কোটি টাকার চেকসহ রেলওয়ে পুলিশ আটকের পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সে সময় তদন্তকারীদের সোহেল রানা জানিয়েছিলেন, কারাগারাগুলোতে বহুমাত্রিক দুর্নীতি হচ্ছে। কেউ দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন বাধ্য হয়েই কেউ বা শুধুই লোভের বশে।

সোহেল রানা আরও জানিয়েছেন, মূলত অবৈধভাবে উপার্জিত এসব অর্থ তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তাকে দেওয়ার জন্য নিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে জেলার সোহেল রানার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একই সঙ্গে কারাগারের যেসব কর্মকর্তার বিরদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এবারো অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে তা কিছু দিন স্তিমিত থাকার পর ফের শুরু করা হয় অনুসন্ধান।

তখন সোহেল রানার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিইে কারা অধিফদপ্তরের সাবেক ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই অভিযান চালিয়ে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিচার শেষে গত জানুয়ারিতে পার্থ গোপাল বণিককে দুটি ধারায় আট বছরের কারাদন্ডও দিয়েছে আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক ও বর্তমানে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ইকবাল কবীর চৌধুরী, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক জেল সুপার ও বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে দায়িত্বরত আব্দুল জলিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের জেলার হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এ ছাড়া খুলনা বিভাগীয় কারা কর্মকর্তা সগীর মিয়া, কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও মেহেরপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোখলেসুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কারা অধিদপ্তরের এআইজি প্রিজন মাইনুদ্দিন ভুঁইয়া ও মৌলভীবাজার কারাগারের জেলার আবু মুসাকে।

একইভাবে একই অভিযোগে চাঁদপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার ও জেলারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। কারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ ও অবৈধ ক্যান্টিন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

একই অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেল সুপার আবু জাহেদকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়।

এর আগে একই অভিযোগ অনুসন্ধানে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন কারাগারের ১২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। ২০২০ সালের শুরুর দিকে অভিযোগটি অনুসন্ধান করে দুই সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। টিমের অপর সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ। আর তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ একই প্রকৃতির- যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ গ্রহণ করে কারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ, অর্থের বিনিময়ে বন্দিদের অবৈধ সুবিধা, অর্থ লেনদেন এবং অবৈধ ক্যান্টিন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।

এ সম্পর্কে ময়মনসিংহ কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, সবই চলছে বিশেষ একটি সিন্ডিকেটের ইশারায়। বর্তমানে দুনীর্তি দমন কমিশন যেভাবে অনুসন্ধান চালাচ্ছে- সেটা অব্যাহত থাকলে কারা অধিদপ্তরের বেশিরভাগ কর্মকর্তার অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া যাবে। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে অসাধু কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস যেন দুদক না দেয় সে জন্য তারা নানাভাবে তদ্বির করছেন। তারা কতটা শক্তিশালী তার বড় প্রমাণ, গাজীপুরের জেল সুপার বজলুর রশীদ। তিনি প্রকাশ্যে অফিসে বসেই দুর্নীতি করেন কেনাকাটায়, কারাবন্দি সাক্ষাতে, ফোনালাপের সুযোগ দিয়ে, বন্দিকে ভালো-মন্দ খাবার বাণিজ্যে। তার বিরুদ্বে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রবিবার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সবার টনক নড়ে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুদক নিশ্চিত হয়- কারাগারের ভেতরে টাকা দিলে সবকিছু পাওয়ার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। বিশেষ করে কাশিমপুর কারাগারে যা ঘটছে তা নজিরবিহীন। যে দুই জঙ্গি পালিয়েছে- তারা এই কারাগারে বসে টেলিফোনে কথা বলেই সব পরিকল্পনা করে। কারাগারের ভেতরে তারা থাকত রাজকীয় হালে। কারা নিরাপত্তা কর্মী ও জেলারদের ম্যানেজ করেই জঙ্গিরা নিয়মিত কথা বলতো। জানা গেছে, এর আগেও জঙ্গিসহ শীর্ষ অপরাধী ও প্রভাবশালীদৈর নানা ধরনের সুযোগ করে দিতেন সাবেক জেল সুপার রত্না রায়। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে আটক জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমদকে কারা অভ্যন্তরেই তার বান্ধবীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে দিতেন। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ার পর তাকে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এ ছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বিপ্লব নামে একজন ডাকাত সদস্য জানান- তিনি কারাগারের ভেতরে উন্নতমানের চালের ভাতের ব্যবস্থা করতেন। এজন্য প্রতি সপ্তাহে দায়িত্বরত কারারক্ষী বা কারাকর্মকর্তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হতো। এর আগে আলামিন নামে এক জঙ্গি সদস্য গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমকের কাছে ফাঁস করেন- কারা দুনীর্তির বিচিত্র কাহিনী। তিনি কারাগারের ভেতরে রক্ষী বা কর্মতকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন।

ওই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই তিনি বাইরে থাকা সঙ্গীদের দিয়ে নিয়মিত ডাকাতি করাতেন। আরও আশ্চর্যের বিষয় একই ধরনের অভিযোগ ও কেলেঙ্কারির দরুন কাশিমপুর থেকে বদলি করা হয়েছিল সুব্রত কুমার বালাকে। গত পরশু তাকে আবারও একই কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে আসায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন বিতর্কিত দুর্নীতিবাজকে কেন আবার ফিরিয়ে আনা হলে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

দুদক সূত্রের মতে- অতীতে বার বার তারা ধরাছোয়ার বাইরে থাকা কিংবা পার পেয়ে গেলেও এখন যুগ ও সময় পাল্টেছে। দুদক আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও স্বাধীনতা নিয়ে নির্বির্ঘে নির্ভয়ে কাজ করতে পারছে। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ভৈরব রেলস্টেশনে রেলপুলিশের তল্লাশিতে চেক আর নগদ মেলে প্রায় ৪ কোটি টাকা এবং ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা।

২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে যোগদানের পর সোহেল রানার হাত দিয়ে কোটি কোটি টাকা মাসোহারা পেতেন ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বণিক ও সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্মকসন্ত কুমার বণিক। দুদক তাদের শেষ পর্যন্ত ছাই দিয়ে না ধরলে তারাও পিছলে যেতেন। দুদক যে এসব কাজে এখন নির্ভীক- তার বড় প্রমাণ সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনসহ অন্যান্য প্রভাবশালীকে আইনের আওতায় আনা।

সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান পরিচালনার কাজটা অবশ্যই একটা কঠিন এসাইনমেন্ট হিসেবে বিবেচিত।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের বিরুদ্ধে অধীনস্ত ও আশীর্বাদপুষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে নিয়োগ, টেন্ডার ও মাদক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ব্যাপকভাবে আলোচিত।

২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও চট্টগ্রাম কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে সাবেক এই কারা প্রধানকে ২০১৯ সালের ২৫ অগাস্ট প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

আরও সংবাদ পড়ুন।

বরখাস্ত কারা ডিআইজি বজলুর রশীদের ৫ বছরের কারাদণ্ড

আরও সংবাদ পড়ুন।

আরও সংবাদ পড়ুন।

নরসিংদী জেলা কারাগারে ঘুষের অভিযোগ – দুদকের অভিযান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top